রাজধানীর পল্টন থানার ২০২১ সালের এক মামলায় নাশকতার অভিযোগে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি মিয়া গোলাম পরওয়ারকে গ্রেপ্তার দেখাতে আবেদন করেছে পুলিশ। এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শুনানির জন্য আগামী ১৯ জুন দিন ধার্য করেছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) আদালতের পল্টন থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক শাহ আলম বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ২০২১ সালের পল্টন থানায় দায়ের করা মামলায় গত ১৩ জুন তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পল্টন থানার উপ-পরিদর্শক মো. সালাহ উদ্দিন কাদের। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরীর আদালত আসামির উপস্থিতিতে শুনানির জন্য এ দিন ধার্য করেন।

এর আগে, ২০২১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ভাটারা থানার সন্ত্রাস বিরোধী আইনের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর তাকে একাধিক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ডে নেওয়া হয়। ওই মামলায় কারাগারে আটক আছেন তিনি।

এর আগে গতকাল (১৪ জুন) তার পক্ষে জামিননামা দাখিলের পর অ্যাডভোকেট কামাল উদ্দিন প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, সকল মামলায় জামিন নেওয়ার পরে অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারকে তিনবার অবৈধভাবে জেলগেট থেকে পুনরায় গ্রেপ্তার করা হয়। তার নামে কোনো মামলা না থাকলেও অবৈধভাবে সন্দিগ্ধ আসামি হিসাবে মামলায় দেখানো হয়। চতুর্থবারের মতো হাইকোর্ট থেকে জামিন নেওয়ার পরে বেলবন্ড সাবমিট করা হয়। উনি প্রায় দীর্ঘ ২২ মাস ধরে জেল হাজতে আছেন।

আইনজীবীরা প্রত্যাশা করছেন যে অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারকে চতুর্থবারের মতো গ্রেপ্তার না করে মুক্তি দেওয়া হবে।

গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদনে উল্লেখ করা হয়, মামলার বাদী (রুমাম শেখ) ২০২১ সালের ২৬ মার্চ দুপুর সাড়ে ১২টায় মুসল্লিদের সাথে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে জুম্মার নামাজ পড়তে যায়। ফরজ নামার শেষে বাদী মসজিদের ভেতরে উশৃঙ্খল ধর্মান্ধ ব্যক্তিদের জুতা প্রদর্শনসহ নানা ধরনের রাষ্ট্রবিরোধী স্লোগান দিতে দেখেন। ওই দিন জুমার নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বের হয়ে মসজিদের বাইরে উত্তর গেটের সিড়িতে কয়েক হাজার হেফাজত-জামায়াত-শিবির-বিএনপি কর্মীদের উশৃঙ্খল জমায়েত দেখেন। তাদের স্লোগান ও কথোপকথনে বাদী জানতে পারেন হেফাজত ইসলামের যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বে জামায়াত-শিবির-বিএনপি-হেফাজত নেতারা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বর্ষিকীতে দেশি-বিদেশি সরকার প্রধান ও রাষ্ট্র প্রধানদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত কর্মসূচিকে বানচাল ও ঢাকাসহ সারাদেশে ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টির পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্র করে। এ সময় হেফাজত ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের প্রত্যক্ষ নির্দেশে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের জন্য আগ্নেয়াস্ত্র সজ্জিত হয়ে বাদীসহ সাধারণ মুসল্লিগণের ওপর অতর্কিত হামলা করে। 

পরে উপরোক্ত আসামিসহ অজ্ঞাতনামা আসামিরা সরকারবিরোধী স্লোগান দিয়ে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের আওয়ামী লীগ অফিসের দিকে মিছিলসহ অগ্রসর হয়। কিন্তু উপস্থিত মুসল্লি ও জনতার শক্ত প্রতিরোধে মুখে তারা পিছু হটেন। আসামি মাওলানা লোকমান হাকিম (যুগ্ম-মহাসচিব) বাদীর বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে থাকা মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। 

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, আসামি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরোয়ার এই মামলার ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। তার নির্দেশে হেফাজতের অন্যান্য নেতাকর্মীরা এসব ঘটনা ঘটিয়েছে বলে সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে। মামলার মূল রহস্য উদঘাটন এবং মামলার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে আসামি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরোয়ারকে অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো একান্ত প্রয়োজন।

এনআর/ওএফ