ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) পদে যোগদান করছেন না অ্যাডভোকেট এহসানুল হক সমাজী। নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়ার দুই দিনের মাথায় তিনি এ পদে না থাকার ঘোষণা দিলেন।

বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) আইন ও বিচার বিভাগের সলিসিটর অনুবিভাগে পাঠানো এক চিঠিতে পিপি পদে না থাকার কারণ উল্লেখ করেছেন।

চিঠিতে তিনি বলেন, ‘অতি সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমসহ অন্যান্য সূত্রে জ্ঞাত হই যে, আপনার কার্যালয় হইতে ইস্যুকৃত পত্রযোগে আমি নিম্ন স্বাক্ষরকারীকে বিষয়ভুক্ত (মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর) পদে নিয়োগ দান করা হইয়াছে, তজ্জন্য আমি উপদেষ্টা মহোদয়সহ সংশ্লিষ্ট সকলের নিকট কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করিতেছি। উল্লেখ্য, ঢাকা আইনজীবী সমিতির নিয়মিত সদস্য হিসেবে সুদীর্ঘ প্রায় ৩৮ বৎসর যাবৎ সকলের জ্ঞাতসারে আমি পেশাগত মর্যাদাকে প্রাধান্য দিয়ে সততা ও নিষ্ঠার সহিত পেশাগত দায়িত্ব পালন করিয়া আসিতেছি। পেশাগত মর্যাদাকে বজায় রাখার স্বার্থে ও আমার ব্যক্তিগত/পারিবারিক কারণে বিষয়ভুক্ত (মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর) পদে যোগদান করিতে অপারগতা প্রকাশ করিতেছি বিধায় আন্তরিকভাবে দুঃখিত।’

‘রাষ্ট্র সংস্কার কার্যে আমার সমর্থন রহিয়াছে এবং প্রশাসনের চাহিত মতে ও ভবিষ্যতে আইনি সেবা দানে সর্বাত্মক সহযোগিতা করিব।’

এর আগে ২৭ আগস্ট নতুন মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে এহসানুল হক সমাজীর নিয়োগের বিষয়টি জানানো হয়।

গতকাল (বুধবার) এ খবর প্রকাশিত হওয়ার পর দুপুরে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা সাধারণ আইনজীবীর ব্যানারে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সামনে তার নিয়োগ বাতিল চেয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। অবিলম্বে এহসানুল হক সমাজীর নিয়োগ বাতিলের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আহ্বান জানান। তা না হলে তাকে এ দায়িত্ব পালন করতে দেওয়া হবে না মর্মে হুমকি প্রদান করেন।

সমাবেশে ঢাকা আইনজীবী সমিতির বিএনপি দলীয় সাবেক সভাপতি বোরহান উদ্দিন ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক ফারুকীকে নেতৃত্বে দিতে দেখা যায়। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার মধ্যে তিনি পদত্যাগ না করলে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছিলেন। এদিন তারা পিপি অফিসে তালা মেরে দেন।

জানা যায়, অ্যাডভোকেট সমাজী এর আগেও ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ছিলেন। তিনি বাংলাদেশে প্রচলিত ফৌজদারি কার্যবিধির প্রয়োজনীয় সংশোধনীর উদ্দেশ্যে ইউনাইটেড নেশনস ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (ইউএনডিপি) পরিচালিত জাতীয় পরামর্শক সংস্থার আইন পরামর্শক হিসেবেও কাজ করেছেন।

এহসানুল হক সমাজী ২০০৭-২০০৯ মেয়াদে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ঢাকার মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর এবং বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তার মেয়াদে তিনি রাষ্ট্র/প্রসিকিউশনের প্রতিনিধিত্ব করেন এবং ফৌজদারি আদালতে মামলা পরিচালনা করেন।

তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৪ সালের এলএলবি (সম্মান) এবং ১৯৮৫ সালে এলএলএম ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৮৬ সালের ৩০ অক্টোবর একজন আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ওই বছরের ৪ নভেম্বর তিনি ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্যপদ লাভ করেন। ১৯৮৮ সালের ৭ এপ্রিল বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে তালিকাভুক্ত হন। ১৯৯২ সালের ২১ জানুয়ারি তিনি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্যপদ লাভ করেন।

এনআর/এমজে