ফাইল ছবি

বহুল আলোচিত রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজানে হামলার মামলায় আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ পেপারবুক পড়া শেষ করেছে। আসামিপক্ষও আইনি যুক্তিতর্ক তুলে ধরেছেন।

রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, তিন/চার কার্যদিবস শুনানি শেষে আলোচিত এ মামলার চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করবেন হাইকোর্ট। বিচারিক আদালতের ৭ আসামির ফাঁসির রায় হাইকোর্ট বহাল রাখবেন এমন প্রত্যাশা রাষ্ট্রপক্ষের। তাদের বক্তব্য, উচ্চ আদালতের রায়ের মাধ্যমে সারাবিশ্ব জানবে বাংলাদেশ জঙ্গিবাদের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স। 

জানতে চাইলে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, হলি আর্টিজান মামলার আপিল শুনানি শেষের দিকে। আর মাত্র তিন/চার দিবস শুনানি হলে মামলাটি রায় ঘোষণা করবেন হাইকোর্ট। তিনি বলেন, হাইকোর্টের যে বেঞ্চে হলি আর্টিজান মামলার আপিল শুনানি হচ্ছে ওই বেঞ্চের একজন বিচারপতি হজে গেছেন। আশা করছি তিনি দেশে ফিরে এ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বেঞ্চে বসবেন। এরপর ৩/৪ দিবস শুনানি শেষে মামলাটি চূড়ান্ত রায় ঘোষণার জন্য প্রস্তুত হবে। আশা করছি এই মাসে হাইকোর্ট রায় ঘোষণা করবেন এবং মামলা চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করবেন। 

রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা আরও বলেন, হলি আর্টিজান মামলার বিচারিক আদালতের রায় পড়েছি। আশা করছি হাইকোর্টও এ রায় বহাল রাখবেন। উচ্চ আদালতের রায়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হবে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই। বিশ্ব জানবে বাংলাদেশে জঙ্গি হামলা করে কোনো ছাড় পাওয়া যায় না।

তবে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি শরিফুল ইসলামের আইনজীবী আমিমুল এহসান জোবায়ের ঢাকা পোস্টকে বলেন, হাইকোর্টে আমি শরিফুল ইসলামের পক্ষে শুনানি করছি। আপিল শুনানিতে আমরা বলেছি শরিফুল ইসলামের কোনো স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেই। তাছাড়া তার বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকার সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই। তাকে খালাস দেওয়ার জন্য আদালতের কাছে প্রার্থনা করেছি। আশা করছি শরিফুল ইসলাম খালাস পাবেন।

এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, হলি আর্টিজান মামলায় আমরা পেপারবুক পড়া শেষ করেছি। এছাড়া আসামিপক্ষও শুনানি করেছেন। আমরা আইনি পয়েন্টে বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরে ৭ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখার আর্জি জানিয়েছি। এখন আমরা আদালতের কাছে চূড়ান্ত যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করব। আশা করছি হাইকোর্ট এ মাসেই রায় ঘোষণা করবেন এবং বিচারিক আদালতের রায় বহাল রাখবেন।

আদালত সূত্রে জানা যায়, গত ১২ জানুয়ারি বহুল আলোচিত হলি আর্টিজান মামলার আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানির জন্য বেঞ্চ নির্ধারণ করে দেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

বিচারপতি সহিদুল করিমের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চকে মামলাটির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্স শুনানির দায়িত্ব দেওয়া হয়।

এর ধারাবাহিকতায় ১৬ জানুয়ারি আপিল মামলাটি হাইকোর্টের কার্যতালিকায় আসে এবং আপিল শুনানি শুরু হয়। একমাসের বেশি সময় রাষ্ট্রপক্ষ পেপারবুক পড়েছেন।

২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর হলি আর্টিজানে হামলার মামলায় ৭ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড ও এক আসামিকে খালাস দেন বিচারিক আদালত। ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান এ রায় দেন।

রায়ে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করা আসামিরা হলো- হামলার মূল সমন্বয়ক তামিম চৌধুরীর সহযোগী আসলাম হোসেন ওরফে রাশেদ, ঘটনায় অস্ত্র ও বিস্ফোরক সরবরাহকারী নব্য জেএমবি নেতা হাদিসুর রহমান সাগর, জঙ্গি রাকিবুল হাসান রিগ্যান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব ওরফে রাজীব গান্ধী, হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী আব্দুস সবুর খান (হাসান) ওরফে সোহেল মাহফুজ, শরিফুল ইসলাম ও মামুনুর রশিদ। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানার আদেশও দেন আদালত। রায়ে মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান নামে এক আসামিকে খালাস দেওয়া হয়।

একই বছরের ৩০ নভেম্বর মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত ৭ আসামির ডেথ রেফারেন্স ও মামলার যাবতীয় নথি হাইকোর্টে আসে। এর পরেই ওই সময়ের প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ মামলার পেপারবুক প্রস্তুতের নির্দেশ দেন।

২০১৬ সালের ১ জুলাই রাজধানীর গুলশান এলাকার কূটনীতিকপাড়ায় হলি আর্টিজান বেকারিতে নজিরবিহীন জঙ্গি হামলা চালিয়ে ২২ জনকে হত্যা করে জঙ্গিরা। ওই হামলায় দুই পুলিশ কর্মকর্তা- সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম ও ওসি সালাউদ্দিনসহ ২২ জন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে ৯ জন ইতালির নাগরিক, ৭ জন জাপানি, একজন ভারতীয় এবং একজন বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বৈত নাগরিক। বাকি দুজন ইশরাত আকন্দ ও ফারাজ আইয়াজ হোসেন বাংলাদেশি নাগরিক।

এমএইচডি/জেডএস