জামিনে থাকা কলেজ শিক্ষার্থী মো. আশরাফুল হাওলাদারকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় পটুয়াখালীর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান ও সহকারী উপ-পরিদর্শকের (এএসআই) মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আদেশ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন হাইকোর্ট। দুই সপ্তাহ পর (১৩ আগস্ট) এ আদেশ দেওয়া হবে।

রোববার (৩০ জুলাই) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশের কথা জানান। একইসঙ্গে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেওয়ায় আদেশের দিন তাদের আসতে হবে না।

আদালতে আশরাফুল হাওলাদারের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আলী আহসান মোল্লা। দুই পুলিশ সদস্যের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আবু রেজা মো. কাইয়ুম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী।

শুনানির শুরুতে হাইকোর্ট আশরাফুল হাওলাদারের আইনজীবী আলী আহসান মোল্লার কাছে জানতে চাইলে এ আইনজীবী বলেন, গ্রেপ্তারের সময় এএসআই ও গ্রেপ্তারের পর ওসির সঙ্গে ফোনে কথোপকথনের বিষয়ে আমার কাছে হলফনামা চাওয়া হয়েছিল, আমি সেটি দাখিল করেছি। এ বিষয়ে বিবাদী পক্ষের বক্তব্য থাকলে তা আজ দিতে বলা হয়েছিল।

তখন আদালত দুই পুলিশ কর্মকর্তার আইনজীবী আবু রেজা মো. কাইয়ুম খানের কাছে জানতে চান ফোন কলের বিষয়ে কিছু বলার আছে কি না। জবাবে এ আইনজীবী বলেন, আমরা নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছি। নতুন করে কিছু বলার নেই জানালে আদালত বলেন, আমরা তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আদেশ দেবো আগামী ৬ আগস্ট। নাগরিক অধিকার ও ফোন কলের বিষয়টি তুলে ধরে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে বলে দেওয়া হবে।

তখন আইনজীবী কাইয়ুম খান দুই পুলিশ সদস্যের ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি চেয়ে আদেশের জন্য দুই সপ্তাহ সময় চান। আদালত তার এ মৌখিক আরজি গ্রহণ করে মামলাটির আদেশ দুই সপ্তাহ মুলতবি করেন।

জমিজমা নিয়ে মারামারির মামলায় হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নেওয়া মো. আশফুল হাওলাদারকে গ্রেপ্তারের ঘটনা নজরে আনলে গত ২০ মে আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ আদেশ দেন। আদেশে পটুয়াখালী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান ও সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মিজানুর রহমানকে তলব করা হয়।

জামিনে থাকার পরও উদ্দেশ্যমূলক গ্রেপ্তার করে দেশের ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, জানতে রুল জারি করেন আদালত।

লিখিত আদেশে আদালত বলেন, মো. আশরাফুল হাওলাদারকে গ্রেপ্তারে পুলিশ সদস্যের আচরণ বা প্রক্রিয়া আইনের পরিপন্থি। একইসঙ্গে তা সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনারও পরিপন্থি। এটা মীমাংসিত বিষয় যে, সংশ্লিষ্ট আইন অনুসরণ না করে নাগরিক অধিকারকে বাধাগ্রস্ত করা যাবে না।

আদালত বলেন, কোনো অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারের আগে প্রথমে একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে আইনি দিক নিয়ে ভাবতে হয়। এই আসামি ফৌজদারি বিভিন্ন মামলায় উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিনে রয়েছেন। আইনজীবী আসামিকে উচ্চ আদালতের জামিনের প্রত্যয়নও করেছেন। উল্লিখিত মামলায় মনে হচ্ছে এএসআই মিজানুর রহমান সর্বোচ্চ আদালতের নীতিমালা ও আইনের প্রতি অবহেলা প্রদর্শন করেছেন। ফলে ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার কার্যকারিতা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। আমরা মনে করি পটুয়াখালী সদর থানার ওসি মো. মনিরুজ্জামান ও এএসআই মিজানুর রহমান এ বিষয়ে কারণ ব্যাখ্যা করবেন।

এ আদেশে গত ১৮ জুন আদালতে হাজির হয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চান ওসি মো. মনিরুজ্জামান ও সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মিজানুর রহমান। কিন্তু আদালত আবেদন গ্রহণ না করে ২৩ জুলাই ফের আসতে বলা হয়। আর আশরাফুল হাওলাদারের আইনজীবীকে বলা হয়, বিটিআরসির কাছ থেকে ফোন কলের রেকর্ড নিয়ে আসতে।

গত ২৩ জুলাই দুই পুলিশ সদস্যের পক্ষে ফের নিঃশর্ত ক্ষমা চান তাদের আইনজীবী আবু রেজা মো. কাইয়ুম খান। আর কলেজ শিক্ষার্থী মো. আশরাফুল হাওলাদারের আইনজীবী আলী আহসান মোল্লা জানান, বিটিআরসির কাছে কল রেকর্ড চেয়েও তিনি পাননি। পরে আদালতের নির্দেশে গত ২৪ জুলাই ফোন কলের বিষয়ে হলফনামা দাখিল করা হয়।

সে হলফনামায় আইনজীবী আলী আহসান মোল্লা বলেন, গত ১৭ মে আসামি আশরাফুল হাওলাদারকে হাইকোর্ট থেকে জামিন করান তিনি। কিন্তু তার পর দিনই ১৮ মে রাত ৮টার দিকে পুলিশ মো. আশরাফুল হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করতে যায়। তখন আসামি তাকে ফোন দিয়ে বলে, ল’ইয়ার সার্টিফিকেট দেখানোর পরও পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এক পর্যায়ে আশরাফুলের ফোন দিয়ে গ্রেপ্তার করতে আসা এএসআইয়ের সঙ্গে কথা বলেন আইনজীবী আলী আহসান মোল্লা। আইনজীবী পরিচয় দিয়ে গ্রেপ্তার না করার অনুরোধ করলেও এএসআই মিজানুর রহমান আশরাফুলকে ছাড়েননি। এরপর রাত পৌনে ১০টার দিকে আশরাফুলের আত্মীয়-স্বজনরা আইনজীবী আলী আহসান মোল্লার ফোনে পটুয়াখালী থানার ওসি মো. মনিরুজ্জামানের মোবাইল নম্বর পাঠান। নম্বর পেয়েই ওসিকে ফোন দিলে ওসি ফোন ধরে মিটিংয়ে আছেন বলে ফোন কেটে দেন। পরদিন অর্থাৎ ১৯ মে আশরাফুলকে কোর্ট চালান করা হয়।

এমএইচডি/এসএম