নারায়ণগঞ্জ শহরের ২ নং বাবুরাইল এলাকায় একই পরিবারের পাঁচজনকে হত্যার ঘটনায় একমাত্র আসামি মাহফুজকে দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট।

বুধবার বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। 

রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পী। সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. শামীম খান, ফারহানা রুনা। আসামির পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। 

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পী রায়ের বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে ২০১৭ সালের ৭ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ শহরের ২নং বাবুরাইল এলাকায় আলোচিত পাঁচ হত্যা মামলার রায়ে একমাত্র আসামি মাহফুজকে মৃত্যুদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক বেগম হোসনে আরা আকতার এ রায় ঘোষণা করেন।

রায় ঘোষণার সময় মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামি মাহফুজ আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিল। পরে মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস চেয়ে হাইকোর্টে আপিল করেন আসামি।

২০১৬ সালের ১৫ জানুয়ারি পরকীয়া সম্পর্কের জের ধরে মাহফুজ একই পরিবারের দুই শিশুসহ পাঁচজনকে হত্যা করেন।

মামলার বিবরণে জানা যায়, রাজধানীর কলাবাগান এলাকার বস্তিতে শফিকুল ইসলাম স্ত্রী তাছলিমা, দুই সন্তান সুমাইয়া ও শান্ত, শ্যালক মোরশেদুল ও তার স্ত্রী লামিয়াকে নিয়ে এক সঙ্গে বসবাস করতেন। ওই সময় শফিকুলের ছোট ভাইয়ের স্ত্রী লামিয়ার সাথে তার ভাগ্নে মাহফুজের পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিষয়টি জানাজানি হলে মাহফুজকে পারিবারিক বিচার সালিশে জুতা পেটা করে মামা শফিকুল তার বাড়িতে আসা বন্ধ করে দেয়।

এরপর তারা ওই বস্তি ছেড়ে নারায়ণগঞ্জ শহরের ২নং বাববুরাইল এলাকায় ভাড়া বাসায় উঠেন। ২০১৬ সালের ১৫ জানুয়ারি রাতে মাহফুজ লামিয়ার সঙ্গে দেখা করতে গোপনে শফিকুলের বাবুরাইল এলাকার ভাড়া বাসায় ঢুকে খাটের নিচে লুকিয়ে থাকে। ওই রাতে শফিকুল বাসায় ছিলেন না। গভীর রাতে তাসলিমার ভাই মোশারফ বাথরুমে যাওয়ার সময় মাহফুজকে দেখতে পেয়ে রেগে যায়। এ সময় মাহফুজ ক্ষিপ্ত হয়ে মসলা বাটার পুঁতা দিয়ে মোশারফকে মাথায় আঘাত করে হত্যা করে।

শব্দ শুনে তাসলিমা ঘুম থেকে ওঠে এগিয়ে আসলে তাকেও মাহফুজ পাথর দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে। এরপর মাহফুজ একে একে তাসলিমার জা’ লামিয়া, মেয়ে সুমাইয়া ও ছেলে শান্তকে হত্যা করে সকালে বাসা থেকে পালিয়ে যায়। ১৫ জানুয়ারি মধ্য রাত থেকে ১৬ জানুয়ারি ভোর পর্যন্ত মাহফুজ এ হত্যাকাণ্ড ঘটায়।

১৬ জানুয়ারি রাতে আত্মীয়স্বজন বেড়াতে এসে সাড়াশব্দ না পেয়ে প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় তালা ভেঙে বাসার ভেতরে প্রবেশ করে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লাশ দেখতে পায়। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে পাঁচটি মরদেহ উদ্ধার করে।

১৭ জানুয়ারি শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে সদর থানায় হত্যা মামলা করলে পুলিশ সন্ধ্যায় মাহফুজকে গ্রেপ্তার করে। ওই রাতেই মামলাটি জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) এর কাছে হস্তান্তর করা হয়। মামলায় ভাগ্নে মাহফুজ, ঢাকা কলাবাগানের নাজমা ও শাহজাহানের নাম উল্লেখ করে সন্দেহজনক আসামি করা হয়। মাহফুজ ও নাজমাকে গ্রেপ্তার করা হলে ২১ জানুয়ারি মাহফুজ হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেয়। তদন্ত শেষে ডিবি পুলিশ একমাত্র আসামি হিসেবে মাহফুজকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। 

এমএইচডি/এসকেডি