ঋণ বিতরণে ইংরেজিতে কঠিন শর্ত জুড়ে দিচ্ছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। অনেক সময় গ্রাহকরা না বুঝে টাকার প্রয়োজনে সেসব শর্ত মেনে নেন। তবে এবার ঋণ বিতরণে ব্যাংকগুলোকে যাবতীয় দলিল বাংলায় সম্পাদন করতে নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত। 

বুধবার (২৮ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতের বিচারক মুজাহিদুর রহমান এ আদেশ দেন। খেলাপি ঋণ আদায়ের ব্যাংকের দায়ের করা একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এ আদেশ দেন। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এই আদেশের কপি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এবং সভাপতি, অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বরাবর পাঠাতে বলেছেন আদালত।

রায়ের বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারী রেজাউল করিম। 

আদালত সূত্রে জানা যায়, ৪ লাখ ৩৬ হাজার ৪৮৫ টাকা খেলাপি ঋণ আদায়ের দাবিতে ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড চট্টগ্রামের চকবাজার শাখা ২০১৮ সালের ৯ অক্টোবর মামলাটি দায়ের করেন। মামলাটিতে ২০২০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর একতরফা সূত্রে ডিক্রি হয়। মামলার ১ ও ২ নম্বর বিবাদী ডিক্রিকৃত টাকার ১০ শতাংশ পে-অর্ডার দাখিল করে মিছ মামলা দায়ের করলে তা মঞ্জুর হয়। এরপর বিবাদীরা লিখিত বর্ণনা দাখিল করেন।

আদালতের আদেশে উল্লেখ করা হয়, বিবাদীরা ব্যাংকের নিকট থেকে ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল মঞ্জুরিপত্র মূলে মাসিক ৩৮ হাজার ৩৭৬ টাকা হারে ৪৮টি মাসিক কিস্তিতে পরিশোধের শর্তে ১২ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। ব্যাংক হিসাব বিবরণীতে ১২ লাখ টাকা বিতরণকৃত ঋণ দেখালেও লোন প্রসেসিং ফি এবং অন্যান্য চার্জ কেটে নিয়ে বিবাদীদের দেয় ১১ লাখ ৩৭ হাজার ২৪৪ টাকা। একজন ঋণ আবেদনকারীর কাছ থেকে প্রসেসিং ফির নামে ৩৬ হাজার টাকা কেটে রাখা ন্যায়সংগত নয়। ২২ দশমিক ৫ শতাংশ হারে সুদ আরোপ করার পর ঋণ আবেদনকারীর কাছ থেকে ডকুমেন্টেশন ফি আদায় করা অগ্রহণযোগ্য। ব্যাংকের এ সব সুপ্ত শর্তাবলি একজন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ঋণ আবেদনকারীর জন্য নিপীড়নমূলক। আবার ইংরেজি ভাষায় লিখিত দলিলাদিতে উল্লিখিত শর্তাবলি অধিকাংশ ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা ঋণ গ্রাহকদের জন্য সহজবোধ্য নয়। ঋণ প্রাপ্তি সহজীকরণ এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের হয়রানি রোধে নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা রাখা আবশ্যক। তাই লোন প্রসেসিং ফি এবং ডকুমেন্টেশন ফি এর নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা আদায় বন্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রতি সার্কুলার জারি করতে পারে।

এমআর/এমজে