ফাইল ছবি

সাবেক প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ আদালতকে জানিয়েছেন, আমি মন্ত্রী ছিলাম ঠিকই। কিন্তু আমি ব্যবসা করিনি। ব্যবসা করেছে এজেন্সিগুলো।

সোমবার (২১ অক্টোবর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেরা মাহবুবের আদালতে সিন্ডিকেট করে ২৪ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও মানবপাচারের মামলায় রিমান্ড শুনানিতে তিনি এ কথা বলেন।

এদিন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পল্টন মডেল থানার উপ-পরিদর্শক নাজমুল হাচান তার ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন।

রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানিতে বলেন, উনি দেখতে বয়স্ক কিন্তু চুরিতে যুবক। মালয়েশিয়ায় লোক পাঠানোর ক্ষেত্রে তিনি ও তার ছেলে কয়েকটি রিক্রুটিং এজেন্সি সিলেক্ট করেন। তারপর তাদের কাছ থেকে প্রতি লোকের জন্য দেড় লাখ টাকা নেন। মামলার বাদীর কাছ থেকে ১২ কোটি টাকা নিয়েছেন। এছাড়াও এ খাত থেকে প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা নিয়েছেন।

আসামিপক্ষের আইনজীবী কামরুজ্জামান রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, এ মামলায় তার বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট কোনো অভিযোগ নেই। ঘটনার সময় তিনি মন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন না। আর এ দায়িত্ব ছিল অফিসিয়ালি। সেক্রেটারি লেভেলের লোকদের দায়িত্ব ছিল এটা। আর কারা কারা রিক্রুটিং এজেন্সি থাকবে সেটা মালয়েশিয়ার সরকার ঠিক করে দিয়েছে। উনি এখানে জড়িত নন। উনি বয়স্ক মানুষ। আমি উনার জামিন আবেদন করছি।

পরে ইমরান আহমদ কিছু বলবেন কি না জানতে চান আদালত। তখন তিনি আদালতকে বলেন, মাননীয় আদালত, তখন আমি মন্ত্রী ছিলাম ঠিকই। কিন্তু আমি এসব কিছু করিনি। আমি ব্যবসা করিনি। আমি যা কাজ করেছি তার সব কিছুই ফাইল অনুযায়ী করেছি। মানুষের কাছ থেকে টাকা যা নেওয়ার তা এজেন্সিগুলো নিয়েছে। তারাই নির্দিষ্ট সংখ্যার অতিরিক্ত লোক নিয়েছে। আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।

পরে আদালত তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দেন।

এর আগে রোববার (২০ অক্টোবর) রাতে রাজধানীর বনানী থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।

সিন্ডিকেট করে অর্থ আত্মসাৎ ও মানবপাচারের অভিযোগে গত ৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর পল্টন থানায় মামলাটি দায়ের করেন আফিয়া ওভারসিজের প্রোপাইটর আলতাব খান। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ২৪ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।

মামলায় সাবেক প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমেদ, সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন, সাবেক সংসদ সদস্য ও এম ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক লে. জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, আহমেদ ইন্টারন্যাশনালের প্রোপাইটর ও সাবেক এমপি বেনজীর আহমেদ এবং ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনালের প্রোপাইটর মো. রুহুল আমীন স্বপনসহ ১০৩ জনকে আসামি করা হয়।

মামলার এজাহারে বাদী আলতাব খান অভিযোগ করেন, জনশক্তি রপ্তানিতে দুই হাজারের বেশি রিক্রুটিং এজেন্ট থাকলেও মামলার আসামিরা মাফিয়া সিন্ডিকেট চক্র ব্যবসায়ীদের মধ্যে বৈষম্য তৈরি করে সংবিধানের মূলনীতি পরিপন্থি জঘন্য অপরাধ করেছে। মামলার আসামি সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন সরকারি চাকরিরত অবস্থায় নিজ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ছেলেকে সিন্ডিকেট চক্রের সদস্য হিসেবে ব্যবহার করেছেন। আর সাবেক প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমেদ তার পরিবারের সদস্য অর্থাৎ তার স্ত্রীর বড় ভাইয়ের ছেলেকে বিধি বহির্ভূতভাবে একটি প্রবাসী নামক অ্যাপস চালু করার অনুমোদন দিয়ে চক্রকে সহযোগিতা করেছেন।

বাদী আরও উল্লেখ করেন, পরস্পর যোগসাজশে তার সরলতার সুযোগে ভয়ভীতি ও বলপ্রয়োগ করে মানবপাচারের উদ্দেশ্যে তার কাছ থেকে জোর করে অতিরিক্ত চাঁদা হিসেবে প্রত্যেকের দেড় লাখ টাকা হারে ৮৪১ জনের ১২ কোটি ৫৬ লাখ এক হাজার টাকা আদায় করেছেন। এ ছাড়া তারা সংঘবদ্ধভাবে অন্য ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকা চাঁদা আদায় করে আত্মসাৎ করেছেন।

এনআর/এসএসএইচ