দেশের সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগের দুই বিচারপতির পদত্যাগ দাবি করে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতৃবৃন্দ আদালত অবমাননা করেছেন বলে অভিযোগ করেছে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি।

রোববার (২০ আগস্ট) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ব্যানারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সমিতির সম্পাদক এ অভিযোগ করেন। 

গত ১৫ আগস্ট শোক দিবসের আলোচনায় সভায় বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম বিচারকদের ‘শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ’ এবং বিচারপতি আবু জাফর সিদ্দিকী বিদেশি শক্তির মাথা ঘামানো নিয়ে বক্তব্য দেন। এরপর জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সংবাদ সম্মেলন করে দুই বিচারপতির শপথ ভঙ্গ হয়েছে উল্লেখ করে তাদের পদত্যাগ দাবি করেন।

লিখিত বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক আব্দুন নূর দুলাল বলেন, বিচারপতিগণ সম্পর্কে কটূক্তি করে জাতীয় আইনজীবী ফোরাম এবং তাদের নেতৃত্ব গর্হিত কাজ করেছেন এবং সুস্পষ্টভাবে আদালত অবমাননা করেছেন। 
বিএনপির আইনজীবীদের বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে তিনি বলেন, অতি সম্প্রতি জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী সম্পর্কে কটূক্তি করেন এবং তাদের পদত্যাগ দাবি করে সারা দেশে বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। 
  
বিএনপির আইনজীবীরা বিচারপতিদের বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করেছেন এমন অভিযোগ করে আব্দুন নূর দুলাল বলেন, শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ অর্থ দলীয় রাজনীতিবিদ নয়। আমাদের সংবিধান একটি রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক দলিল। দেশের সর্বোচ্চ আইন। সম্মানিত বিচারপতিরা সেই সংবিধানের রক্ষক। সেই সংবিধান চর্চা করেন। গণতন্ত্রের ওপর ভার্ডিক্ট (রায়) দেন। আইনের শাসনের উপর ভার্ডিক্ট দেন, সামরিক জান্তার কর্মকাণ্ডের উপর ভার্ডিক্ট দেন। বিচারপপতিরা প্রতিনিয়ত রাজনীতি করেন। শপথের মধ্যে থেকেও রাজনীতি করেন, শপথের বাইরে গিয়ে নয়, রাজনীতি করতে রাজনৈতিক দল করা লাগে না।

তিনি বলেন, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এই প্রসঙ্গের অবতারণা করে কোন প্রকার ভুল করেননি বরং দেশ এবং জাতির প্রতি তার বুদ্ধিমত্তা, দেশপ্রেম, দায়িত্ববোধ এবং মানবিকতার পরিচয় দিয়েছেন।

এ সময় তিনি বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বিদেশিদের মাথা ঘামানোর সমালোচনা করে বলেন, দেশে দেশে কত নির্বাচন হয়, সেসব নিয়ে বিদেশি রাষ্ট্রসমূহের কোনো খবর নেই বা মাথা ব্যথাও নেই। সকল মাথা ব্যথা কেবল মাত্র বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে, মানবাধিকার নিয়ে।

তিনি বলেন, ১৯৭০ সালে গণতন্ত্রে জিতে ছিল বাংলাদেশ। তখন পাকিস্তান ক্ষমতা হস্তান্তর করে নাই। উপরন্তু আমাদের ওপর জঘন্যতম বর্বর হামলা করেছিল। সেদিন গণতন্ত্র ছিল বাংলাদেশের পক্ষে, মানবাধিকারও ছিল বাংলাদেশের পক্ষে। সেদিন কি ভূমিকা ছিল তাদের? আজ তারা বিনা অজুহাতে গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের নাম করে মায়া কান্না কাঁদছে। হুমকি ধমকি দিচ্ছে।

বিদেশি শক্তি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছেন বিশ্বে এমন একটাও নজির নাই বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

কিছু কিছু রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান আমাদের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার জন্য সুযোগ সন্ধানী বহির্বিশ্বকে সুযোগ এবং ক্ষেত্র প্রস্তুত করে দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন বারের এই নেতা।

সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকিরের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে বারের নির্বাচিত কার্যকরী পরিষদের সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

এমএইচডি/এমএ