অ্যাটর্নি জেনারেল
ক্যান্টনমেন্টের সঙ্গে তুলনা করে আদালতের ক্ষতি করছেন শাহদীন মালিক
‘সুপ্রিমকোর্টটা মোটামুটি ক্যান্টনমেন্ট হয়ে গেছে’ এমন মন্তব্য করে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক আদালতকে ম্যালাইন (ক্ষতিকর) করছেন বলে মনে করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন।
তিনি বলেন, অনেকেই আদালতকে ম্যালাইন করার চেষ্টা করছেন উনিও (শাহদীন মালিক) সেই দলে নাম লেখালেন।
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার অ্যাটর্নি জেনারেল তার নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, এখানে উনার (শাহদীন মালিক) অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে। এটা উনি ভালো উদ্দেশ্যে বলেননি।
গত মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীতে মৌলিক অধিকার সুরক্ষা কমিটি’ আয়োজিত 'আবারও সাজানো নির্বাচন : নাগরিক উৎকণ্ঠ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে ড. শাহদীন মালিক সুপ্রিমকোর্টকে ক্যান্টনমেন্ট বলে মন্তব্য করেন।
ড. শাহদীন মালিক বলেন, ‘গেটে পুলিশ গাড়ি থামাল। আমাকে কাচ নামাতে বলল। কোর্টের ড্রেস পরা ছিলাম, ব্যান্ড ছিল, কালো কোট ছিল। গাড়িতে পার্কিং স্টিকারও আছে। আমি তাদের বললাম, আমি যতদূর জানি আমি বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টে এসেছি, আমি তো ক্যান্টনমেন্টে আসিনি। ক্যান্টনমেন্টে গেলে গাড়ি থামিয়ে চেক করবে, জিজ্ঞাসা করতে পারে। আমি তো সুপ্রিমকোর্টে এসেছি। গত কয়েকদিনে প্রত্যেক দিন গাড়ি থামাচ্ছে। আর যারা মোটরসাইকেল নিয়ে যায় তাদের সব দেখাতে হয়। কালকে সুপ্রিমকোর্টে গিয়ে দেখলাম লোকজন অনেক কমে গেছে। ন্যায় বিচারের একমাত্র গ্যারান্টি হলো এটা হবে ওপেন প্রসেসে। এখন সুপ্রিমকোর্টে ঢুকতে যদি আমাকে কার্ড দেখাতে হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের কী অবস্থা! আমি বলব সুপ্রিমকোর্টটা মোটামুটি ক্যান্টনমেন্ট হয়ে গেছে।’
আরও পড়ুন
ড. শাহদীন মালিকের এমন মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সুপ্রিমকোর্টের একজন আইনজীবী অভিযোগ তুলেছেন, তিনি যখন গেট দিয়ে ঢুকছিলেন তখন তাকে তল্লাশি করা হয়েছে। তিনি গাউন পরা ছিলেন তারপরও তাকে তল্লাশি করা হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আমি স্পষ্ট করে জানাতে চাই, গত ৩১ অক্টোবর সুপ্রিমকোর্টে আইনশৃঙ্খলার বিষয় নিয়ে একটা সভা হয়, সেখানে অনেকগুলো সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তার মধ্যে একটি ছিল, আইনজীবী সমিতির স্টিকার ব্যতীত কোনো গাড়ি সুপ্রিমকোর্টে ঢুকতে পারবে না। তাহলে প্রথম কথা হচ্ছে, আইনজীবী সমিতির সদস্য হিসেবে ওনার গাড়িতে কি স্টিকার লাগানো ছিল? অবশ্যই ছিল না। স্টিকার লাগানো থাকলে অবশ্যই চেক করা হতো না।
দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, কোন কোন গেট দিয়ে ঢুকতে পারব, কোনটা দিয়ে পারবে না, কোন গেট বেলা ১১টা পর্যন্ত খোলা থাকবে, কোনটা বন্ধ থাকবে, কোনটা সারাদিন খোলা থাকবে তা বলা আছে। প্রবেশের ক্ষেত্রে তল্লাশি করা হবে সেটাও স্পষ্ট করে লেখা আছে।
তিনি বলেন, শুধু আমরা না, প্রতিবেশী দেশ ভারত, পাকিস্তানসহ বিশ্বের যে কোনো দেশের সুপ্রিমকোর্টে চাইলেই কেউ এভাবে ঢুকতে পারে না। ঢুকতে হলে পাস নিতে হয়, কী উদ্দেশ্যে যাবেন তা জানাতে হয়। সুপ্রিমকোর্ট অঙ্গনে অতিরিক্ত গাড়ি ঢুকায় বিচারপতিসহ সকলের জন্য সমস্যা হয়, যে কারণে ওই দিন এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
আরেকটি কথা হলো, উনি (শাহদীন মালিক) দীর্ঘ দিন ধরে আইন পেশায় আছেন, আমি উনাকে অনুরোধ করব গাউনটা কিন্তু আদালতের বাইরে কোথাও পরতে নেই। আমরা যখন আদালতের ভেতরে প্রবেশ করি তখনই কিন্তু গাউন পরি, অন্য সময় গাউন পরার নিয়ম নেই। আমাদের প্রচলিত ঐতিহ্য কখনো রাস্তাঘাটে গাউন পরে কেউ ঘুরে না।
এক প্রশ্নের জবাব অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, উনি যে মন্তব্য করেছেন সেখানে তার অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে। এটা তিনি ভালো উদ্দেশ্য বলেননি। আদালতকে অনেকেই ম্যালাইন (ক্ষতি) করার চেষ্টা করছেন, উনিও সেই দলে নাম লেখালেন।
গত ২০ নভেম্বর এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে জানানো হয়, বিনা প্রয়োজনে কোর্ট অঙ্গনে প্রবেশ করলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এজন্য সুপ্রিমকোর্টে সব প্রবেশ গেটে তল্লাশির ব্যবস্থা চালু করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বিনা প্রয়োজনে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে প্রবেশ না করার জন্য বলা হলো। জরুরি প্রয়োজনে কেউ প্রবেশ করলে স্ব স্ব জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা পাসপোর্ট সঙ্গে রাখার জন্য বলা হলো। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি কর্তৃক সরবরাহকৃত নির্ধারিত স্টিকার ছাড়া গাড়ি প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হলো। অন্যথায় অবৈধ অনুপ্রবেশকারী গণ্যে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
গত ৩১ অক্টোবর সুপ্রিমকোর্টে প্রবেশের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো নিয়ে বৈঠক করে সুপ্রিমকোর্টে নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিশেষ কমিটি। ওই বৈঠকে সুপ্রিমকোর্ট অঙ্গনে প্রবেশের ক্ষেত্রে কড়াকড়ির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
এমএইচডি/এসকেডি