কবর থেকে তুলে বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরীর মরদেহের ডিএনএ পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব-উল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

হারিছ চৌধুরীর মেয়ে ব্যারিস্টার সামিরা তানজিম চৌধুরীর রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত এ আদেশ দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মাহদীন চৌধুরী।

পরে হারিছ চৌধুরীর মেয়ে ব্যারিস্টার সামিরা তানজিম চৌধুরী বলেন, শেখ হাসিনার স্বৈরাচার সরকার আমার বাবাকে নির্মম নির্যাতন করেছে। মিথ্যা মামলায় হেনস্তা করা হয়েছে বারবার। তার মৃত্যু নিয়ে পরিকল্পিতভাবে ধোঁয়াশা সৃষ্টি করা হয়, যা অত্যন্ত বেদনার। তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা, দেশপ্রেমিক। তাকে যথাযথ সম্মান দেওয়া হয়নি। আমরা চাই লাশের ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে ধোঁয়াশা যেন দূর হয়। 

২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ঢাকার একটি হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেন বলে নিশ্চিত করেছেন তার মেয়ে সামীরা তানজীন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর। তাকে ঢাকার কাছে একটি কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

বেশ কিছুদিন ধরে হারিছ চৌধুরীর চাচাতো ভাই আশিক চৌধুরী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাসের মাধ্যমে তার মারা যাওয়ার কথা ইঙ্গিত দিলেও সরাসরি কিছু বলেননি। তখন থেকে বিষয়টি আলোচনায়। 

তবে হারিছ চৌধুরীর মেয়ে সামীরা তানজীন চৌধু বিষয়টি খোলাসা করেন। তিনি জানান, তার বাবা ঢাকাতেই ইন্তেকাল করেছেন।

এর আগে, হারিছ চৌধুরীর অবস্থান নিয়ে নানা রকমের গুঞ্জন ছড়িয়েছিল। অনেকে বলেছিলেন, হারিছ চৌধুরী লন্ডনে ইন্তেকাল করেছেন। কিন্তু সবার ধারণা ভুল প্রমাণিত করেছেন তিনি। স্বদেশেই থেকেছেন। তবে কখনো তাবলিগ-জামাতের হয়ে দ্বীনের দাওয়াতে আবার কখনো করেছেন মসজিদে ইমামতি।

সামীরা বলেন, ‘সিলেটের কানাইঘাটে পারিবারিক গোরস্থানে দাদুর কবরের পাশে বাবাকে সমাহিত করার কথা ছিল। কিন্তু আশিক চাচা (আশিক চৌধুরী) সাহস করলেন না। ’

হারিছ চৌধুরীর আত্মগোপনকালে তার পরিবারের সঙ্গে খুব সামান্যই যোগাযোগ হয়েছে উল্লেখ করে সামীরা বলেন, ‘বাবা চাইতেন, যা হয় তার ওপর দিয়ে যাক। সন্তান হিসেবে আমাদের, আত্মীয়-স্বজন এমনকি তিনি যে রাজনীতি করতেন সেই রাজনৈতিক নেতৃত্বও যাতে তার কারণে কোনো বিপদে না পড়ে সেজন্য কারও সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখতেন না। মাঝে মধ্যে তিনি মোবাইল ফোনে সবার খোঁজ নিতেন। সর্বশেষ তিনি যখন আমাকে কাছে চাইলেন, তখন সব শেষ।’

হারিছ চৌধুরীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পর্কে সামীরা বলেন, ‘এর সবটাই রাজনৈতিক। আমার বাবা হঠাৎ করে রাজনীতিতে আসেননি। ১৯৭৭ সাল থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করেছেন, সিলেট জেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তাকে যুবকদের সংগঠিত করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। ছিলেন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব। তিনি প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মতো রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করেছেন। সব কিছুকে ছাপিয়ে আমার বাবা ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। যিনি অস্ত্র হাতে দেশের জন্য লড়েছেন। তার সন্তান হিসেবে অবশ্যই আমি গৌরব বোধ করি। ’

তার বিরুদ্ধে আনীত দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে সামীরা বলেন, ‘এসব অভিযোগ কোন শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক নেতার নামে আসেনি, বলেন! এগুলোর ভিত্তিও আমাদের কারো অজানা নয়। পারিবারিকভাবে চৌধুরী পরিবার অসচ্ছল নয়। জন্মের আগে থেকে ট্রলারের ব্যবসা আর ছোটবেলা থেকে আমাদের গাড়ির শো রুম দেখে আসছি। ঢাকা এবং সিলেটে ব্রিটিশ আমল থেকে আমাদের পরিবার ঐতিহ্যমণ্ডিত। ক্ষমতায় থাকাকালীন গুলশানে একটি বাড়ি সরকারি নিয়ম অনুযায়ী রাজউক থেকে কিনেছিলেন যা সরকার পরবর্তীকালে বাতিল করে ফেরত নিয়েছে। আর কী এমন আছে! আমার দাদা সিও (সার্কেল) অফিসার ছিলেন, এমএলএ ইলেকশনও করেছেন। তার সব ছেলে-মেয়েকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন। আমার বাবা নটরডেম থেকে এইচএসসি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান এবং লোক প্রশাসনে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেছেন। আমাদেরও সুশিক্ষিত করে গড়েছেন। আমি আইন পাস করে ব্রিটিশ গভর্নমেন্ট লিগ্যাল ডিপার্টমেন্টের আইনজীবী হিসেবে কাজ করেছি। আমার ছোট ভাই নায়েম চৌধুরী (জনি) লন্ডন স্কুল অব ইকোনোমিকস থেকে মাস্টার্স করে সিনিয়র এনার্জি ট্রেডার হিসেবে জুরিখে কাজ করছে।’

হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু সংবাদ নিয়ে বিভ্রান্তি প্রসঙ্গে তার মেয়ে সামীরা চৌধুরী মুন্নু বলেন, ‘আমি ২২ বছর থেকে দেশের বাইরে। পরপর দুই চাচা, ফুফু মারা গেলেন। এর বাইরে আমি তেমন কাউকে চিনি না। আশিক চাচাই বাবার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে সব করতেন বলে জানি। দাদার নামে বাবার প্রতিষ্ঠিত এতিমখানা, মাদ্রাসা সব তিনিই দেখাশোনা করেন। আমার ভাইয়ের মাধ্যমে সহায়তা দেই। আমরা আশিক চাচার কাছে অনেক কৃতজ্ঞ। চাচাই মৃত্যু সংবাদটি প্রকাশের দায়িত্ব নিয়েছেন।’ 

এমএইচডি/জেডএস