২০১৫ সালে রাজধানীর উত্তরা থেকে অপহরণ করার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করা হয়েছে।

বুধবার (১৪ আগস্ট) দুপুরে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা শাকিলা সুমু চৌধুরীর আদালতে এই আবেদন করেছেন ভুক্তভোগী সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সোহেল রানা। আদালত বাদীর জবানবন্দি রেকর্ড করে আদেশ অপেক্ষমাণ রেখেছেন।

বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. সোহেল রানা মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

আরও পড়ুন

মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক আইজিপি শহীদুল হক, সাবেক র‍্যাব ডিজি বেনজির আহমেদ এবং র‍্যাবের অজ্ঞাত ২৫ সদস্যকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০১২ সাল থেকে জেলা ও দায়রা জজ আদালত, ঢাকায় নিয়মিত আইন পেশায় নিয়োজিত থাকাবস্থায় বিগত ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি ব্যক্তিগত কাজে বাদীর বন্ধু মো. আশরাফুল ইসলাম রিংকুর সঙ্গে মোটরসাইকেলযোগে উত্তরার ৫ নং সেক্টরের ১ নং রোডে স্মাইল গ্যাল্যারির সামনে অবস্থানকালে রাত আনুমানিক ৮ থেকে সাড়ে ৮টার মধ্যে একজন হাতে স্মার্টডিভাইস বহনকারী ব্যক্তি বাদীকে সালাম দিয়ে বাদীর নাম অ্যাডভোকেট মো. সোহেল রানা কিনা জিজ্ঞাসা করে। বাদী হ্যাঁ সূচক উত্তর দেওয়ার সময়ে একটি ছাই কালারের হাইএস গাড়ি বাদীর সামনে এসে দাঁড়ায় এবং ওই সময়ে স্মার্ট ডিভাইস বহনকারী ব্যক্তি বাদীকে বলে বাদীর সঙ্গে জরুরি কথা আছে গাড়িতে উঠুন।

বাদী এবং বাদীর বন্ধুকে গাড়িতে তোলার সঙ্গে সঙ্গে বন্দুকধারী ব্যক্তিরা বাদী ও বাদীর বন্ধুর চোখ শক্ত করে বেঁধে পিছমোড়া করে হাতে হাতকড়া পরিয়ে বাদীর সঙ্গে থাকা মোবাইলসহ সিম ও মানিব্যাগ নিয়ে নেয় এবং বাদীর পরিধেয় কোমরের বেল্ট এবং প্যান্ট খোলে বাদীর গোপনাঙ্গে ক্লিপ জাতীয় কিছু লাগিয়ে কারেন্টের শক দিতে থাকে এবং বাদীর আত্মচিৎকার যেন বাইরে থেকে শোনা না যায় সেজন্য গাড়িতে উচ্চ ভলিয়মে ডিজে টাইপের গান চালিয়ে রাখে।

ঘণ্টা খানেক গাড়িতে নির্যাতন চালানো অবস্থায় বাদী বুঝতে পারে হাইএস গাড়িটি বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরির পর কোনো একটা বিল্ডিংয়ের আন্ডার গ্রাউন্ডে প্রবেশ করেছে এবং বাদীকে চোখ বাঁধা অবস্থায়ই গাড়ি থেকে টেনে-হিঁচড়ে নামানো হয়।

চরিত্রহীন মহিলার দল করছ আর তোরা সরকার উৎখাত করবি-এই বলে সেই আগের মতনই বাদীকে উত্তর দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আরো উচ্চমাত্রার বৈদ্যুতিক শক বাদীর গোপনাঙ্গে এবং কানের লতিতে লাগানো ক্লিপের মাধ্যমে দেওয়া শুরু করে। তারও ঘণ্টা দুই পর একজন ব্যক্তির নির্দেশে অন্য আরও তিন থেকে চারজন ব্যক্তি বাদীর দুই হাত রশির সাহায্যে বেঁধে ওপরের দিকে ঝুলিয়ে কোমর থেকে পা পর্যন্ত লাঠি অথবা শক্ত কোনো বস্তু দিয়ে বারবার আঘাত করতে থাকলে বাদী সাময়িক সময়ের জন্য অজ্ঞান হয়ে পড়ে। যখন জ্ঞান ফিরে তখন বাদী বুঝতে পারে তখনও বাদীর চোখ বাঁধা এবং হাত পিছমোড়া করে হাতে হাতকড়া লাগানো অবস্থায় বাদী মেঝের ওপর পড়ে আছে।

এই অবস্থায় বাদীকে বারবার জিজ্ঞাসা করে আমার নির্দেশে নির্বাচন কমিশনে আগুন দেওয়া হয়েছে কি না? এরপর ওই ব্যক্তি বাদীর ফেসবুকের পাসওয়ার্ড নিয়ে নেয় এবং পুনরায় বাদীকে আগের মতো কারেন্টের শক দিতে থাকে এবং বলতে থাকে তোকে মেরে ফেলার নির্দেশ আছে। বাদী আর সহ্য করতে না পেরে পুনরায় অজ্ঞান হয়ে যায় এবং যখন জ্ঞান ফিরে তখন তৃতীয় বারের মতো বাদীকে একজন ব্যক্তি বাদীর পরিবারের কেউ রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত কিনা, সামরিক বাহিনীতে কোনো আত্মীয়-স্বজন কর্মরত আছেন কিনা জিজ্ঞাসা করে চলে যায়।

