জনগণ মনে করলে সংবিধান সংশোধন হতে পারে : ড. কামাল
১৯৭২ সালের সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন বলেছেন, জনগণ মনে করলে সংবিধান সংশোধনী আনা যেতে পারে। সংবিধানে ষোলোটি সংশোধনী হয়েছে। যখন দেখেছে সংবিধানে কোনো ঘাটতি আছে, যে বিধান আছে তা মানুষের স্বার্থে কাজে লাগছে না, সেটা বদলানো হয়েছে। এ কারণে হয়েছে যে, এটা মানুষের করা আইন, এটাতে কোনো ভুল হলে বা সময়ের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে শোধরাতে পারে। এটা করতে হবে মানুষদের নিয়ে। কোনো ব্যক্তি কিংবা রাষ্ট্রপতিও যদি মনে করে এটা কলমের খোঁচা দিয়ে বদলাতে পারবেন না।
তিনি বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ মত যদি গড়ে ওঠে তখন সংবিধানে হাত দেওয়া যেতে পারে। এটাকেই সংবিধানের পবিত্রতা বলি। এটাকে মৌলিক আইন কেন বলি? কারণ সব আইনের ঊর্ধ্বে এর একটা মর্যাদা আছে। যেন-তেনভাবে এটাতে হাত দেওয়া যায় না। এমনিক, সংসদও মৌলিক বিষয়ে হাত দিতে পারে না।
বিজ্ঞাপন
সোমবার (৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে সংবিধান দিবস উপলক্ষ্যে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতি এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
সমিতির সভাপতি সিনিয়র আইনজীবী সুব্রত চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক প্রমুখ।
ড. কামাল হোসেনের বলেন, সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর পরে আমরা দেখতে পেরেছি, আমাদের আইন ও প্রাতিষ্ঠানিক সুরক্ষাগুলোকে আরও দৃঢ় করতে হবে। আমাদের স্বাধীন বিচারব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়া বজায় রাখতে হবে। সব স্তরে স্বচ্ছতা আনতে হবে। আমাদের সংবিধানকে অত্যাচারের বিরুদ্ধে একটি সুরক্ষাকবচ হিসেবে দাঁড় করাতে হবে। যার সুরক্ষাবলয়ে কোনো নাগরিক অবিচার এবং অন্যায়ের আশঙ্কায় জীবন যাপন করবে না।
আরও পড়ুন
তিনি বলেন, আমাদের নতুন প্রজন্মকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে হবে। দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষাকে প্রাধান্য দিতে হবে। একটি গণতান্ত্রিক, ন্যায়সংগত এবং সংবিধানকে অত্যাচারের বিরুদ্ধে সুরক্ষাকবচ হিসেবে দাঁড় করাতে হবে। আজকের প্রেক্ষাপটে, আমাদের সংবিধানকে পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন। এই সংবিধান যাতে কোনোভাবেই অত্যাচারের সুযোগ না দেয় তা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে।
ড. কামাল হোসেন আরও বলেন, মানুষের অধিকার রক্ষার কাজ শুরু করেছিলাম। এই দুঃসহ অভিজ্ঞতা আমাদের সামনে স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, বাংলাদেশের মানুষের সংবিধানিক অধিকার রক্ষার কাজ এখনো শেষ হয়নি। তিনি বলেন, ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশের ভিত্তি হিসেবে এই সংবিধান গৃহীত হয়েছিল। এই সংবিধানের ভিত্তি ছিল- আমাদের ত্যাগ এবং সম্মিলিত আকাঙ্ক্ষা। এই সংবিধানের আদর্শগত ভিত্তি ছিল- জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা।
‘একটি গণতান্ত্রিক, ন্যায়সংগত এবং সাম্যভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ। লিঙ্গ, ধর্ম, জাতিসত্তা, রাজনৈতিক বা অন্য যেকোনো পরিচয়ের কারণে বৈষম্য হতে দেওয়া যাবে না। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে সব সাংবিধানিক সংস্কার আমাদের করতে হবে।’
তিনি বলেন, আইনজীবী এবং বাংলাদেশের সচেতন নাগরিক সমাজ হিসেবে- এই সংস্কার প্রক্রিয়ায় আপনারা অংশগ্রহণ করুণ। সাধারণ জনগণকে আপনাদের মতামত জানান। সাধারণ জনগণের মতামত যাতে সংশোধন প্রক্রিয়ায় প্রতিফলিত হয়- সেই প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখুন। সংবিধানের জন্য আপনারা শক্তির প্রতীক হয়ে উঠুন।
তিনি আরও বলেন, সাংবিধানিক শাসন রক্ষা করতে হলে মানুষকে সজাগ হতে হবে। জনগণ ক্ষমতার মালিক, মালিকদের দায়িত্ব অনেক। প্রত্যেক নাগরিককে প্রহরীর ভূমিকা রাখতে হবে।
ড. শাহদীন মালিক বলেন, ৫২ বছরে আমার হিসেবে আমরা ১২ বার সরকার পদ্ধতি পরিবর্তন করেছি। ১৯৭১ থেকে ১৯৮২ পর্যন্ত আমরা ৫ বার সরকার ব্যবস্থা পরিবর্তন করেছি। তিনি বলেন, ২০০৮ সালে এই বিতাড়িত সরকার ক্ষমতায় আসল। ২০০৯ সাল থেকে আমরা বহুদলীয় সংসদীয় একনায়কতন্ত্র কায়েম করলাম। আফ্রিকার কিছু দেশে আছে। সংসদ আছে তার পরেও একনায়কতন্ত্র।
সুব্রত চৌধুরী বলেন, জাতীয় ইতিহাস মুছে ফেলার চেষ্টা করবেন না। তাহলে আপনারাই মুছে যাবেন।
তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে বলেন, ১০টি সংস্কার কমিশন করেছেন করেন, সংস্কার করেন। কিন্তু নীতিমালা হওয়ার আগে কীভাবে বিচারপতি নিয়োগ হলো। ১৫ জন বিচারপতি বিচারের বাইরে। এসবের জবাব থাকা উচিত।
এমএইচডি/এমএ