জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেছেন আদালত। আগামী ২ আগস্ট এ মামলার রায় ঘোষণা করা হবে।

বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামানের আদালত এ মামলার যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য এদিন ধার্য করেন।

আদালত সূত্রে জানা যায়, এ মামলায় ২৬(২) ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি তিন বছরের কারাদণ্ড ও ২৭(১) ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি দশ বছরের সর্বোচ্চ কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। সেক্ষেত্রে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের সর্বোচ্চ ১৩ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।

আরও পড়ুন- তারেক-জোবায়দার মামলার রায় ২ আগস্ট

তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানের সর্বোচ্চ শাস্তি ১৩ বছরের কারাদণ্ডের প্রত্যাশা করেছেন দুদক।

দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, সম্পদ বিবরণী দাখিলের পর তারা আর আইনের আশ্রয় গ্রহণ করেননি। জনগণ, দেশ ও জাতি কেউ এটা আশা করেনি। কারণ, তার উচিত ছিল আদালতে উপস্থিত হয়ে এই মামলাটাকে ফেস করা এবং আইনের আশ্রয় নেওয়া। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ও আদালতে উপস্থিত হওয়ার জন্য নোটিশ দেওয়া হয়েছে। সেটার জন্য গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। তারপর থেকে তাদের আইনজীবীরা তাদের অবর্তমানে আইনি সাহায্য করেছে।

তিনি বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন অত্যন্ত নিরপেক্ষভাবে মামলাটি তদন্ত করেছে। মামলাটি শুরু হয়েছে ৪ কোটি ৮১ লাখ টাকা দিয়ে কিন্তু পরবর্তীতে সকল পর্যালোচনা করে সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে ১৮টা এক্সিবিটের মাধ্যমে আমরা প্রমাণ করতে পেরেছি ২ কোটি ২৩ লাখ টাকা তার অবৈধ উপার্জন এবং ৫৮ লাখ টাকার তথ্য গোপন করেছেন।

তিনি আরও বলেন, নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে দুদক আইনের ২৬(২) ও ২৭(১) ধারায় অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি আমরা। ২৬(২) ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি তিন বছরের কারাদণ্ড ও ২৭(১) ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি দশ বছরের সর্বোচ্চ কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। সুতরাং আমরা মনে করি যেহেতু তিনি সবকিছু জানেন, তিনি সম্পদ বিবরণী ঘোষণা করেছেন এবং তার পক্ষ থেকে আইনজীবীরা পর্যন্ত আইনের আশ্রয় নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে এবং তারপরও তিনি আদালতে উপস্থিত হন নাই। সুতরাং এই যে আদালত এবং আইনের প্রতি তার শ্রদ্ধা প্রদর্শন না করা- আমরা মনে করি তিনি এটা সঠিক কাজ করেননি।

এ পাবলিক প্রসিকিউটর বলেন, আমরা ৪২টি সাক্ষী দিয়েছি। সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে আমরা এই অপরাধটা প্রমাণ করতে পেরেছি। তার (তারেক রহমান) এবং তার স্ত্রী জোবায়দা রহমানের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছি।

আরও পড়ুন- নাইকো দুর্নীতি মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ ২২ আগস্ট

গত ২৪ জুলাই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক তৌফিকুল ইসলাম সর্বশেষ সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন। এদিন তার সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্যদিয়ে এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করেন আদালত। একইসঙ্গে আজ এ মামলার যুক্তি উপস্থাপনের জন্য দিন ধার্য করেন আদালত।

মামলাটিতে চার্জশিটভুক্ত ৫৬ সাক্ষীর মধ্যে ৪৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন আদালত।

গত ২১মে মামলার বাদী দুদকের উপ-পরিচালক জহিরুল হুদার সাক্ষ্যের মাধ্যমে এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। এর আগে গত ১৩ এপ্রিল একই আদালত তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ দেন। এ মামলায় তাদেরকে পলাতক দেখানো হয়েছে। গত বছরের ১ নভেম্বর একই আদালত তারেক ও জোবায়দার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, জ্ঞাত আয়ের বাইরে ৪ কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬১ টাকার মালিক হওয়া এবং সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কাফরুল থানায় এ মামলা করে দুদক। মামলায় তারেক রহমান, জোবায়দা রহমান ও তার মা ইকবাল মান্দ বানুকে আসামি করা হয়। তারেক রহমানের শাশুড়ি মারা যাওয়ায় এই মামলা থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

এনআর/এমজে