জামায়াতের মিছিল-মিটিং করার সুযোগ নেই : তানিয়া আমীর
রিটকারী পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর বলেছেন, নিবন্ধন বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াতের আপিল খারিজ হয়ে যাওয়ায় দলটির আর কোনো অস্তিত্ব থাকল না। তাই জামায়াত আজ থেকে কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারবে না। কোনো মিছিল মিটিং করতে পারবে না।
তিনি বলেন, যদি জামায়াত কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে তাহলে আমরা আদালত অবমাননার আবেদন নিয়ে আপিল বিভাগে যাব।
বিজ্ঞাপন
রোববার (১৯ নভেম্বর) আপিল বিভাগের আদেশের পর সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে, আজ জামায়াতে ইসলামীর আপিল খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। ফলে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলে হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছিলেন তা বহাল রয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
২০১৩ সালে জামায়াতকে দেওয়া নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন অবৈধ বলে রায় দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
আরও পড়ুন
বার বার সময় দেওয়ার পরও জামায়াতের আইনজীবীরা আপিল শুনানিতে অংশ না নেওয়ায় আজ প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ দলটির আপিল খারিজ করে আদেশ দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর ও অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম।
আজ শুনানির শুরুতে জামায়াতের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলীর পক্ষে সময় প্রার্থনা করেন অ্যাডভোকেট জিয়াউর রহমান। তখন আপিল বিভাগ বলেন, আপনাদের সময় আবেদন খারিজ করা হলো। একই সঙ্গে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল ‘ডিসমিস ফর ডিফল্ট’ ঘোষণা করছি।
মূল মামলার আপিল খারিজ হয়ে যাওয়ায় দলটির মিছিল-সমাবেশসহ সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে করা আবেদন এবং জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন গ্রহণ করেননি সর্বোচ্চ আদালত।
উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক দলগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় আনে নির্বাচন কমিশন। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় নিবন্ধিত দলগুলোই কেবল নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে। ওই বছরের ৪ নভেম্বর জামায়াতে ইসলামীকে নিবন্ধন দেয় নির্বাচন কমিশন।
এর কয়েক মাস পর ২০০৯ সালের ২৫ জানুয়ারি জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ ২৫ ব্যক্তি।
২ দিন পর ২০০৯ সালের ২৭ জানুয়ারি রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক (পরে প্রধান বিচারপতি) ও বিচারপতি মো. আবদুল হাইয়ের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল জারি করেন। ছয় সপ্তাহের মধ্যে বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
রুলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯০ (বি) (১) (বি) (২) ও ৯০ (সি) অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়।
রুল জারির পর ওই বছরের ডিসেম্বরে একবার, ২০১০ সালের জুলাই ও নভেম্বরে দুইবার এবং ২০১২ সালের অক্টোবর ও নভেম্বরে দুইবার তাদের গঠনতন্ত্র সংশোধন করে নির্বাচন কমিশনে জমা দেয় জামায়াত। এসব সংশোধনীতে দলের নাম ‘জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ’ পরিবর্তন করে ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’ করা হয়।
পরে ২০১৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি রিট আবেদনকারীরা রুল শুনানির জন্য বেঞ্চ গঠন করতে প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন করেন। এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ৫ মার্চ আবেদনটি বিচারপতি এম মোয়াজ্জাম হোসেনের নেতৃত্বাধীন দ্বৈত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠানো হয়। ১০ মার্চ সাংবিধানিক ও আইনের প্রশ্ন জড়িত থাকায় বৃহত্তর বেঞ্চে শুনানির প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে আবেদনটি প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠানোর আদেশ দেন দ্বৈত বেঞ্চ। ওইদিন প্রধান বিচারপতি তিন বিচারপতির সমন্বয়ে বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করে দেন।
২০১৩ সালের ১২ জুন ওই রুলের শুনানি শেষ হলে যেকোনো দিন রায় দেবেন বলে জানিয়ে অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন হাইকোর্টের বৃহত্তর (লার্জার) বেঞ্চ।
পরে ২০১৩ সালের ১ আগস্ট জামায়াতকে দেওয়া নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধন সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে অবৈধ বলে রায় দেন বিচারপতি এম মোয়াজ্জেম হোসেন, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল-হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বৃহত্তর (লার্জার) বেঞ্চ।
এ রায়ের ভিত্তিতে ২০১৮ সালের ৭ ডিসেম্বর জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে নির্বাচন কমিশন।
হাইকোর্টের রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে জামায়াতের করা আবেদন একই বছরের ৫ আগস্ট খারিজ করে দেন আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। পরে একই বছরের ২ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে জামায়াতে ইসলামী আবার আপিল করে। ওই আপিল শুনানিতে উদ্যোগ নেয় রিটকারী পক্ষ। সে অনুসারে আপিলটি চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি কার্যতালিকায় ওঠে।
এরপর ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় এগিয়ে আজ আপিলটি খারিজ করা হলো।
এমএইচডি/এসএম