আলোচিত দুই মামলার আপিল শুনানি ও রায় এ মাসেই
অবশেষে বহুল আলোচিত ফেনীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার আপিল ও ডেথ রেফারেন্স শুরু হতে যাচ্ছে। আগামী ১৪ জুলাই আলোচিত এ মামলার আপিল শুনানির জন্য হাইকোর্টের কার্যতালিকায় থাকবে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। অপরদিকে চাঁদপুরের পারভীন হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বহুল আলোচিত সিরিয়াল কিলার রসু খাঁসহ তিনজনের আপিল শুনানি শেষ হয়েছে। এ বিষয়ে আগামী ৯ জুলাই রায় ঘোষণা করবেন হাইকোর্ট।
নুসরাত হত্যা মামলার বিষয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান মনির ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিচারপতি হাবিবুল গনি ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চে নুসরাত হত্যা মামলার আসামিদের আপিল শুনানি হবে। আসামিদের আপিল শুনানি আগামী ১৪ জুলাইয়ের কার্যতালিকায় থাকবে। আশা করছি ওইদিনই শুনানি শুরু হবে। আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি। হাইকোর্টে আসামিদের মৃত্যুদণ্ড যেন বহাল থাকে শুনানিতে সেটা তুলে ধরব।
বিজ্ঞাপন
অন্যদিকে চাঁদপুরের পারভীন হত্যা মামলায় সিরিয়াল কিলার রসু খাঁসহ তিনজনের আপিল শুনানি ও রায়ের তারিখ জানিয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মনিরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত ৪ জুলাই রসু খাঁসহ তিনজনের আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শেষ হয়েছে। আগামী ৯ জুলাই বিচারপতি সৈয়দ মো. জিয়াউল করিম ও বিচারপতি কে এম ইমরুল কায়েশের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ বিষয়ে রায় ঘোষণা করবেন।
বহুল আলোচিত ফেনীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার বিচার উচ্চ আদালতে আটকে আছে। চার বছর আগে এই মামলা শুনানির জন্য বেঞ্চ নির্ধারণ করে দিলেও এখনও শুনানি আলোর মুখ দেখেনি। আলোচিত এই মামলার আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্স নিষ্পত্তি না হওয়ায় রায় কার্যকর করা যাচ্ছে না। তবে আশার কথা আগামী ১৪ জুলাই নুসরাত হত্যা মামলার আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্স শুরু হতে যাচ্ছে
এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রের এ আইন কর্মকর্তা বলেন, শুনানিতে সিরিয়াল কিলার রসু খাঁসহ তিন আসামির অপরাধের ভয়াবহতা তুলে ধরেছি। আসামিদের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখার আর্জি জানিয়েছি।
নুসরাত হত্যা মামলা
বহুল আলোচিত ফেনীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার বিচার উচ্চ আদালতে আটকে আছে। চার বছর আগে এই মামলা শুনানির জন্য বেঞ্চ নির্ধারণ করে দিলেও এখনও শুনানি আলোর মুখ দেখেনি। আলোচিত এই মামলার আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্স নিষ্পত্তি না হওয়ায় রায় কার্যকর করা যাচ্ছে না। তবে আশার কথা আগামী ১৪ জুলাই নুসরাত হত্যা মামলার আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্স শুরু হতে যাচ্ছে।
২০১৯ সালের ২৪ অক্টোবর নুসরাত হত্যা মামলার রায় দেন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। রায়ে ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার মাদরাসাছাত্রী নুসরাতকে হত্যার দায়ে বরখাস্ত হওয়া অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাসহ ১৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
ওই বছরের ২৯ অক্টোবর ডেথ রেফারেন্সের জন্য মামলার রায়সহ নথিপত্র হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আসে। মামলার পেপারবুক অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রস্তুত শেষে ২০২০ সালের ২ মার্চ আপিল শুনানির জন্য বেঞ্চ নির্ধারণ করে দেন প্রধান বিচারপতি। এজন্য বিচারপতি সৌমেন্দ্র সরকার ও বিচারপতি শাহেদ নুরউদ্দিনের হাইকোর্ট বেঞ্চ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এরপর কয়েকবার সংশ্লিষ্ট হাইকোর্ট বেঞ্চের কার্যতালিকায় মামলাটি শুনানির জন্য উঠে। তবে করোনার কারণে ছুটিসহ বিভিন্ন কারণে আর শুনানি হয়নি। এর মধ্যে ২০২০ সালের ৩০ অক্টোবর অবসরে যান বিচারপতি সৌমেন্দ্র সরকার। সম্প্রতি বিচারপতি হাবিবুল গনি ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চে নুসরাত হত্যা মামলাটি শুনানির জন্য পাঠানো হয়।
২০১৯ সালের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে নুসরাতের শ্লীলতাহানি করেন। এ ঘটনায় সোনাগাজী থানায় নুসরাতের মা শিরিনা আক্তারের করা মামলায় অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে ওই বছরের ৬ এপ্রিল মাদরাসার প্রশাসনিক ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে নুসরাতের হাত-পা বেঁধে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয় বোরকা পরা দুর্বৃত্তরা।
