চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার দুর্গাপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষার্থীদের অজান্তে ভর্তির আবেদনপত্র গ্রহণ করার ঘটনায় প্রতিকার চেয়ে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। নোটিশ একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য আবেদনপত্র ছাড়াই বেআইনি পদ্ধতিতে তৈরি করা অ্যাকাউন্টগুলো (অননুমোদিত অ্যাকাউন্ট) সরানোর জন্য অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। অন্যথায় উচ্চ আদালতে রিট করা হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।

ভুক্তভোগী ৩৩ শিক্ষার্থীর অভিভাবকের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার এ বি এম হামিদুল মিসবাহ গতকাল (১ জুন) এ নোটিশ পাঠান। সোমবার তিনি নোটিশ পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

শিক্ষা সচিব, তথ্য ও প্রযুক্তি সচিব, চাঁদপুর জেলা শিক্ষা অফিসারসহ সংশ্লিষ্টদের এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

গত ৩০ মে ‘কলেজে ভর্তিতে ভুতুড়ে আবেদন, ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এবার কলেজে ভর্তির পালা। কিন্তু ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভর্তির আবেদন করতে গিয়ে দেখে শিক্ষার্থীদের আবেদন অন্য কেউ করে ফেলেছে। এ নিয়ে চাঁদপুরের হাইমচরে ২০ থেকে ২৫ জন শিক্ষার্থী জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ করেছে। এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে স্থানীয় প্রেস ক্লাবেও সংবাদ সম্মেলন করে তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাইমচর কেভিএন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আফরোজা এবং বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়সহ কয়েকটি স্কুল ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের অজান্তে হাইমচর উপজেলার দুর্গাপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভর্তির আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু কে বা কারা এ আবেদন করেছে তা জানা যায়নি। এ নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছে শিক্ষার্থীরা।

গত ২৯ মে উপজেলা প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে কেভিএন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আফরোজা ও বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাতেমা জানান, ২০২৪ সালে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তারা তাদের পছন্দের কলেজে ভর্তি আবেদন করতে গিয়ে দেখে কে বা কারা দুর্গাপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজে তাদের আবেদন করেছে। তারা আরও উন্নত মানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হবে। ওই প্রতিষ্ঠানে অন্য কেউ আবেদন করার কারণে তাদের পছন্দের কলেজে ভর্তি আবেদন করতে পারছে না। 

শিক্ষার্থীদের নিজেদের ও পরিবারের ইচ্ছার বাইরে কেন এমন আবেদন করা হলো তার সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানান তারা।

কেভিএন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎ নাথ বলেন, আমার বিদ্যালয়ের ১০ জন শিক্ষার্থীর একাদশ শ্রেণিতে কে বা কারা যেন আবেদন করে নিয়েছে। যারাই এ কাজটি করেছে ঠিক করেনি। শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে খেলা করছে। তাদের মধ্যে দুইজন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। তারা যেকোনো ভালো কলেজে ভর্তি হতে পারবে। অন্য কলেজে আবেদন করার ফলে এখন তারা পছন্দের কলেজে ভর্তি আবেদন করতে পারছে না।

এদিকে দুর্গাপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. রুহুল আমিন বলেন, কে বা কারা শিক্ষার্থীদের ভর্তির আবেদন করেছে তা আমাদের জানা নেই। বিষয়টি মিথ্যা এবং বানোয়াট।

হাইমচর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোস্তফা কামাল জানান, প্রায় ১৫ জন শিক্ষার্থী জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দিয়েছে। আমরা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হয়েছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি। আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে যারা অভিযোগ করেছে তাদের রোল নম্বর এবং রেজিস্ট্রেশন নম্বর দেওয়া উচিত ছিল।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মে সালমা নাজনীন তৃষা জানান, কিছু শিক্ষার্থী আমার কাছে অভিযোগ দিয়েছে। তাদের অজান্তে কলেজে ভর্তি আবেদন করা কাজটি ঠিক হয়নি। আমরা তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। শিক্ষার্থীরা যাতে নিজেদের পছন্দের কলেজে ভর্তি হতে পারে আমরা সেই ব্যবস্থা করব।

চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল গত ১২ মে প্রকাশিত হয়েছে। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ফলের ভিত্তিতে অনলাইনে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি নেওয়া হচ্ছে। ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণির ভর্তির নীতিমালা প্রকাশ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নীতিমালা অনুযায়ী, অনলাইনে ভর্তির আবেদন শুরু হয়েছে ২৬ মে থেকে। তিন ধাপে আবেদন চলবে আগামী ১১ জুন পর্যন্ত।

এমএইচডি/এসএম