দেশে করোনাভাইরাস মহামারির সেকেন্ড ওয়েভ বা দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। এর প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশের আইন অঙ্গনেও। একের পর এক আক্রান্ত হচ্ছেন উচ্চ আদালতের আইনজীবীরা।

মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ে নব নির্বাচিত সুপ্রিম কোর্ট বার সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন খসরুসহ ১৫ জন আইনজীবী আক্রান্ত আছেন। বর্তমানে তারা বাড়িতে এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি সূত্র ও ঢাকা পোস্টের অনুসন্ধানে আইনজীবীদের করোনা আক্রান্তের এ চিত্র উঠে এসেছে।

সাবেক আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু গত ১৫ মার্চ সংসদ সচিবালয়ে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দেন। ১৬ মার্চ সকালে রিপোর্টে তার করোনা পজিটিভ আসে। ওইদিনই তাকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়। গত ২৮ মার্চ রাত ১২টার দিকে আব্দুল মতিন খসরুকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। পরে ১ এপ্রিল করোনা পরীক্ষায় নেগেটিভ আসে। গত ৩ এপ্রিল অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন খসরুকে সিএমএইচের আইসিইউ থেকে সাধারণ কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। ৬ এপ্রিল সকালে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে পুনরায় তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। এখনও তিনি আইসিইউতে চিকিৎসাধীন আছেন।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট সৈয়দ হায়দার আলী গত ৭ এপ্রিল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেলের (ঢামেক) চিকিৎসক মোজাফফর আহমদের তত্ত্বাবধানে মিরপুরের নিজ বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তিনি নিজেই ঢাকা পোস্টকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের দুজন বিশিষ্ট আইনজীবী। তারা হলেন, অ্যাডভোকেট আজহার উল্লাহ ভূঁইয়া ও ব্যারিস্টার সাজ্জাদ হোসেন। অ্যাডভোকেট আজহার উল্লাহ ভূঁইয়া শিকদার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ব্যারিস্টার সাজ্জাদ হোসেন নিজ বাসায় একজন চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে আছেন। গত ৪ এপ্রিল অ্যাডভোকেট আজহার উল্লাহ ভূঁইয়া করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ৭ এপ্রিল তাকে শিকদার মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

গত ৬ এপ্রিল ব্যারিস্টার সাজ্জাদ হোসেনের করোনা পরীক্ষার ফল পজিটিভ এসেছে। বর্তমানে সাজ্জাদ হোসেন ও তার মা সেগুনবাগিচার বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

এদিকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের কেন্দ্রীয় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট আবুল খায়ের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। গত ২৮ মার্চ তার শরীরে তার করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। বর্তমানে তিনি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির আরেক সাবেক সহ-সভাপতি মুহাম্মদ আসাদ উল্ল্যাহ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। গত ৩১ মার্চ তার করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ  আসে। তিনি বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শহীদুজ্জামান গত ২২ মার্চ সপরিবারে করোনায় আক্রান্ত হন। তিনি কমফোর্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বর্তমানে বাসায় অবস্থান করছেন।

ব্যারিস্টার মাহিন এম রহমান ও তার স্ত্রী ব্যারিস্টার ফারজানা ছাত্তার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। মাহিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আইডিসিআরে নমুনা দিয়েছিলাম। গত ৫ এপ্রিল আমার ও স্ত্রী ফারজানা ছাত্তারের করোনা টেস্টের ফল পজিটিভ এসেছে। আমরা বাসায় থেকেই আসগর আলী হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সরোয়ার ই আলমের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিচ্ছি।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সুমন বণিক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। গত ৭ এপ্রিল তার করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসে। তিনি বর্তমানে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বাসায় আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

এছাড়াও, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার হুমায়ুন কবীর পল্লব ও অ্যাডভোকেট একলাস উদ্দিন ভূঁইয়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তিনিও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বাসায় আছেন। গত ৫ এপ্রিল ব্যারিস্টার পল্লবের করোনা শনাক্ত হয়।

আইনজীবী একলাস উদ্দিন ভূঁইয়ার গত ৩১ মার্চ করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। তিনি বলেন, করোনা আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছি।

বৃহত্তর ময়মনসিংহ সুপ্রিম কোর্ট যুব আইনজীবী কল্যাণ সমিতির আহ্বায়ক দেওয়ান হুমায়ুন কবির রিপন ও যুগ্ম আহবায়ক রুহুল আমিন শিকদার করোনায় আক্রান্ত হয়ে নিজ নিজ বাসায় চিকিৎসা গ্রহণ করছেন। এছাড়া সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সোহেল রানা করোনায় আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর শাহবাগের বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

এদিকে করোনার নতুন ঢেউয়ে মারা গেছেন সুপ্রিম কোর্টের ৩ জন আইনজীবী। তারা হলেন- আইনজীবী মমতাজ আলী ভূঁইয়া (৮০) ব্যারিস্টার তানভীর পারভেজ (৪৭) ও অ্যাডভোকেট রশিদ আহমেদ (৫১) মারা গেছেন।

এমএইচডি/এমএইচএস