২০১৯ সালের ১০ এপ্রিল রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নুসরাতের মৃত্যু হয়। অগ্নিসন্ত্রাসের এ ঘটনায় নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান (নোমান) সোনাগাজী থানায় মামলা দায়ের করেন। পরে মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়।
এ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসার বরখাস্ত হওয়া অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা, সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি রুহুল আমিন, সোনাগাজী পৌরসভার কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম, মাদরাসার শিক্ষক হাফেজ আবদুল কাদের, প্রভাষক আফসার উদ্দিন, মাদরাসার ছাত্র নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, সাইফুর রহমান, মোহাম্মদ যোবায়ের, জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, কামরুন নাহার মণি, উম্মে সুলতানা পপি ওরফে তুহিন, আবদুর রহিম শরিফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন মামুন, মোহাম্মদ শামীম ও মহি উদ্দিন শাকিল।
নুসরাত হত্যা মামলার আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জামিউল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, অনেক আগে খালাস চেয়ে আসামিদের পক্ষে আপিল দায়ের করেছি। এখন আপিল শুনানির জন্য প্রস্তুত আছি।
চাঁদপুর সদর উপজেলার মদনা গ্রামের ছিঁচকে চোর রসু খাঁ। মসজিদের ফ্যান চুরির ঘটনায় কমিউনিটি পুলিশের হাতে ধরা পড়ে সে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে একে একে বেরিয়ে আসে লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের তথ্য। এ সময় সে নিজের মুখে স্বীকার করে ১১ জন নারীকে ধর্ষণ ও হত্যার কথা। ভালোবাসায় ব্যর্থ হয়ে একসময় সিরিয়াল কিলারে পরিণত হয় রসু খাঁ। টার্গেট ছিল ১০১টি হত্যাকাণ্ড ঘটানোর
আরও পড়ুন
রসু খাঁর আপিল শুনানি শেষ, রায় ৯ জুলাই
চাঁদপুর সদর উপজেলার মদনা গ্রামের ছিঁচকে চোর রসু খাঁ। মসজিদের ফ্যান চুরির ঘটনায় কমিউনিটি পুলিশের হাতে ধরা পড়ে সে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে একে একে বেরিয়ে আসে লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের তথ্য। এ সময় সে নিজের মুখে স্বীকার করে ১১ জন নারীকে ধর্ষণ ও হত্যার কথা। ভালোবাসায় ব্যর্থ হয়ে একসময় সিরিয়াল কিলারে পরিণত হয় রসু খাঁ। টার্গেট ছিল ১০১টি হত্যাকাণ্ড ঘটানোর। আটকের আড়াই মাস আগে পারভীনকে হত্যা করে রসু খাঁ। রসু যাদের হত্যা করেছে তারা সবাই ছিল গার্মেন্টস কর্মী। পরে তাকে এবং তার দুই সহযোগীকে পারভীন হত্যা মামলায় আসামি করা হয়।
ওই হত্যা মামলায় সিরিয়াল কিলার রসু খাঁসহ (৪৫) তিনজনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। অপর দুইজন হলেন- রসু খাঁর ভাগনে জহিরুল ইসলাম (৩৫) ও তার সহযোগী মো. ইউনুছ (৩৮)।
২০১৮ সালের ৬ মার্চ চাঁদপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবদুল মান্নান এ রায় দেন। এরপর মামলার নথিসহ ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত রসু খাঁ চাঁদপুর সদর উপজেলার চান্দ্রা ইউনিয়নের মদনা গ্রামের মুন খাঁ ওরফে আবু খাঁর ছেলে। জহিরুল পার্শ্ববর্তী ফরিদগঞ্জ উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের সৈয়াল বাড়ির মো. মোস্তাফার ছেলে। আর ইউনুস একই গ্রামের মৃত মিসির আলীর ছেলে।
আরও পড়ুন
হত্যার শিকার পারভীন আক্তার ফরিদগঞ্জ উপজেলার বালিথুবা ইউনিয়নের পালতালুক গ্রামের আবুল কালামের স্ত্রী। তার বাবার নাম মৃত কাজল খান।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ২০০৯ সালের ২০ জুলাই রাতের মধ্যে রসু খাঁ ও অপর আসামিরা ফরিদগঞ্জ উপজেলার মধ্য হাঁসা গ্রামের মাঠে পারভীন আক্তারকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। এ ঘটনার পরদিন স্থানীয়দের সংবাদের ভিত্তিতে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে।
ময়নাতদন্তের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, পারভীনের বাম স্তনে ও দুই পায়ের উরুতে ২০টি সিগারেটের ছেঁকার দাগ ছিল। ওই সময় পারভীন অজ্ঞাত হওয়ার কারণে তৎকালীন সময়ের(২০০৯ সালের ২১ জুলাই) ফরিদগঞ্জ থানার এসআই মীর কাশেম আলী বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তৎকালীন সময়ের এসআই মোশফিকুর রহমান ঘটনার তদন্ত শেষে একই বছরের ১৩ ডিসেম্বর আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।
চাঁদপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) হাবিবুল ইসলাম তালুকদার জানান, মামলাটি দীর্ঘ ৯ বছর চলমান থাকা অবস্থায় আদালত ১৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন। পাশাপাশি আসামিরা তাদের অপরাধ স্বীকার করায় আদালত এই রায় দেন। রসু খাঁর বিরুদ্ধে এই মামলা ছাড়াও আদালতে আরও সাতটি মামলা রয়েছে।
এমএইচডি/এমজে