বাদীর ওপর অমানবিক অত্যাচারের কারণে বাদীর কোমরের নিচের অংশের কোনো স্নায়ু কাজ করছিল না, একপ্রকার অবশ হয়ে গিয়েছিল এবং বাদী হাঁটার অনুপযুক্ত অবস্থায় দুই জন ব্যক্তি বাদীকে ঘরে অন্য একটি কক্ষে নিয়ে যায়। ওই কক্ষে বাদীকে হাতকড়া ও চোখ বাঁধা অবস্থায় দুই দিন রাখা হয় এবং অল্প পরিমাণ পানি ছাড়া বাদীকে কোন ধরনের খাবার দেওয়া হয়নি। বাদীকে আটকের আনুমানিক তৃতীয় দিন হাতকড়া ও চোখ বাঁধা অবস্থায় অন্য একটি কক্ষে নিয়ে এলে বাদী চোখে বাঁধা কাপড়ের নিচ থেকে খানিক দেখতে পান যে, কক্ষটিতে ছোট ছোট অনেকগুলো খুপরি যা সবুজ কাপড় দ্বারা বেষ্টনী করা এবং ওই কক্ষে বাদী আরো অনেক বন্দি মানুষের উপস্থিতি আছে মর্মে অনুধাবন করতে পারেন।

পরে ২০১৫ সালে আনুমানিক ৬ জুন অনুমান দুপুরে যোহরের নামাজের পর বাদীকেসহ আরও কয়েকজন বন্দিকে গাড়িতে করে আনুমানিক ৭ থেকে ৮ ঘণ্টার দূরত্বে নিয়ে আসা হয় এবং এই জায়গাতেও আগের মতো বাদীর চোখ বাঁধা এবং দুই হাত পিছমোড়া করে হাতকরা লাগানো অবস্থায় থাকত।

পরে বাদী ঢাকার গাড়িতে করে বাদীর শ্বশুরের বারিধারার বাসায় আসে। বাড়িতে এসে জানিতে পারি বাদীর শোকে বাদীর বাবা ২০১৫ সালের ২৮ মে মারা যান এবং বাদীর নিখোঁজের ব্যাপারে বাদীর শ্বশুর আনোয়ারুল ইসলাম ২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আদাবর থানায় জিডি নং ৭৮৩ দায়েরসহ বাদীর স্ত্রী সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে রিট পিটিশন নং ৩৩৮১/২০১৫ দায়ের করার পাশাপাশি ১৭/০৩/২০১৫ তারিখে আইনজীবী সোহেল রানা ৩৬ দিন ধরে নিখোঁজ শিরোনামে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকা এবং ১৮/০৩/২০১৫ তারিখে নিখোঁজের সংখ্যা বাড়ছে শিরোনামে জাতীয় দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হইলেও বাদী এবং বাদীর পরিবার কোনো প্রতিকার পাননি।

পরে বাদী মুক্ত হয়ে ফেরত আসার পর জানতে পারেন ১ নং আসামির হুকুমে ২-৫ নং আসামির নির্দেশে ৬ নং আসামিরা দেশে একনায়কতন্ত্র ও বিনা বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে এবং বাদী নিজেই নিপীড়নের শিকার। ওই বিষয়ে সরকার প্রধানসহ সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততা থাকায় বিগত সরকারের আমলে মামলা দায়েরে বাদীর প্রাণনাশের হুমকি থাকায় এ বিষয়ে মামলা দায়ের করিতে পারেননি বিধায় এই মামলা দায়ের করতে বিলম্ব হয় এবং ওই বিষয়ে বাদী চলতি ১২ আগস্ট উত্তরা পশ্চিম থানায় এজাহার দায়ের করতে গেলে কর্তব্যরত অফিসার-ইনচার্জ আদালতে মামলা দায়ের করতে বললে অত্র ঘটনাস্থল বিজ্ঞ হুজুর আদালতের অধিক্ষেত্র হওয়ায় অত্র মামলা আদালতে দায়েরের জন্য দাখিল করা হইল।

এর আগে, মঙ্গলবার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মুদি দোকানদার আবু সায়েদকে হত্যার অভিযোগে করা মামলার আবেদন নিয়ে আদেশ দিয়েছেন আদালত। আদেশে আবেদনটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রে রাজেশ চৌধুরীর আদালত এ আদেশ দেন। এস এম আমীর হামজা নামে এক ব্যক্তি এ মামলার আবেদন করেন। সচেতন নাগরিক হিসেবে একজন নিরীহ নাগরিক হত্যার বিচার চেয়ে এ মামলা করেছেন বলে জানিয়েছেন এই ব্যবসায়ী।

এনআর/জেডএস