প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার অভিযোগে রমনা থানায় দায়ের করা মামলায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে কারাগারে পাঠানো নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। বিএনপি মহাসচিবের বিরুদ্ধে দায়ের করা এ মামলাকে সাজানো রাজনৈতিক মামলা হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা।

আদালতে দীর্ঘ আধা ঘণ্টার শুনানিতে বিভিন্ন যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে মির্জা ফখরুলের জামিনের আবেদন করেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। অন্যদিকে তার জামিন আবেদনের বিরোধিতা করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। শুনানির একপর্যায়ে এজলাসের ভেতরেই যুক্তিতর্কের সময় রাষ্ট্রপক্ষ ও বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের হট্টগোল করতেও দেখা যায়।

পরে উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শফি উদ্দিন জামিন নামঞ্জুর করে মির্জা ফখরুলকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

রোববার (২৯ অক্টোবর) রাতে মির্জা ফখরুলকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক হুমায়ুন কবীর খান।

বিএনপিপন্থি আইনজীবী অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক ফারুকী গণমাধ্যমকে বলেন, প্রধান বিচারপতির বাসভবন ভাঙচুর করা হয়েছে। তবে সেখানে বিএনপি নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করেনি। প্রধান বিচারপতির বাসভবন ভাঙচুরকে ইস্যু করে সেই মামলায় একজন স্বচ্ছ রাজনীতিবিদ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ মামলাটি একটি সাজানো রাজনৈতিক মামলা। আমরা মহামান্য আদালতের কাছে জামিনের জন্য আবেদন করেছিলাম। কিন্তু দুই পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনে তাকে জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। 

অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবদুল্লাহ আবু বলেন, একটি গণতান্ত্রিক সরকারের কাজে বাধাগ্রস্ত করতে দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত যেন না থাকে সেই চক্রান্ত করছে বিএনপি। ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশের সময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ইন্ধনে দেশের ইতিহাসে প্রথম প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা চালায় বিএনপির নেতাকর্মীরা। 

তিনি বলেন, একজন পুলিশকে কীভাবে হত্যা করা হয়েছে যা সবাই দেখেছেন। বিএনপির নেতাকর্মীদের হামলায় শুধু পুলিশ নয়, সাংবাদিকরাও রক্ষা পাননি। মহামান্য আদালত আমাদের সব কথা শোনার পর মির্জা ফখরুলকে জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।

এর আগে, শনিবার (২৮ অক্টোবর) বিএনপির মহাসমাবেশ চলাকালে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগে রমনা থানায় বাদী হয়ে মামলা দায়ের করে পুলিশ। মামলায় মির্জা ফখরুল ছাড়াও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসসহ ৫৯ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।

ফখরুল-আব্বাস ছাড়াও মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, আব্দুল আওয়াল মিন্টু, আহমেদ খান, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, নিতাই রায় চৌধুরী, শামসুজ্জামান দুদু, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম, ভিপি জয়নাল, মহানগর উত্তর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ফরহাদ হালিম ডোনার ও সদস্য সচিব আমিনুল হক।

রোববার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে গুলশানের বাসা থেকে মির্জা ফখরুলকে তুলে নিয়ে যায় ডিবি পুলিশ। তখন বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, সকাল ৯টার আগে থেকে মহাসচিবের গুলশানের বাসার সামনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নেন। পরে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তাকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।

পরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) ড. খ মহিদ উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, শনিবার মহাসমাবেশের ডাক দিয়ে শর্ত ভঙ্গ, পুলিশ হত্যা, নাশকতা-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটিয়েছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। এসব ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের উদ্দেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে আটক করা হয়।

এনআর/কেএ