সুপ্রিম কোর্ট-প্রধান বিচারপতির বাসভবন বিশেষ জোন ঘোষণার সুপারিশ
প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনাকে বিচার বিভাগের ওপর আঘাত বলে মনে করেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা। তারা এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। একইসঙ্গে এ ধরনের ঘৃণ্য ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কয়েকটি সুপারিশ করেছেন তারা।
সোমবার (৩০ অক্টোবর) সুপ্রিম কোর্টের জাজেজ লাউঞ্জে বিচারপতিদের জরুরি মতবিনিময় সভায় এ সুপারিশ করা হয়। বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বিজ্ঞাপন
সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে জরুরি ভিত্তিতে এ মতবিনিময় সভা ডাকা হয়। মতবিনিময় সভায় আপিল বিভাগের একজন ও হাইকোর্ট বিভাগের ১৫ জনের মতো বিচারপতি তাদের মতামত তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন। সভা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, মতবিনিময় সভায় কয়েকজন বিচারপতি তাদের বক্তব্যে বলেন, রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের মধ্যে বিচার বিভাগ অন্যতম। বিচার বিভাগের প্রধান হলেন প্রধান বিচারপতি। প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা করার অর্থ হলো বিচার বিভাগে আঘাত করা। এটা বিচার বিভাগকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র। স্বাধীনতার পর প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার মতো ঘৃণ্য ঘটনা এটাই প্রথম। এই হামলার সঙ্গে যারাই জড়িত তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে।
আরও পড়ুন
সভায় একাধিক বিচারপতি প্রশ্ন তুলে বলেন, প্রধান বিচারপতির বাসভবনের হামলার সময় দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কেন তাৎক্ষণিক কোনো পদক্ষেপ নেননি। নিরাপত্তা দায়িত্বে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
সভায় প্রধান বিচারপতিসহ সব বিচারপতিদের বাসভবন, সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় নিরাপত্তা জোরদারের সুপারিশ করা হয়। বলা হয়, এই এলাকায় প্রধান বিচারপতি, বিচারপতি, মন্ত্রী পরিষদের সদস্যরা, পুলিশ কমিশনারসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা বাস করেন। তাই এই এলাকাকে বিশেষ জোন হিসেবে ঘোষণা করার সুপারিশ করা হয়। হরতালের মতো রাজনৈতিক কর্মসূচির দিনে বিশেষ পুলিশ মনিটরিং টিম রাখা, বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা, সুপ্রিম কোর্ট ও বিচার বিভাগের মর্যাদা যেন ক্ষুণ্ন না হয় সে বিষয়ে বিশেষ নজর দেওয়ার সুপারিশ করা হয়।
সভা সূত্র আরও জানায়, প্রধান বিচারপতির বাসভবনের হামলার ঘটনায় সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. গোলাম রব্বানীর নেতৃত্বে গঠিত কমিটিও সভায় প্রধান বিচারপতির বাসভবনে নিরাপত্তা জোরদারের সুপারিশ করেছেন।
সূত্র জানায়, বিচারপতিদের বক্তব্যে উঠে আসা সুপারিশ ও রেজিস্ট্রার জেনারেলের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির সুপারিশগুলো নিয়ে আগামীকাল (মঙ্গলবার) বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। আপিল বিভাগের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্ব গঠিত সুপ্রিম কোর্ট নিরাপত্তা সংক্রান্ত কমিটি এ বৈঠক করবেন। পরে এই কমিটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে চূড়ান্ত সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেবেন বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, ২৮ অক্টোবর বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও জামায়াতে ইসলামী ঢাকায় সমাবেশ করে। দুপুরের পর কাকরাইল এলাকায় বিএনপির সমাবেশে আসা লোকজনের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সমাবেশগামী লোকজনের সংঘর্ষ হয়। এসময় প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনা ঘটে।
এরপর পুলিশ বড় ধরনের অ্যাকশনে যায়। সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার শেল ছুড়ে তারা বিএনপি নেতাকর্মীদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়া শুরু করে। এক পর্যায়ে ধাওয়া দিয়ে তারা নয়াপল্টনের মহাসমাবেশও পণ্ড করে দেয়। ধাওয়া খেয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা চারদিকে ছড়িয়ে পড়েন। পরে নয়াপল্টন, পুরানা পল্টন মোড় ও আশপাশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপি-পুলিশ-আওয়ামী লীগের সংঘর্ষ হয়।
এসব ঘটনায় বিএনপির বহু নেতাকর্মীর পাশাপাশি অনেক পুলিশ সদস্য ও সাংবাদিকরা আহত হন। নয়াপল্টন এলাকায় এক পুলিশ সদস্যকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। একইসময় আরও এক পুলিশ সদস্যকে লাঠি দিয়ে গণপিটিুনি দেওয়া হয়। এ ঘটনায় এক যুবদলকর্মী নিহত হয়েছেন বলে বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।
এমএইচডি/এসএম