জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে বিবাহিত ও অন্তঃসত্ত্বা ছাত্রীরা আবাসিক সিট পাবে না— এ সংক্রান্ত নোটিশ আগামী ১ মার্চ পর্যন্ত স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে বিবাহিত ও অন্তঃসত্ত্বা ছাত্রীদের হল ছাড়তে নোটিশ কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।

মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিকতা লাভ ও বসবাসের শর্তাবলী এবং আচরণ ও শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালা ২০২১ এ নারী-পুরুষ, বিবাহিত-অবিবাহিত নিয়ে যেসব বৈষম্যমূলক বিধান রয়েছে, তা আগামী ১ মার্চের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে। শিক্ষা সচিব, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যানকে এই প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার সারা হোসেন। সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট আইনুন্নাহার সিদ্দিকা ও অ্যাডভোকেট আয়েশা আক্তার।

রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশ গুপ্ত।

এর আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে বিবাহিত ও অন্তঃসত্ত্বা ছাত্রীদের হল ছাড়তে নোটিশ চ্যালেঞ্জ করে রিট করে ব্লাস্ট, নারীপক্ষসহ ৭টি সংগঠন।

গত ২৭ সে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ছাত্রীরা আবাসিক সিট পাবে না— এ সংক্রান্ত বিধান বাতিল করতে জবি কর্তৃপক্ষকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, রেজিস্ট্রারসহ সংশ্লিষ্টদের এ নোটিশ পাঠানো হয়।

নোটিশে বলা হয়, সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে জানতে পারি, বিবাহিত ও গর্ভবতী হওয়ার কারণে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ছাত্রীরা আবাসিক সিট পাবে না বলে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে আবাসিকতা লাভ ও বসবাসের শর্তাবলী এবং আচরণ ও শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালা ২০২১ এর ১৭ নম্বর ধারা মোতাবেক বিবাহিত ও গর্ভবতী ছাত্রীরা আবাসিক সিট পাবে না। বিধায় তারা অতি দ্রুত হলের সিট ছেড়ে দেবে। অন্যথায়, তাদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এই মর্মে গত ২৫ সেপ্টেম্বর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

এই নোটিশের ফলে কার্যত বিবাহিত ও গর্ভবতী ছাত্রীরা হলের আবাসিক সুবিধা গ্রহণ করে উচ্চ শিক্ষা অর্জনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে। এছাড়া বিষয়টি নিয়ে বর্তমানে ছাত্রীদের মধ্যে মারাত্মক অসন্তোষ এবং ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। দেশের একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন বৈষম্যমূলক বিধান থাকার বিষয়টি প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে।

নোটিশে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং ২৮ (১) (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারীপুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করিবে না। রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারীপুরুষের সমান অধিকার লাভ করিবেন। বিবাহিত ও গর্ভবতী ছাত্রীদের জন্য এমন নিয়ম নারীদের উচ্চশিক্ষা অর্জনের পথে অন্তরায় এবং বাংলাদেশের সংবিধানের ২৭ ও ২৮ অনুচ্ছেদের সাথে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক।’

নোটিশে পাওয়ার পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে নারী শিক্ষার্থীদের প্রতি বৈষম্যমূলক বিধানটি বাতিল করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়।

এমএইচডি/এমএ