নোয়াখালীর সুবর্ণচরে কৃষক মো. ইউছুফ (৫০) হত্যার ১১ বছর পর রায় ঘোষণা করেছেন আদালত। রায়ে দুই ভাইকে ১০ বছরের কারাদণ্ড, একইসঙ্গে তাদের ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

সোমবার (৮ জুলাই) দুপুরে নোয়াখালী স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক এ এন এম মোর্শেদ খান নিজেই রায় ঘোষণার বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেন।

দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন, সুবর্ণচর উপজেলার জাহাজমারা গ্রামের মৃত আবুল কালামের ছেলে আবদুস সাত্তার (৪৩) ও স্বপন (৩৩)। রায় ঘোষণার সময় আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। পরে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

জানা যায়, ২০১৩ সালের ১৮ জুন বিকেলে নিহত ইউছুফের ভাই আবদুর রহিমের গরু আসামি মো. জাহেরের ধান খায়। তাই জাহের গরুটি বাড়ির গোয়াল ঘরে বেঁধে রাখেন। খবর পেয়ে আবদুর রহিমের ছোট ছেলে মামুন গরু আনতে গেলে জাহের চর থাপ্পড় দিয়ে তাড়িয়ে দেয়। মামুন কাঁদতে কাঁদতে তার বাবা আবদুর রহিমকে জানালে সে জাহেরের বাড়িতে যায়। আবদুর রহিম তার ছেলেকে মারধরের কারণ জিজ্ঞেস করলে জাহের মারধর করতে আসলে আবদুর রহিম দৌড়ে পালাতে যায়। জাহের আবদুর রহিমকে দৌড়ে ধরে এলোপাতাড়ি মারধর করেন। চিৎকার শুনে আবদুর রহিমের ভাই ইউছুফ ও বেলাল এগিয়ে আসলে জাহেরের ভাই আবদুস সাত্তার ইউছুফের নাক ফাঁটিয়ে দেয়। পরে তাকে স্থানীয় চেউয়াখালী বাজারে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাজার থেকে রাত সাড়ে ১১টার দিকে বাড়ি ফিরলে আগে থেকে ওৎপেতে আনোয়ার হোসেন জাহাঙ্গীর ইউছুফকে মাথায় আঘাত করে, আবদুল মান্নান বাম চোখে ঘুষি দেন, আবুল কাশেম রড দিয়ে ইউছুফকে মারাত্মক জখম করেন, আবদুস সাত্তার ও অন্যান্যরা লাকড়ি দিয়ে আঘাত করেন। এতে ইউছুফের চিৎকারে মানুষজন আসলে আসামিরা পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা ইউছুফকে উদ্ধার করে নোয়াখালী জেলা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠাতে বললে হাসপাতালের প্রধান ফটকের সামনে গেলে ইউছুফ শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।

পরের দিন ১৯ জুন ইউছুফের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম বাদী হয়ে ১১ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘ ১১ বছর বিচারকার্য শেষে স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক এ এন এম মোর্শেদ খান দুইজনকে ১০ বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড প্রদান করেন। এছাড়া বাকি ৯ জনকে খালাস করেন।

মামলার রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (পিপি) মো. এমদাদ হোসেন কৈশোর ঢাকা পোস্টকে বলেন, রায়ে আমরা সন্তোষ প্রকাশ করতে পারছি না। কারণ মামলার প্রধান আসামিরা খালাস পেয়েছে। রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি বের হলে আমরা উচ্চ আদালতে যাব।

নিহতের ভাতিজা মো. মামুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলাম। আমাকে ঘিরে এই ঘটনাটি ঘটে অথচ প্রধান আসামিরা খালাস পেয়েছে। আমরা রায় শুনে মর্মাহত হয়েছি। বর্তমানে আমাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এ রায়ে আমরা সন্তুষ্ট নই। আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করব।

হাসিব আল আমিন/এমএ