আপিল বিভাগ বলেছেন, গরিব-কৃষকরা ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা ঋণ নিলে কোমরে দড়ি পড়ে, অথচ বড় বড় ঋণ খেলাপিদের ধরা যায় না। বড় ঋণ খেলাপিরা ঋণ পরিশোধ না করতে শত শত কোটি টাকা খরচ করে, ঋণ পরিশোধ প্রক্রিয়া ঠেকানোর জন্য বড় বড় আইনজীবী নিয়োগ করেন।

সোনালী ব্যাংকের ঋণ খেলাপির এক মামলার শুনানিতে সোমবার (৩১ জুলাই) প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন ৩ বিচারপতির আপিল বিভাগ এ মন্তব্য করেন।

অপর দুই সদস্য হলেন, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম।

নারায়ণগঞ্জের এক ব্যবসায়ীর ঋণ পরিশোধ না করার আবেদনের শুনানির সময় ব্যবসায়ীর আইনজীবী ব্যারিস্টার মোকছেদুল ইসলামকে উদ্দেশ্য করে আদালত এ মন্তব্য করেন। আদালতে সোনালী ব্যাংকের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার শামীম খালেদ আহমেদ।

পরে আইনজীবী ব্যারিস্টার শামীম খালেদ আহমেদ মামলার বিবরণ দিয়ে বলেন, নারায়ণগঞ্জে সোনালী ব্যাংকের স্থানীয় শাখা থেকে ১৯৯৬-৯৭ সালে ৩২ কোটি টাকা ঋণ নেন ব্যবসায়ী মো. ফজলুর রহমান। বিদেশ থেকে পণ্য আমদানির বিপরীতে নিজের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান মো. ফজলুর রহমান অ্যান্ড কোম্পানি ও স্ত্রী মাজেদা রহমানের নামে এ ঋণ নেন তিনি। ২০১৭ সালে এ ব্যবাসায়ী ও তার স্ত্রী মারা গেলে ঋণ আদায়ে সোনালী ব্যাংক অর্থ ঋণ আদালতে মামলা করে। 

সম্পত্তির ওয়ারিশান হিসেবে ফজলুর রহমানের তিন ছেলে, এক মেয়ে ও ফজলুর রহমান অ্যান্ড কোম্পানির বিরুদ্ধে এ মামলা করা হয়। ওই বছরই রায় ও ডিক্রি দেন আদালত। রায়ে দায়িকদের (ফজলুর রহমানের চার সন্তান ও ব্যবাসায়ী প্রতিষ্ঠান) দুই মাসের মধ্যে ১০২ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এ রায়ের পরও ঋণ পরিশোধ না করায় ২০১৯ সালে অর্থঋণ আদালতে জারি মোকদ্দমা করে সোনালী ব্যাংক। এই জারি মোকদ্দমায় সুদে-আসলে ১১৫ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধের নির্দেশনা চাওয়া হয়। কিন্তু দায়িকদের সহায়-সম্পত্তি না থাকায় ২০২০ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর দায়িকদের দেওয়ানী কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। অর্থঋণ আদালতের এ আদেশ চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে হাইকোর্টে রিট করেন চার দায়িক অর্থাৎ প্রয়াত ব্যবসায়ী ফজলুর রহমানের চার সন্তান। 

রিট আবেদনকারীরা হলেন- ফজলুর রহমানের ছেলে মো. হাবিবুর রহমান, মাসুদুর রহমান, আতিকুর রহমান ও মেয়ে বেগম ফারজানা রহমান।

এ রিটের প্রাথমিক শুনানির পর ২০২১ সালে হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। আদেশে হাইকোর্ট অর্থঋণ আদালতের আদেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন। দায়িকদের দেওয়ানী কারাগারে পাঠাতে অর্থঋণ আদালতের রায় কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া হয় রুলে। এরপর দফায় দফায় স্থগিতাদেশ বাড়ানো হয়। গত ২২ মে রুল শুনানির মধ্যে হাইকোর্ট দায়িকদের সহায়-সম্পত্তি তালিকা দাখিলের নির্দেশ দেন। এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে রিট আবেদনকারীরা। আবেদনে বলা হয়, রিট মামলায় হাইকোর্ট দায়িকদের সহায়-সম্পত্তির তালিকা দাখিলের নির্দেশ দিতে পারেন না।

সোমবার প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চে আবেদনটি শুনানির জন্য ওঠে।

আইনজীবী শামীম খালেদ আহমেদ আরও বলেন, আপিল বিভাগ আবেদনটি খারিজ করে দিয়েছেন। এ আদেশের ফলে হাইকোর্টের আদেশটি বহাল রয়েছে। ফলে আগামী দুই মাসের মধ্যে দায়িকদের সহায়-সম্পত্তির তালিকা বা হিসাব হাইকোর্টে দাখিল করতে হবে।

এমএইচডি/এমএ