সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন/ ছবি : সংগৃহীত

চট্টগ্রামের চাঞ্চল্যকর মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলা আদালতে দ্বিতীয় দফায় সাক্ষ্য দিয়েছেন তার বাবা ও সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন। মঙ্গলবার  (২ মে) তৃতীয় চট্টগ্রাম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জসিম উদ্দিনের আদালতে সাক্ষ্য দেন তিনি। 

এর আগে গত ৯ এপ্রিল একই আদালতে তিনি প্রথম দফায় সাক্ষ্য দিয়েছিলেন।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আব্দুর রশিদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, মঙ্গলবার দুপুরে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। বিকেলে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। সবমিলিয়ে দুই দফায় তার সাক্ষ্য শেষ হয়েছে। এরপর জেরা শুরু হয়। আজকের সাক্ষ্যতে কেন মিতু খুনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়, কীভাবে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয় এবং হত্যা পরবর্তী সময়ে বাবুল আক্তারের চালচলন যাবতীয় বিষয় ওঠে আসে।

আদালতে মিতুর বাবা বলেন, বাবুলের সঙ্গে ভিনদেশি নারী গায়ত্রীর সম্পর্ক ছিল। এটি জেনে যায় মিতু। এরপর তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ শুরু হয়। সবমিলিয়ে পরকীয়ার কারণে আমার মেয়ে মিতুকে খুন করান বাবুল। বাবুলের বিশ্বস্ত সোর্স মুসা এই হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়ন করেন। হত্যার পর সাইফুল নামে এক প্রেসের মালিক থেকে তিন লাখ টাকা মুসাকে দেন বাবুল।

আজ সাবেক এসপি বাবুল আক্তারকে আদালতে হাজির করা হয়। বেলা সাড়ে ১২টা দিকে আদালতের ভেতরে তাকে দেখতে আসেন বাবুল আক্তারের বর্তমান স্ত্রী। সঙ্গে আসেন বাবুলের ছেলে আক্তার মাহমুদ মাহির ও মেয়ে টাপুর।

এ সময় ছেলে-মেয়েদের মাথায় হাত বুলিয়ে দেন বাবুল। তবে স্ত্রী এবং ছেলের সঙ্গে দেখা করতে বাঁধা দেন মহানগর কোর্ট পুলিশের কর্মকর্তারা। সঙ্গে সঙ্গে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সাবেক এসপি বাবুল আক্তার। আদালতকে জানান তার একটি জরুরি কথা আছে। আদালত উত্তরে জরুরি বিষয় হলে বলার অনুমতি দেন। 

এরপর কান্না করে আদালতকে বাবুল আক্তার বলেন, আমার স্ত্রী এবং ছেলে অনেকদিন পর দেখা করতে আসছেন। পুলিশ কথা বলতে দিচ্ছেন না। পরে আদালত বাবুল আক্তারকে স্ত্রী-ছেলের সঙ্গে কথা বলার অনুমতি দেন

গত ১৩ মার্চ আলোচিত মামলাটিতে বাবুল আক্তারসহ সাত আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।
 

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরের নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মাহমুদা খানম মিতু। ওই সময় এ ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হয়। ঘটনার সময় মিতুর স্বামী পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার অবস্থান করছিলেন ঢাকায়। ঘটনার পর চট্টগ্রামে ফিরে তৎকালীন পুলিশ সুপার ও মিতুর স্বামী বাবুল আক্তার পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতপরিচয়দের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। 

তবে মামলাটিতে স্ত্রী হত্যাকাণ্ডে স্বামী বাবুল আক্তারেরই সম্পৃক্ততা পায় পিবিআই। ২০২১ সালের ১২ মে আগের মামলাটিতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। একই দিন বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ থানায় দ্বিতীয় মামলাটি দায়ের করেন মিতুর বাবা সাবেক পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন। ওইদিনই মামলাটিতে বাবুল আক্তারকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করে পিবিআই। সেই থেকে কারাগারে রয়েছেন বাবুল।

এমআর/এসকেডি