ভিনদেশি নারী গায়ত্রী অমর সিংয়ের বাসায় যাতায়াত ছিল সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের। গায়ত্রীর স্বামী না থাকলে তিনি সেখানে মাঝেমধ্যে রাতে থেকেও যেতেন। চট্টগ্রামের চাঞ্চল্যকর মাহমুদা খানম মিতু হত্যাকাণ্ডে দায়ের হওয়া মামলায় আদালতে সাক্ষীদের জবানবন্দীতে এসব বিষয় ওঠে আসে।

রোববার (১১ জুন) মামলাটিতে গায়ত্রীর গৃহপরিচারিকা পাম্পি বড়ুয়া ও বাবুল আক্তারের গৃহপরিচারিকা মনোয়ারা বেগমের সাক্ষ্য দেন। চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জসিম উদ্দিনের আদালতে তারা সাক্ষ্য দেন। এ দিন কারাগার থেকে বাবুল আক্তারসহ অন্যান্য আসামিদের আদালতে হাজির করা হয়। যদিও রোববার মনোয়ারা বেগমের সাক্ষ্য সম্পন্ন হয়নি। সোমবার পুনরায় তার সাক্ষ্য নেওয়া হবে। সাক্ষ্য শেষে তাকে জেরা করা হবে।

চট্টগ্রাম মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আবদুর রশিদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, দুজনে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তারা আগেও আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছিলেন। রোববার তারা দুজনে স্বীকার করেছেন গায়ত্রীর সঙ্গে বাবুল আক্তারের সম্পর্ক ছিল। গায়ত্রীর গৃহপরিচারিকা পাম্পি বড়ুয়া জানিয়েছেন বাবুল আক্তার ওই বাসায় যেতেন। স্বামী না থাকলে বাবুল আক্তার সেখানে থেকেও যেতেন। 

বাবুল আক্তারের আইনজীবী অ্যাডভোকেট কফিল উদ্দিন বলেন, দুজনের বক্তব্য পাঁচবছর পরে এসে রেকর্ড করা হয়েছে। যেটি তারা নিজেরাও স্বীকার করেছেন। এগুলো বানোয়াট ও অসত্য। গায়ত্রীর গৃহপরিচারিকা বলেছেন তিনি মিতু হত্যাকাণ্ডের পর তিনি টিভিতে দেখে বাবুল আক্তারকে শনাক্ত করেছেন। আমরা তাকে জিজ্ঞেস করেছি, তিনি কোথায় বসে দেখেছেন। তিনি বলেছেন পাশের বাড়ির টিভিতে দেখেছেন। অথচ আমি তার পাসপোর্ট দেখে জানতে পারলাম তিনি ওই সময় দেশের বাইরে ছিলেন। এ থেকে বুঝা যায় মামলাটি বানোয়াট। আইনের একটি বিষয় আছে বিলম্বে সাক্ষ্য দিলে সেটি গ্রহণযোগ্য নয়।

এর আগে, চাঞ্চল্যকর মামলাটিতে মিতুর বাবা ও সাবেক পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন।

জানা গেছে, ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরের নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মাহমুদা খানম মিতু। ওই সময় এ ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হয়। ঘটনার সময় মিতুর স্বামী পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার অবস্থান করছিলেন ঢাকায়। ঘটনার পর চট্টগ্রামে ফিরে তৎকালীন পুলিশ সুপার ও মিতুর স্বামী বাবুল আক্তার পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতপরিচয়দের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। 

তবে মামলাটিতে স্ত্রী হত্যাকাণ্ডে স্বামী বাবুল আক্তারেরই সম্পৃক্ততা পায় পিবিআই। ২০২১ সালের ১২ মে আগের মামলাটিতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। একই দিন বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ থানায় দ্বিতীয় মামলাটি দায়ের করেন মিতুর বাবা সাবেক পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন। ওইদিনই মামলাটিতে বাবুল আক্তারকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করে পিবিআই। সেই থেকে কারাগারে রয়েছেন বাবুল।

এদিকে, প্রথম মামলায় পিবিআইয়ের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ১৪ অক্টোবর নারাজির আবেদন করেন বাবুলের আইনজীবী। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে একই বছরের ৩ নভেম্বর নারাজি ও পিবিআইয়ের প্রতিবেদন খারিজ করে মামলাটি অধিকতর তদন্তের আদেশ দেন। এরপর দুটি মামলাই তদন্ত করতে থাকে পিবিআই। তবে পরবর্তী সময়ে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী গত বছরের ২৫ জানুয়ারি মিতুর বাবার দায়ের করা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। এরপর একই বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর প্রথম মামলাটি অধিকতর তদন্ত শেষে বাবুলসহ ৭ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়।

গত ১৩ মার্চ আলোচিত মামলাটিতে বাবুল আক্তারসহ সাত আসামির বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।

এমআর/ওএফ