আট বছর আগে ২০১৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর গুলশানে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন ইতালির নাগরিক তাবেলা সিজার। এর একবছর পর সাত আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে সাত বছর পার হলেও মামলার বাদী আইসিসিও’র কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ হেলেন ভেন ডার বিকের সাক্ষ্য হয়নি। এমনকি তাকে আদালতে হাজির করে সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন করার ব্যাপারেও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

এভাবে বছরের পর বছর পার হলেও আলোচিত এ হত্যা মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে ঝুলে রয়েছে। তবে রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, দ্রুত এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করে মামলাটি নিষ্পত্তি করা হবে।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘এ মামলাটিতে তদন্ত কর্মকর্তার জেরার জন্য দিন ধার্য রয়েছে। আশা করছি চলতি বছরের মধ্যে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করা হবে। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হলেই যুক্তিতর্কের ধাপ। এরপরই রায়ের তারিখ নির্ধারণ করবেন আদালত। এসব ধাপ দ্রুত সম্পন্ন করে মামলাটি নিষ্পত্তি করা হবে। রায়ে আসামিদের ‘সর্বোচ্চ সাজা’ নিশ্চিত হবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।

ভার্চুয়াল (ভিডিও কনফারেন্স) উপস্থিতিতে মামলার বাদীর সাক্ষ্যগ্রহণ করবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনো এ ব্যবস্থায় কোনো বিচার কার্যক্রম শুরু হয়নি। তবে আমরা এ মামলার বিচার কাজ শেষ করতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুসরণ করব।

এ মামলার আসামিরা হলেন- বিএনপি নেতা এম এ কাইয়ুম ওরফে কাইয়ুম কমিশনার ও তার ভাই আবদুল মতিন, তামজিদ আহমেদ ওরফে রুবেল ওরফে শুটার রুবেল, রাসেল চৌধুরী ওরফে চাক্কি রাসেল, মিনহাজুল আরেফিন রাসেল ওরফে ভাগনে রাসেল, শাখাওয়াত হোসেন ওরফে শরিফ ও মো. সোহেল ওরফে ভাঙারি সোহেল। আসামিদের মধ্যে কাইয়ুম কমিশনার ও ভাঙারি সোহেল এখনও পলাতক রয়েছেন। আসামি আবদুল মতিন জামিনে রয়েছেন। এছাড়া অপর চার আসামি তামজিদ, রাসেল, মিনহাজুল ও শাখাওয়াত কারাগারে আটক রয়েছেন। তারা এ মামলায় ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।

আসামি মতিনের আইনজীবী সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘তাবেলা সিজারের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আসামি মতিনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তিনি তার তিনটি ধার্য তারিখে আদালতে উপস্থিত হয়ে হাজিরা দিয়েছেন। এ মামলার এজাহারের সঙ্গে চার্জশিটের কোনো মিল নেই। এখন পর্যন্ত দেওয়া সাক্ষ্যে কোনো সাক্ষী মতিনের নামও বলেননি। আদালত নিরপেক্ষভাবে বিবেচনা করলে মতিন খালাস পাবেন বলে আশা করছি।

২০১৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গুলশান-২ এর ৯০ নম্বর সড়কে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন নেদারল্যান্ডভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা আইসিসিও-বিডি’র কর্মকর্তা তাবেলা সিজার। এ ঘটনায় একই দিন তার সহযোগী আইসিসিও’র কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ হেলেন ভেন ডার বিক বাদী হয়ে গুলশান থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ হত্যা মামলায় ২০১৬ সালের ২২ জুন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পরিদর্শক গোলাম রাব্বানী সাতজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পরে একই বছরের ২৫ অক্টোবর সাত আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। 

অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, আসামি সোহেলের কাছ থেকে পিস্তল ভাড়া নিয়ে খুনিরা তাবেলা সিজারকে হত্যা করেন। মতিনের নির্দেশে ২০১৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর শাখাওয়াতের মোটরসাইকেল নিয়ে মিনহাজুল, তামজিদ ও রাসেল গুলশান ২-এর ৯০ নম্বর সড়কে যান। ওই সড়কের গভর্নর হাউসের সীমানা প্রাচীরের বাইরে ফুটপাতে নিরিবিলি ও অন্ধকার স্থানে তামজিদ গুলি করে তাবেলা সিজারকে হত্যা করেন। তাকে সহায়তা করেন রাসেল চৌধুরী ও মিনহাজুল।

সেখানে আরও বলা হয়, হামলাকারীদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল একজন শ্বেতাঙ্গকে হত্যা করে দেশের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করা। একইসঙ্গে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা ছিল আসামিদের।

মামলাটি বর্তমানে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামানের আদালতে বিচারাধীন। বর্তমানে মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। এখন পর্যন্ত মামলায় মোট ৭০ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। এ মামলার দ্বিতীয় তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) জেহাদ হোসেনের জেরা অব্যাহত রয়েছে। সর্বশেষ গত ২১ সেপ্টেম্বর এ মামলার জেরার জন্য দিন ধার্য ছিল। তবে বিচারক ছুটিতে থাকায় এদিন তার সাক্ষ্যগ্রহণ হয়নি। আদালত এ মামলার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ২৫ অক্টোবর দিন ধার্য করেছেন।

এনআর/জেডএস