চট্টগ্রাম নগরের চকবাজার থানায় দায়ের হওয়া একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে জামিনে যান রাশেদা বেগম (২৭)। এরপর হাজিরা না দিয়ে নিরুদ্দেশ হন তিনি। ফলে তার বিরুদ্ধে পুনরায় জারি হয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। সেই পরোয়ানা পড়ে থাকে থানা পুলিশের হাতে। একপর্যায়ে রাশেদা ইয়াবা নিয়ে পুনরায় গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাতে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যান।

নগরের বাকলিয়া থানা থেকে তাকে আদালতে পাঠানোর সময় নথিতে হত্যা মামলা থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেন পুলিশ। কিন্তু সংশ্লিষ্ট আদালতে বিষয়টি অবহিত করেননি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। এমনকি হত্যা মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীও এটি এড়িয়ে যান। ফলে যা হবার তা-ই হয়। মাদক মামলায় জামিন নিয়ে আবারও নিরুদ্দেশ হন তিনি। পলাতক অবস্থায় তার বিরুদ্ধে দায়ের করা ওই হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন আদালত।

এদিকে, হত্যা মামলায় পলাতক থেকে ইয়াবা মামলায় কারাগারে থাকার বিষয়টি ওই সময় সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা এবং হত্যা মামলা বিচারাধীন থাকা আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে অবহিত করেছিলেন এ প্রতিবেদক। এরপর গণমাধ্যমে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু তারপরও সংশ্লিষ্ট মাদক মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এবং রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী কেউ এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। যে কারণে হত্যা মামলার ফাঁসির আদেশের দিনও পলাতক ছিলেন রাশেদা। ফলে তার বিরুদ্ধে কার্যকর করা যাচ্ছে না ফাঁসির দণ্ড।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ২৫ নভেম্বর নগরের চকবাজার থানার কে বি আমান আলী রোডে বড় মিয়া মসজিদের সামনে একটি ভবনের নিচতলার বাসা থেকে অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক বাপ্পীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার পর বাপ্পীর বাবা আলী আহমেদ বাদী হয়ে চকবাজার থানায় অজ্ঞাত পরিচয় আসামির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। ঘটনার দুদিন পর ২৭ নভেম্বর কুমিল্লা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থান থেকে বাপ্পীর স্ত্রী রাশেদা বেগমসহ মোট ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

২০১৮ সালে ৫ এপ্রিল পরস্পর যোগসাজশে বাপ্পীকে হত্যার অভিযোগে রাশেদাসহ ছয় আসামির বিরুদ্ধে আদালতকে অভিযোগপত্র দাখিল কর হয়। পলাতক থাকা অবস্থায় মামলাটিতে বুধবার (২৬ জুলাই) রাশেদা বেগমকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন আদালত। 

এদিকে, আদালত থেকে প্রাপ্ত নথি বলছে, ২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর বাকলিয়া থানার সৈয়দ শাহ এলাকা থেকে আরেক নারী সহযোগীসহ দুই হাজার ১০০ পিস ইয়াবা নিয়ে ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন রাশেদা। ডিবি পুলিশ জব্দ ইয়াবাসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে আসামিদের বাকলিয়া থানায় হস্তান্তর করে। এরপর বাকলিয়া থানায় একটি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের হয়। মামলা দায়েরের পর বাকলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) অঞ্জন দাশ গুপ্ত তদন্তের দায়িত্ব পান। ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি রাশেদাসহ দুই আসামিকে আদালতে পাঠান। তখন তার ফরোয়ার্ডিং কপিতে রাশেদার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা থাকার বিষয়টি উল্লেখ ছিল।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এসআই অঞ্জন দাশ গুপ্ত ওই সময় এ প্রতিবেদককে বলেছিলেন, আমি সিডিএমএস পর্যালোচনা করে তার বিরুদ্ধে যা পেয়েছি, তা ফরোয়ার্ডিংয়ে উল্লেখ করেছি। মাদক মামলাটি তদন্ত করে আমি ইতোমধ্যে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছি। আসামি এখনও জেলহাজতে আছে। তবে, মাদক মামলার আসামি রাশেদা হত্যা মামলায় পলাতক থাকার বিষয়টি আমার জানা ছিল না। এটি আমার জানার সুযোগও ছিল না।

ওই সময় বাপ্পী হত্যা মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী কেশব চন্দ্র নাথ বলেছিলেন, রাশেদা মাদক মামলায় গ্রেফতার হওয়ার বিষয়টি আমাকে কেউ অবহিত করেননি। তার বিরুদ্ধে পরোয়ানা রয়েছে এবং সোমবার (১৩ ডিসেম্বর) বাপ্পী হত্যা মামলার ধার্য তারিখ পর্যন্ত তিনি পলাতক ছিলেন।

বিষয়টি মামলা-সংশ্লিষ্ট দুজন অবহিত থাকার পরও আসামিকে গ্রেপ্তার না দেখানোয় জামিন পেয়ে যান রাশেদা। এরপর থেকে পলাতক তিনি।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বর্তমানে মামলাটির রাষ্ট্রপক্ষের দায়িত্বে থাকা আইনজীবী দুলাল চন্দ্র দেবনাথ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘটনাটি আমি শুনেছি। তবে ওই সময় আমি মামলাটিতে রাষ্ট্রপক্ষের দায়িত্বে ছিলাম না। মাদক মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাকে যদি হত্যা মামলায়ও গ্রেপ্তার দেখানো যেত তিনি হয়তো পলাতক হতেন না। এক্ষেত্রে প্রধানতম দায়ী মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। এ বিষয়ে তার খোঁজ নেওয়ার দরকার ছিল। তিনি পলাতক থাকলে গ্রেপ্তার দেখানোর জন্য সংশ্লিষ্ট আদালতে আবেদন করতে পারতেন। এছাড়া রাষ্ট্রপক্ষ জানলেও তারা বিষয়টি আদালতকে অবহিত করতে পারতেন।

এমআর/এমএআর/