ভাইয়ের শোকে কান্নায় ভেঙে পড়লেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু
প্রখ্যাত সাংবাদিক তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া। তার বড় ছেলে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, ছোট ছেলে সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। ১৯৬৯ সালে মানিক মিয়ার মৃত্যুর পর তার দুই ছেলে পত্রিকা পরিচালনার দায়িত্ব নেন। পত্রিকা পরিচালনা ও মালিকানা নিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে বিরোধ চলেছে দীর্ঘদিন। ইত্তেফাক ভবনে একাধিক খুনের ঘটনাও ঘটে। ২০১০ সালের ২ মে তাদের বিরোধের অবসান ঘটে। সমঝোতার মাধ্যমে ইত্তেফাকের মালিকানা পান আনোয়ার মঞ্জু ও তার বোন। ব্যারিস্টার মইনুল পান ভবনটির মালিকানা, ১০ কোটি টাকা ও কিছু অস্থাবর সম্পত্তি।
গতকাল মারা যান ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন। আজ সুপ্রিম কোর্টে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার পূর্বে সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে আহ্বান করা হয় তার ভাই সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করার জন্য। মাইক্রোফোন হাতে নিয়েও তিনি কিছু বলতে পারেননি। এ সময় ভাইয়ের জন্য কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর আনোয়ার হোসেন মঞ্জু তাকে দেখতে গিয়েছিলেন। সেদিনও দুই০ ভাই একে অপরকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন।
রোববার দুপুরে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের জানাজা সম্পন্ন হয়। দুপুর ২টায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি প্রাঙ্গণে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
আরও পড়ুন
জানাজায় ইমামতি করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মসজিদের ইমাম মুফতি আবু জাফর।
জানাজার পূর্বে বক্তব্য রাখেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, সুপ্রিম কোর্ট বার সভাপতি মোমতাজ উদ্দিন ফকির, মইনুল হোসেনের ভাই আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, বড় ছেলে জাবেদ হোসাইন।
জানাজায় আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগে বিভাগের বিচারপতিবৃন্দ, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেলবৃন্দ, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার এম আমীর উল ইসলাম, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সুপ্রিম কোর্ট বারের সম্পাদক আবদুন নূর দুলাল প্রমুখ।
বিপুল সংখ্যক আইনজীবী জানাজায় অংশগ্রহণ করেন। জানাজা শেষে তার কফিনে ফুলেল শ্রদ্ধা জানানো হয়। জানাজা শেষে আজিমপুর কবরস্থানে বাবা মায়ের পাশে তাকে দাফন করা হয়।
এর আগে গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন।
ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন ২০০৭ সালে ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে তথ্য, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত এবং ভূমি মন্ত্রণালয় এর দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালের ৮ জানুয়ারি তিনি বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকার থেকে পদত্যাগ করেন।
মইনুল হোসেন ১৯৭৩ সালে পিরোজপুর থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনের মাধ্যমে বাংলাদেশে বাকশাল প্রচলন করলে তিনি তার পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন। শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুর পরে তিনি খন্দকার মোশতাক আহমেদ পরিচালিত দল ডেমোক্র্যাটিক লীগে যোগ দেন এবং ৩ নভেম্বর মোশতাক সরকারের পতন পর্যন্ত তিনি ডেমোক্র্যাটিক লীগেই ছিলেন। বাংলাদেশের সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতি হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি হিসেবে ২০০০-২০০১ মেয়াদে নির্বাচিত হন।
বিখ্যাত সাংবাদিক তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া তার পিতা। তিনি ১৯৬১ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয় নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। তারপর মিডল টেম্পল এ আইন বিষয়ক পড়াশোনা করেন। ১৯৬৫ সালে বার থেকে ব্যারিস্টার-ইন-ল ডিগ্রি অর্জন করেন।
এমএইচডি/এসকেডি