২০১৫ সালে খিলগাঁও থানা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুজ্জামান জনিকে পুলিশি হেফাজতে ‘ক্রসফায়ারের নামে হত্যার’ অভিযোগে গ্রেপ্তার ডিএমপির তৎকালীন পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়াকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) মামলার তদন্ত কর্মকর্তা খিলগাঁও থানার উপ-পরিদর্শক গোলাপ মাহমুদ এ রিমান্ড আবেদন করেন। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলামের আদালতে তার উপস্থিতিতে রিমান্ড শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। 

আদালতে সংশ্লিষ্ট থানার সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা পুলিশের উপ-পরিদর্শক আশ্রাফ আলী ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) রাত সোয়া ১১টার দিকে রাজধানীর মহাখালী ফ্লাইওভার এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাবের একটি দল।

২০১৫ সালে খিলগাঁও থানা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুজ্জামান জনিকে পুলিশি হেফাজতে ‘ক্রসফায়ারের নামে হত্যার’ অভিযোগে ডিএমপির তৎকালীন পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়াসহ পুলিশের বর্তমান ও সাবেক ১৩ কর্মকর্তাসহ ৬২ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়। ঘটনার ৯ বছর পর গত ৩ সেপ্টেম্বর খিলগাঁও থানায় জনির বাবা ইয়াকুব আলী বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালের ১৯ জানুয়ারি সকাল আনুমানিক ৮টা ১৫ মিনিটের দিকে নূরুজ্জামান জনি ও তার সহপাঠী মইন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ছোট ভাই মনিরুজ্জামান হীরাকে দেখতে যায়। কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ফেরার পথে আসামিরা জনি ও মইনকে ডিবি পরিচয় দিয়ে অবৈধভাবে আটক করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন চালায়। পরবর্তীতে তাদের ডিবি ঢাকা মেট্রোপলিটন-দক্ষিণ কার্যালয়ে নিয়ে গিয়েও নির্যাতন করা হয়।

তখন নুরুজ্জামান জনির ৭ (সাত) মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী মুনিয়া পারভিনসহ আত্মীস্বজনরা খিলগাঁও থানা, ডিবি দক্ষিণ অফিস, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অফিসসহ বিভিন্ন থানায় হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়ান। প্রায় ২ দিন ধরে খোঁজাখুজি করার পরেও নুরুজ্জামান জনির কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।

পরবর্তী সময়ে ২০ জানুয়ারি রাত আনুমানিক ৩টা থেকে সাড়ে ৩টার দিকে খিলগাঁও থানার জোড়াপুকুর খেলার মাঠের আশপাশের মানুষজন চিৎকার করা কণ্ঠে কান্নার শব্দ শুনতে পায়। নির্যাতিত ব্যক্তিটি পানি-পানি বলে চিৎকার ও মা-মা বলে আর্তনাদ করতে থাকেন।

ঘটনাস্থলের এলাকার পাশে সি-ব্লকের বাসিন্দা লাভলী বেগম রাতের কান্নার শব্দ শুনেছে বলে জানান। এ-ব্লকের বাসিন্দা সাইফুদ্দিনের স্ত্রী সানজিদা আক্তার সেতু জানান, রাত ৩টার দিকে ওমাগো, মা, মা.. বাঁচাও বলে কয়েকবার চিৎকার শুনেছেন।

সেসময় আশপাশ এলাকার বাসিন্দারা গুলির শব্দ শুনতে পায়। ভোর রাতে বাদীসহ সাক্ষীরা ও প্রতিবেশীরা খিলগাঁও থানার জোড়াপুকুর মাঠের দিকে গিয়ে পুলিশদের দেখতে পায়। আসামিরা বলে যে, নুরুজ্জামান জনি পুলিশের সঙ্গে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়েছে। তার মৃতদেহ ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে।

বাদী ঢাকা মেডিকেল মর্গে গিয়ে দেখতে পান নুরুজ্জামানের বুকের বামে, ডান দিকে, দুই হাতের তালুতে ১৬টি গুলির চিহ্ন রয়েছে। তার সমস্ত শরীর ঝাঁজরা করে ফেলেছে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। উপস্থিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জিজ্ঞাসা করলে তারা কর্কশ ভাষায় গালিগালাজ করে। মরদেহ গ্রহণ না করলে মামলা দেওয়ার হুমকিও দেয় তারা।

এনআর/পিএইচ