এক মাস আগেও ছিলেন বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি)। লম্বা সময় একই দায়িত্বে থাকা চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন এখন হত্যা মামলার আসামি। মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাতে সেনা হেফাজত থেকে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণের পর বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) ভোর সাড়ে ৬টার দিকে তাকে আদালতে তোলা হয়। আদালতে অনেক পুলিশ কর্মকর্তাই তাকে ‘স্যার’ বলে সম্বোধন করেছেন।

ডিবি পুলিশের গাড়িতে আদালতে নেওয়ার পর তাকে গারদে বাইরে চেয়ারে বসানো হয়। সেখানে গ্রেপ্তার সদ্য সাবেক আইজিপিকে দেখতে অনেক পুলিশ কর্মকর্তাই ভিড় করেন। তবে, সাবেক সহকর্মীদের প্রতি ‘টুঁ’ শব্দ করেননি মামুন।

আদালতে দায়িত্বরত একজন জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আজ পুলিশ কর্মকর্তাদের সকাল ৬টায় আদালতে উপস্থিত হতে বলা হয়। তারা আদালতে এসে শুনতে পারেন যে, বাহিনীর সাবেক প্রধানকে আদালতে আনা হচ্ছে। সে অনুযায়ী নিরাপত্তা প্রস্তুতি নেন তারা। মামুনসহ তিনজনকে আদালতে এনে গারদে ঢোকানো হয়। তবে, অন্যান্য আসামিদের সঙ্গে গারদের ভেতরে না রেখে তাদের বাইরে চেয়ারে বসতে দেওয়া হয়। সেখান থেকে পুলিশ অফিসাররা মামুনকে হাঁটিয়ে আদালত কক্ষে নিয়ে যান। গোটা সময়ে চুপ ছিলেন তিনি। 

শুনানির পর মোহাম্মদপুরে মুদি দোকানি আবু সায়েদকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে তার আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। রিমান্ডের আদেশ শোনার পর স্বাভাবিকভাবেই হেঁটে ওঠেন ডিবির গাড়িতে। প্রায় ৩০ মিনিট সাবেক সহকর্মীদের সঙ্গে থাকলেও তেমন কোনো কথা বলেননি তিনি।

এদিকে, ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সুপার নিউমারারি পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) আব্দুল্লাহিল কাফিকে হাজারীবাগ থানার অপহরণ মামলায় আট দিনের রিমান্ড দেন আদালত। 

আদালতে দায়িত্বরত এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, কাফি আদালতে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে গারদে বসে ক্ষুব্ধ বক্তব্য দেন। তার ভাষ্য অনুযায়ী, কাফি খুবই ক্ষুব্ধ ছিলেন। হাজারীবাগের একটি অপহরণ মামলায় আটক করা হলেও তাকে মূলত আশুলিয়ায় শিক্ষার্থীদের লাশ ভ্যানে তোলা ও পোড়ানোর জন্য গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনাটি সত্য নয়। এই ঘটনার সঙ্গে কাফির কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। ভিডিওতে যার ছবি দেখা যাচ্ছে, সেটিও তিনি (কাফি) নন। শুধুমাত্র ঢাকা রেঞ্জের দায়িত্বশীল ব্যক্তি হওয়ায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আর যদি একই হয়ে থাকে, তাহলে দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হিসেবে ঢাকা জেলার এসপি, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজিকে কেন গ্রেপ্তার করা হলো না? আদালতে যাওয়া, এজলাসে দাঁড়ানোসহ প্রতিটি মুহূর্তে কাফি ক্ষুব্ধ ছিলেন, চাপা ক্ষোভ ছিল। 

আদালতে আসা আরেক আসামি সাবেক আইজিপি একেএম শহীদুল হকও সাবেক সহকর্মীদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি।

তার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা একজন পুলিশ সদস্য জানান, শহীদুল হককে কিছুটা চটপটে ও উদ্বিগ্ন মনে হয়েছে। আদালতে নেওয়ার সময় তিনি পুলিশ সদস্যসের উদ্দেশ্যে বলেন, কয়েকজন ফোর্স সামনে থেকো, সাইড দিয়ে (ডান পাশে) একটি কর্ডন করো। সহকর্মীদের সঙ্গে এর চেয়ে বেশি কথা না বললেও আদালতে কথা বলেছেন শহীদুল হক।

আদালতে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে তিনি বলেন, আমি পুলিশ প্রধান থাকতে কোনো মিথ্যা মামলা দিয়ে কাউকে হয়রানি করিনি। পুলিশকে জনগণের কাছে নিয়ে গেছি। আমি যতদিন চাকরি করেছি, মানুষের সেবা করেছি। আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, তার কোনোটিই সত্য নয়। আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ।

পরে তার সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

এআর/কেএ