পিকে হালদারের মামলার রায়
কনক্রিট জাস্টিস একমাত্র মহান রাব্বুল আলামিন করতে পারেন : বিচারক
অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারকে ২২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
রোববার (৮ অক্টোবর) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০ এর বিচারক মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের আদালত আসামি অবন্তিকা, শঙ্খ, সুকুমার ও অনিন্দিতার উপস্থিতিতে এ রায় ঘোষণা করেন। রায় পড়ার সময় বিচারক বলেন, কনক্রিট জাস্টিস একমাত্র মহান রাব্বুল আলামিন করতে পারেন।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, একজন বিচারক শুধু রেকর্ড ও নথি দেখে রায় ঘোষণা করতে পারেন। এতে এক পক্ষ খুশি হবে অপর পক্ষ অখুশি হয়। দুই পক্ষকে কখনো খুশি করা যায় না। আর এটা বিচারকের কাজও না।
তিনি আরও বলেন, আমাদের রেকর্ডে যা আছে তা দেখেই আমাদের জাজমেন্ট দিতে হয়। রেকর্ডে কিছু তথ্য সত্য থাকে কিছু মিথ্যা থাকে ডকুমেন্টস কিছু ফলস থাকতে পারে। আমাদের পক্ষে যতটুকু সম্ভব বিচার-বিশ্লেষন করে রায় দেওয়ার চেষ্টা করি।
রায়ের সংক্ষিপ্ত পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, পি কে হালদার মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান ছিলেন। তার মা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষিকা। বুয়েট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র আসামি প্রশান্ত কুমার হালদার দেশের উন্নয়নে অবদান রাখার পরিবর্তে সম্পদ গড়ার নেশায় মত্ত হন। তার মা ও ভাইসহ ঘনিষ্ঠজনের সহযোগিতায় অসংখ্য নামি-বেনামি প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করে পাহাড়সম অবৈধ সম্পদ অর্জন করেন।
তিনি আরও বলেন, একজন মেধাবী নাগরিক তার মেধাকে কাজে লাগিয়ে জাতি গঠনের যেরূপ ভূমিকা রাখতে পারে ঠিক তেমনিভাবে অপরাধ চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়লে তখন সে জাতির জন্য বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়ায়। আসামি পি কে হালদার তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। মানুষ ব্যক্তি স্বার্থের জন্য অন্ধ হয়ে যায়। পি কে হালদারের নিকট দেশের স্বার্থের চেয়ে
নিজের স্বার্থ অনেক বড় ছিল । আমরা যেন নিজের সামান্য ব্যক্তি স্বার্থের জন্য মানিলন্ডারদের সহযোগী না হই।
এর আগে গত বুধবার (৪ অক্টোবর) একই আদালত উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের জন্য আজ দিন ধার্য করেন।
দুদকের অভিযোগপত্রে বলা হয়, পি কে হালদার নামে-বেনামে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ৬ হাজার ৭৯০ শতাংশ জমি কিনেছেন। এ সম্পদের বাজারমূল্য দেখানো হয়েছে ৩৯১ কোটি ৭৫ লাখ ৮১ হাজার ১২ টাকা। বর্তমানে এর বাজারমূল্য ৯৩৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে নিজের নামে জমি কিনেছেন ৪ হাজার ১৭৪ শতাংশ। এর দাম দলিলে দেখানো হয়েছে ৬৭ কোটি ৯৪ লাখ ২০ হাজার ৯৩০ টাকা। অথচ এ সম্পদের বর্তমান মূল্য ২২৮ কোটি টাকা। এছাড়া রাজধানীর ধানমন্ডিতে পি কে হালদারের নামে দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে। অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, পি কে হালদার তার নিকটাত্মীয় পূর্ণিমা রানী হালদারের নামে উত্তরায় একটি ভবন করেছেন। যার দাম ১২ কোটি টাকা। পূর্ণিমার ভাই উত্তম কুমার মিস্ত্রির নামে তেজগাঁও, তেজতুরী বাজার ও গ্রিন রোডে ১০৯ শতাংশ জমি কেনেন। যার বাজারমূল্য ২০০ কোটি টাকা। নিজের কাগুজে কোম্পানি ক্লিউইস্টোন ফুডসের নামে কক্সবাজারে ২ একর জমির ওপর নির্মাণ করেন ৮তলা হোটেল (র্যাডিসন নামে পরিচিত)। যার আর্থিক মূল্য এখন ২৪০ কোটি টাকা। এছাড়া পি কে হালদারের খালাতো ভাই অমিতাভ অধিকারী ও অনঙ্গ মোহন রায়ের নামে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে ৪০৪ শতাংশ জমি কিনেছেন তিনি, এর বর্তমান দাম ১৬৭ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ও কানাডিয়ান ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের তথ্যের বরাত দিয়ে দুদক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পি কে হালদার ২০১২ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ভাই প্রীতিশ হালদারের কাছে ১ কোটি ১৭ লাখ ১১ হাজার ১৬৪ কানাডীয় ডলার পাচার করেন। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৮০ কোটি টাকারও বেশি।
এসব অনিয়মের অভিযোগে ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি পি কে হালদারের বিরুদ্ধে প্রায় ২৭৫ কোটি টাকা অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের অভিযোগে মামলা করেন দুদকের উপ-পরিচালক সালাউদ্দিন। মামলার বাদী ছিলে উপ-পরিচালক মামুনুর রশিদ চৌধুরী। এরপর তদন্ত করে দুদক পিকে হালদারসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়।
এনআর/এমএ