ড. মুহাম্মদ ইউনূস/ ফাইল ছবি

১৫ কোটি টাকা কর দাবি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নোটিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের করা তিনটি আয়কর রেফারেন্স মামলা খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট।

এর ফলে ড. ইউনূসকে ওই কর পরিশোধ করতেই হবে। ৩ কোটি টাকা আগে জমা দেওয়ায় এখন বাকি ১২ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে তাকে। কর আপিল ট্রাইব্যুনালে আপিল করার সময় ১৫ কোটির মধ্যে ৩ কোটি টাকা জমা দিয়েছিলেন ইউনূস।

বুধবার বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার ও বিচারপতি রাশেদ জাহাঙ্গীরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় আদালতে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।

রায়ের পর অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ড. ইউনূস যে টাকা নিজের নামে তিনটি ট্রাস্টে দান করেছেন, এই টাকা যদি তার নিজস্ব ব্যাংক হিসাবে থাকতো তাহলে তাকে সে টাকার আয়কর দিতে হতো। ট্রাস্ট যেহেতু কর অব্যাহতি পায় সেজন্য হয়তো তিনি এ টাকা ট্রাস্টে দান করেছেন। আবার দানটা করেছেন মৃত্যুচিন্তা এবং পরিবারের সদস্যদের কল্যাণে। কিন্তু দানকর আইন, ১৯৯০-এর ৪ ধারার (ছ) (জ) উপধারা অনুসারে দানের এই দুটি কারণের প্রযোজ্যতা প্রমাণ করতে পারেননি। যে কারণে ট্রাইব্যুনাল তার আবেদন খারিজ করেছিলেন। সেই খারিজ আদেশ বহাল রেখে আদালত বলেছেন, আয়কর পরিশোধ না করার কৌশল হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিজের নামে প্রতিষ্ঠিত ট্রাস্টে এ টাকা দান করেছেন। ট্রাইব্যুনালের খারিজ আদেশে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। বরং খারিজ করে সঠিক সিদ্ধান্তই দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। ফলে পরিশোধের টাকা বাদ দিয়ে আরোপ করা দান করের বাকি টাকা তাকে পরিশোধ করতেই হবে।

বাকি কত টাকা ড. ইউনূসকে পরিশোধ করতে হবে জানতে চাইলে তা ১২ কোটি টাকার বেশি বলে জানান অ্যাটর্নি জেনারেল। নির্ধারিত সময়ে বাকি দানকর পরিশোধ না করলে জরিমানা আরোপ করার বিধান আছে বলেও জানান রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা।

ড. ইউনূসের আইনজীবী সুমাইয়া ইফরিত বিনতে আহমেদ বলেন, ‘রায়ের অনুলিপি পাওয়ার পর তা পর্যালোচনা করে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল অথবা দানকর পরিশোধের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

ড. ইউনূসের করা তিনটি আয়কর রেফারেন্স মামলার শুনানি শেষ হয় গত ২৩ মে। শুনানি শেষে রায়ের জন্য আজকের দিন ধার্য করা হয়েছিল।

মামলার নথি থেকে জানা যায়, ১৯৯০ সালের দানকর আইন অনুযায়ী ২০১১-২০১২ করবর্ষে ড. ইউনূসের মোট ৬১ কোটি ৫৭ লাখ ৬৯ হাজার টাকা দানের বিপরীতে প্রায় ১২ কোটি ২৮ লাখ ৭৪ হাজার টাকা কর দাবি করে নোটিশ পাঠায় এনবিআর। একইভাবে ২০১২-২০১৩ করবর্ষে ৮ কোটি ১৫ লাখ টাকা দানের বিপরীতে প্রায় এক কোটি ৬০ লাখ টাকা দানকর দাবি করে আরেকটি নোটিশ দেয় প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া ২০১৩-২০১৪ করবর্ষে ৭ কোটি ৬৫ হাজার টাকা দানের বিপরীতে প্রায় এক কোটি ৫০ লাখ টাকা কর দাবি করে নোটিশ দেওয়া হয়।

দানের বিপরীতে কর দাবি করে এনবিআরের এইসব নোটিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে মামলা করেন ড. ইউনূস। তার দাবি, আইন অনুযায়ী দানের বিপরীতে এনবিআর এই কর দাবি করতে পারে না।

তার এই মামলার শুনানি নিয়ে ২০১৪ সালে খারিজ করে রায় দেন কর আপিল ট্রাইব্যুনাল। এরপর হাইকোর্টে তিনি পৃথক তিনটি আয়কর রেফারেন্স মামলা করেন।

হাইকোর্ট তার মামলার প্রাথমিক শুনানি নিয়ে দানকর দাবির নোটিশের কার্যকারিতা স্থগিত করে ২০১৫ সালে রুল জারি করেন।

এই রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে আজ রায় দিয়েছেন উচ্চ আদালত।

এমএইচড/এনএফ