প্রধান বিচারপতির শেষ কর্মদিবসে আদালতে এসেছিলেন তার বড় মেয়ে, নাতি ও ছোট মেয়ের জামাই/ ঢাকা পোস্ট

প্রধান বিচারপতি হিসেবে শেষ বিচারিক কর্মদিবসে বাবা-মায়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে এবং বিচার বিভাগ ছেড়ে যাওয়ার কথা বলতে গিয়ে ডুকরে কেঁদে ওঠেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। এ সময় এজলাস কক্ষে উপস্থিত তার মেয়ে, নাতি ও অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনকেও কাঁদতে দেখা যায়।  

বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগের এজলাস কক্ষে বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি বক্তব্য দেওয়ার সময় এ আবেগঘন দৃশ্যের অবতারণা হয়। 

বক্তব্যের এক পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, এই বিদায়মুহূর্তে আমি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি আমার মরহুম বাবা-মাকে। আমার জন্য এবং আমাদের পরিবারের প্রতিটি সদস্যের জন্য অপরিসীম কষ্ট আর ত্যাগ স্বীকার করে তারা জান্নাতবাসী হয়েছেন। তারা আমার সংগ্রামের পথে সহায়তা করেছেন। 

এ কথা বলেই প্রধান বিচারপতি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন এবং ডুকরে কেঁদে ওঠেন। কান্নার জন্য এক মিনিটের মতো কথাও বলতে পারেননি তিনি। এ সময় এজলাস কক্ষে উপস্থিত থাকা প্রধান বিচারপতির বড় মেয়ে, নাতি ও ছোট মেয়ের জামাইকেও কাঁদতে দেখা যায়। কিছু সময়ের জন্য এজলাস কক্ষের পুরো পরিবেশ নীরব-নিস্তব্ধ হয়ে পড়ে। 

এরপর প্রধান বিচারপতি আবেগঘন কণ্ঠে বলেন, আমি বিচার বিভাগকে বেশি ভালোবেসে ফেলেছিলাম এবং আমি চেষ্টা করেছি স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে। আমরা আবার দেখা করব, কোথায় জানি না, কখন জানি না, তবে জানি আমাদের আবার দেখা হবে কোনো এক রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে।

বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি জাতীয় কবি নজরুলের ‘বাতায়ন-পাশে গুবাক তরুর সারি’ কবিতা থেকে কয়েকটি চরণ উল্লেখ করেন—

তোমাদের পানে চাহিয়া বন্ধু, 
আর আমি জাগিব না, কোলাহল করি
সারা দিনমান কারো ধ্যান ভাঙিব না- নিশ্চল নিশ্চুপ;
আপনার মনে পুড়িব একাকী গন্ধবিধুর ধূপ।

বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের সব বিচারপতি এবং বিপুল সংখ্যক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। এজলাস কক্ষে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না।

দেশের ২৩তম প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী অবসরে যাচ্ছেন আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর। তখন সুপ্রিম কোর্টে অবকাশকালীন ছুটি চলবে। সে কারণে আজই (বৃহস্পতিবার) প্রধান বিচারপতির বিচারিক জীবনের শেষ কর্মদিবস।

২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর প্রধান বিচারপতি হিসেবে হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীকে শপথ বাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ১৯৫৬ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন।

পড়ালেখা শেষে ১৯৮১ সালের ২১ আগস্ট জেলা আদালতে আইনজীবী হিসেবে যোগ দেন হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। তিনি ১৯৮৩ সালের ৪ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট এবং ১৯৯৯ সালের ২৭ মে আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন।

হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, খুলনা সিটি করপোরেশন, কুষ্টিয়া পৌরসভা, জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানির আইন উপদেষ্টা ছিলেন। ছিলেন বাংলাদেশের অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেলও।

২০০৯ সালের ২৫ মার্চ হাইকোর্ট বিভাগে এবং ২০১৩ সালের ৩১ মার্চ আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। ২০১৫ সালের ৩০ এপ্রিল থেকে তিনি জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

তার বড় ভাই বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকী ১৯৮০ সালের ২৩ এপ্রিল মুন্সেফ হিসেবে বিচার বিভাগে নিয়োগ পান। পরবর্তীতে ১৯৯৭ সালে জেলা ও দায়রা জজ হন। ২০০৯ সালের ৩০ জুন হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি এবং দুই বছর পর স্থায়ী নিয়োগ পান। ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর তিনি আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। ২০২১ সালের ১৫ জুলাই অবসরে যান তিনি। এরপর বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকী আইন কমিশনের সদস্য হিসেবে নিয়োগ পান।

এমএইচডি/এনএফ