নোবেলজয়ী হলেই আইনের ঊর্ধ্বে নয়
শ্রম আইন লঙ্ঘনকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠান প্রধান ড. ইউনূসের সাজা
কলকারখানা প্রতিষ্ঠান ও পরিদর্শন অধিদপ্তর পক্ষের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেছেন, ওনারা শুধু বলেন ড. ইউনূস নোবেল বিজয়ী। নোবেল বিজয়ী হিসেবে তো তার বিরুদ্ধে মামলা হয়নি। এখানে তার বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে লেবার ল’ ভায়োলেট হয়েছে। যা আদালত আমলে নিয়েছেন। কিছু হলেই তারা বলেন তিনি নোবেল বিজয়ী। নোবেলজয়ী হলেও তো আদালত ও আইনের ঊর্ধ্বে না।
শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। তবে আপিল করার শর্তে ড. ইউনূসসহ মামলার অপর আসামিদের ১ মাসের জামিন দেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
রায়ের পর কলকারখানা প্রতিষ্ঠান ও পরিদর্শন অধিদপ্তর পক্ষের আইনজীবী হিসেবে নিজের প্রতিক্রিয়ায় একথা বলেন খুরশীদ আলম খান।
সোমবার (১ জানুয়ারি) বিকেল ৩টার দিকে ঢাকার শ্রম আদালতের বিচারক শেখ মেরিনা সুলতানা এ রায় ঘোষণা করেন। এ মামলায় অন্য আসামিরা হলেন- গ্রামীণ টেলিকমের এমডি আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুরজাহান বেগম ও মো. শাহজাহান। তাদেরও ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে প্রত্যেককে ৩০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।
খুরশীদ আলম খান বলেন, আদালত তাদের শোকজ করেছেন, তারা জবাব দিয়েছেন, কিন্তু আদালত তাদের জবাব সন্তোষজনক মনে করেননি। তাদের যেসব ত্রুটি ছিল তা তারা সংশোধন করেননি। বরং সন্দেহাতীতভাবে আমরা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি যে তারা শ্রম আইন লঙ্ঘন করেছেন। বাদীপক্ষের চারজন সাক্ষী ও কিছু ডকুমেন্টসের মাধ্যমে প্রমাণও করেছি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নোবেল বিজয়ী হিসেবে নয়, প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে তার বিচার হয়েছে। আমরা প্রথম দিনেও আর্গুমেন্টে বলেছি। আমরা কোনো কিছু বললেই তারা বলেন নোবেল বিজয়ী। এখানে কিন্তু বিষয়টা নোবেল বিজয়ী না। আমরা কলকারখানা পরিদর্শনের ক্ষেত্রে কাগজে কলমে কোনো ডকুমেন্টস কিন্তু নোবেল বিজয় হিসেবে তাকে দেখিনি। তাকে আমরা দেখেছি প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে। শ্রম আইন লঙ্ঘন করার অপরাধে তার বিচার হচ্ছে। আমাদের সেই যুক্তিটা আদালত একসেপ্ট করেছেন।
জ্যেষ্ঠ এ আইনজীবী বলেন, কিছু হলেই তারা বলেন নোবেল বিজয়ী। নোবেল বিজয় হলেই তো আইনের ঊর্ধ্বে না। তিনি হতে পারেন নোবেল বিজয়ী। এটা তার ব্যক্তিগত অর্জন। প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে তিনি যে শ্রম আইন লঙ্ঘন করেছেন সেটি আমরা আদালতে উপস্থাপন করেছি। এক্ষেত্রে আমরা একবারও বলিনি যে নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসকে শাস্তি দেওয়া হোক। এ ধরনের কথা আমরা কখনোই বলিনি। বরং তারা ড. ইউনূসকে নোবেল বিজয়ী বলেই সাধারণ জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চাচ্ছেন। সরকারের পক্ষে কলকারখানা প্রতিষ্ঠান ও পরিদর্শন অধিদপ্তর নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসকে হয়রানি করছে এবং সে উদ্দেশ্যে মামলাটি করা হয়েছে- এমন অভিযোগ আমরা বারবার অস্বীকার করেছি। আজকে আদালতের পর্যবেক্ষণেও আসছে যে, আজকে যার রায় হলো সেটি কোনো নোবেল বিজয়ীর বিরুদ্ধে না। শ্রম আইন ভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে।
রায় চলাকালীন অবস্থায় ড. ইউনূসের পক্ষের আইনজীবী বারবার ডিসপিউট দিয়েছেন, জানতে চাইলে দুদক আইনজীবী বলেন, রায় চলাকালীন সময়ে আদালতকে বারবার বিরক্ত করা, এটা আমি আগে কখনো দেখি নাই। আমরা সুপ্রিম কোর্ট, আপিল বিভাগ, হাইকোর্ট বিভাগ এমনকি বিচারিক আদালতে যখন রায়ের জন্য দিন ধার্য থাকে সেদিন বসে থাকি। আর আদালতের রায়টা রিসিভ করি। আমরা অত্যন্ত লজ্জিত, লজ্জা পাচ্ছি, একজন আইনজীবী তার মক্কেলের জন্য বারবার আদালতকে ডিস্টার্ব করছিলেন। আপনারা খেয়াল করলে দেখবেন আদালত কিন্তু তার ওপর অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন। এরইমধ্যে রায় হয়ে গেছে। রায় হওয়ার পরে উনি কীভাবে বলতে পারেন, আমার এটা নিতে হবে ওটা নিতে হবে। এটাতো আদালতে ডিসিশন আদালত কোনটা নেবে কি নেবে না। এই ক্ষেত্রে বারবার আদালতকে ইন্টারফেয়ার করা বিচারিক অশোভনীয়।
জেইউ/জেডএস