কোটা আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর রামপুরায় বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবনে নাশকতার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানিসহ তিনজনের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। রিমান্ডে যাওয়া অপর আসামিরা হলেন– গোলাম দস্তগীর প্রিন্স ও এ বি এম খালিদ হাসান।

শনিবার (২৭ জুলাই) তাদের আদালতে হাজির করে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে  ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির খিলগাঁও জোনাল টিমের পরিদর্শক মোহাম্মদ ইয়াসিন শিকদার। এ্যানির পক্ষে তার আইনজীবী জয়নাল আবেদীন মেজবাহ, তাহেরুল ইসলাম তৌহিদসহ অনেকে রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষ এর বিরোধিতা করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শান্তা আক্তারের আদালত প্রত্যেকের সাত দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।

আসামিপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর নিউ এলিফ্যান্ট রোড থেকে এ্যানিকে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পরে তাকে বিটিভি ভবনে নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, গত ১৮ জুলাই বেলা সাড়ে ১১টায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে শিক্ষার্থীরা রামপুরা ট্রাফিক পুলিশ বক্স ও বিটিভি ভবনের সামনের সড়কে অবস্থান নেয়। একপর্যায়ে পুলিশ সদস্যরা তাদের বুঝিয়ে সেখান থেকে সরিয়ে দেয়। এরপর ‘বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের নির্দেশে ও সক্রিয় অংশগ্রহণে’ অজ্ঞাতনামা ৩-৪ হাজার কর্মী দলবদ্ধ হয়ে সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেয়। তারা দায়িত্বরত পুলিশ ও আনসার সদস্যদের বাধা উপেক্ষা করে অবৈধভাবে বিটিভি ভবনের প্রধান চারটি গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। এরপর তারা ভবনের ভেতরে ব্যাপক ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়। টেলিভিশন ভবনে কর্মরত বিভিন্ন কর্মকর্তাদের নাম ও পদবি উল্লেখ করে খোঁজাখুঁজি করে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পরিকল্পিতভাবে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের মাধ্যমে তারা বাংলাদেশ টেলিভিশনের ভেতরে থাকা সরকারি মালামাল ভাঙচুর করে। ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ৫০ কোটি টাকা। পুলিশ ও বিজিবি রাত ৯টার দিকে সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

সেদিনের হামলায় বিটিভির পোর্টেবল ডিএসএনজি সিস্টেমের সব সম্প্রচার যন্ত্রপাতি, এসব যন্ত্রপাতি পরিবহন কাজে ব্যবহৃত মাইক্রোবাস এবং কেন্দ্রীয় শীতাতপ ব্যবস্থার ক্ষতি হয়। ১৭টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ এবং ৯টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ২১টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়।

বিটিভির মূল ভবনের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, ঢাকা কেন্দ্রের রিসিপশনে অগ্নিসংযোগ, ট্রান্সপোর্ট ভবনে অগ্নিসংযোগ, ক্যান্টিনে, অডিটোরিয়ামে অগ্নিসংযোগ, মেকআপ শাখা ভাঙচুর, ডিজাইন শাখার মেকআপ (ওয়ার্কশপ, স্টোর, ওয়ারড্রব ও গ্রাফিক্স রুম) রুমে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয়।

এ ঘটনায় পরের দিন বিটিভির ঢাকা কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার মাহফুজা আক্তার বাদী হয়ে রামপুরা থানায় মামলা দায়ের করেন।

এনআর/এসএসএইচ