সার্ভার থেকে বিপুল সংখ্যক জন্ম ও মৃত্যুর নিবন্ধন তথ্য গায়েব হওয়ার বিষয়ে অনুসন্ধান প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করেছে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ।

রোববার (৯ জুলাই) বিচারপতি জে বি এম হাসানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে এ প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান এ প্রতিবেদন দাখিল করেন।

জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের সহকারী রেজিস্ট্রার জেনারেল সামিউল ইসলাম রাহাদের স্বাক্ষরে দাখিল করা অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়, ইনপুটকৃত তথ্যই এই সার্ভারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংরক্ষিত হয়। কিন্তু অনেক নিবন্ধক কার্যালয় তাদের পূর্বের হাতে লিখা জন্ম নিবন্ধন তথ্যাদি অনলাইনভুক্ত না করাতে অনেক নাগরিকের জন্ম নিবন্ধন তথ্য অনলাইনে অর্থাৎ সার্ভারে নেই। এক্ষেত্রে সার্ভার থেকে তথ্য উধাও হয়ে যাওয়া বা সার্ভারের সংরক্ষিত তথ্যের গোপনীয়তা নষ্ট হওয়ার কোনো বিষয় জড়িত নয়। কোনো ডাটা চুরি হয়নি। ইচ্ছাকৃতভাবে কেউ নষ্টও করেনি বা উধাও করেনি।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সিস্টেমের (বিডিআরআইএস) সার্ভার থেকে বিপুল জন্ম নিবন্ধন তথ্য উধাও হয়ে যাওয়ার বিষয়টি মূলত ঠিক নয়। তথ্য উধাও হয়নি। অনেক নিবন্ধক কার্যালয় তাদের ম্যানুয়াল রেজিস্টারে পূর্বের হাতে লিখা জন্ম নিবন্ধন তথ্যাদি অনলাইনভুক্ত না করাতে অনেক নাগরিকের জন্ম নিবন্ধন তথ্য অনলাইনে অর্থাৎ সার্ভারে নেই। অর্থাৎ ওই নিবন্ধন তথ্যসমূহ কখনো অনলাইনেই আপলোড করা হয়নি। তাদের বারবার তাগিদ দেওয়ার পরও তা সুষ্ঠুভাবে প্রতিপালিত হয়নি। তৎকালীন জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন প্রকল্প কার্যালয়ের (বর্তমান রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়) ম্যানুয়াল জন্ম নিবন্ধন অনলাইনভুক্ত করার বিপুল কর্মযজ্ঞ মনিটরিং করার সামর্থ্যও তখন ছিল না।

এছাড়াও, ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অতিমাত্রায় ব্যবহারকারীর চাপে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সার্ভার ও বিআরআইএস সফটওয়্যারটি অকার্যকর হয়ে পড়ে এবং তিন মাস বিকল অবস্থায় ছিল। সফটওয়্যার সচল ও ডাটাবেজটি পুনরুদ্ধার করার জন্য সক্ষম জনবল জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন প্রকল্পের না থাকায় ইউনিসেফ কর্তৃক নিয়োগকৃত কনসালটেন্ট, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) ও প্রকল্পের কারিগরি টিমের সহায়তায় সিস্টেমটি অটো ব্যাকআপ সহ বিআরআইএস সফটওয়ার এবং ডাটাবেজ সচল করা হয়। এহেন অবস্থায় হাতে লেখা জন্ম নিবন্ধন তথ্যাদি অনলাইনভুক্তকরণের কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ডাটাবেজে কিছু ডাটার অবলুপ্তি ঘটে। তবে এই প্রতিবেদন অসম্পূর্ণ হওয়ায় আদালত আগামী ১০ আগস্ট পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট তানভীর আহমেদ।

২০২০ সালে সার্ভার থেকে বিপুল সংখ্যক জন্ম ও মৃত্যুর নিবন্ধন তথ্য গায়েব হওয়ার বিষয়ে সরকারকে তদন্তের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এ সংক্রান্ত এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।

জন্ম-মৃত্যু সনদ পাওয়ার ক্ষেত্রে জনসাধারণের ভোগান্তি রোধে বিবাদিদের নিষ্ক্রিয়তা ও খামখেয়ালিপনা এবং সংশ্লিষ্ট সার্ভার থেকে বিপুল সংখ্যক তথ্য গায়েব হয়ে যাওয়ার পরও তদন্তের উদ্যোগ না নেওয়া কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। সেই সঙ্গে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন ২০১৮ এর  রুল-১৯ অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ডাটাবেজ তৈরি করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যালয়ের রেজিস্ট্রার জেনারেল, পরিকল্পনা-পরিবীক্ষণ, মূল্যায়ন ও পরিদর্শন কার্যালয়ের মহাপরিচালক এবং আইন বিভাগের যুগ্ম সচিবকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
জন্মনিবন্ধন সনদ পেতে নাগরিকদের ভোগান্তি ও সার্ভারে জন্মনিবন্ধনের তথ্য না থাকা নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত দুটি প্রতিবেদন যুক্ত করে রিট আবেদনটি করা হয়।

জন্মনিবন্ধন সনদ নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘২০০৪ সালে জন্মনিবন্ধন আইন করা হয়, কার্যকর হয় ২০০৬ সালে। পাসপোর্ট ইস্যু, বিবাহ নিবন্ধন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি, ড্রাইভিং লাইসেন্স নেওয়া, জমি রেজিস্ট্রেশনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে জন্মনিবন্ধন সনদ বাধ্যতামূলক। শুরুতে হাতে লেখা সনদ দেওয়া হতো। এরপর ২০১০ সালের শেষ দিকে এসে তা ডিজিটাল করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। সে সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত নিবন্ধকদের কম্পিউটার প্রশিক্ষণের জন্য সরকার আলাদা বরাদ্দও দেয়। কিন্তু সে সময় সব তথ্য ডিজিটাল করা হয়নি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, জনবসতি বেশি এমন এলাকাগুলো, বিশেষ করে সিটি করপোরেশনে তথ্য হালানাগাদ পুরোপুরি হয়নি।’

নাম প্রকাশ না করে সিটি করপোরেশনের একজন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘২০১০ সালের পর যে সার্ভারে কাজ করা হতো, তা বছরখানেক আগে পাল্টানো হয়। নতুন এই সার্ভারেও আগের সার্ভারের সব তথ্য স্থানান্তর হয়নি। এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন অনেকে। আগে জন্ম নিবন্ধন করে সনদ নিয়েছেন এমন কয়েক কোটি মানুষকে এখন সম্পূর্ণ নতুন করে অনলাইনে জন্মনিবন্ধন করাতে হবে, কারণ তাদের আগের নিবন্ধন গায়েব হয়ে গেছে।

এমএইচডি/এসএম