ফেসবুক ব্যবহারে বিচারকদের সতর্ক করে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা
বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের অনুসরণীয় নির্দেশনাগুলো আবশ্যিকভাবে প্রতিপালন করতে সার্কুলার জারি করেছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।
রোববার (১৬ এপ্রিল) হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার (বিচার) এস কে তোফায়েল হাসান স্বাক্ষরিত সার্কুলারে বলা হয়েছে, সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, কতিপয় বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে ২০১৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর জারি করা সার্কুলারে প্রদত্ত নির্দেশনাসমূহ প্রতিপালন করছেন না। কোনো কোনো বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা বিচারিক কর্মঘণ্টায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের চেম্বার অথবা কর্মক্ষেত্রে দায়িত্বরত অবস্থায় তোলা ছবি বা ভিডিও আপলোড করাসহ নিজের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা ভঙ্গকারী ছবি পাবলিক পোস্ট হিসেবে আপলোড করছেন, অন্যের আপলোড করা ছবি, ভিডিও বা কন্টেট শেয়ার বা তাতে অপ্রয়োজনীয় মন্তব্য করছেন।
বিজ্ঞাপন
এছাড়াও রাজনৈতিক ও ধর্মীয় স্পর্শকাতর বিষয়ে মন্তব্য/শেয়ার করছেন এবং ইউটিউব বা অন্যকোনো মাধ্যমে নিজ বা ছদ্মনামে চ্যানেল খুলে ভিডিও আপলোড করাসহ অপ্রয়োজনীয় ও গুরুত্বহীন অনুষ্ঠানের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড করছেন। কতিপয় বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তার এরূপ কর্মকাণ্ডের ফলে বিচার বিভাগ সম্পর্কে জনমনে নেতিবাচক ভাবমূর্তি সৃষ্টি হচ্ছে, যা অপ্রত্যাশিত। এমতাবস্থায়, বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাগণ কর্তৃক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে ২০১৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর জারি করা সার্কুলারের প্রদত্ত নির্দেশনাসমূহ আবশ্যিকভাবে প্রতিপালন করার নির্দেশনা প্রদান করা হলো।
২০১৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর জারি করা সার্কুলারে নিম্ন আদালতের বিচারকদের বিচারিক কর্মঘণ্টার পূর্ণ ব্যবহারের লক্ষ্যে অফিস চলাকালীন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের উপস্থিতি কঠোরভাবে পরিহার করতে বলা হয়।
এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের ১১ দফা অবশ্যই পরিহার করতে বলা হয়েছে এবং ৮ দফা অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।
সার্কুলারে বিচারকদের ১১ দফা অবশ্যই পরিহার করতে বলা হয়।
১. জাতীয় ঐক্য ও চেতনার পরিপন্থি কোনো প্রকার তথ্য, মন্তব্য ও অনুভূতি প্রকাশ ও প্রচার।
২. কোনো সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগতে পারে এমন কোনো তথ্য, মন্তব্য বা অনুভূতি প্রকাশ ও প্রচার।
৩. রাজনৈতিক মতাদর্শ বা আলোচনা সংশ্লিষ্ট কোনো তথ্য, মন্তব্য বা অনুভূতি প্রকাশ ও প্রচার।
৪. কোনো সম্প্রদায়ের প্রতি বৈষম্যমূলক বা হেয়প্রতিপন্নমূলক কোনো তথ্য, মন্তব্য বা অনুভূতি প্রকাশ ও প্রচার।
৫. কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা রাষ্ট্রকে হেয়প্রতিপন্ন করে কোনো তথ্য, মন্তব্য বা অনুভূতি প্রকাশ ও প্রচার।
৬. লিঙ্গ বৈষম্যমূলক কোনো তথ্য, মন্তব্য বা অনুভূতি প্রকাশ ও প্রচার।
৭. জনমনে অসন্তোষ ও অপ্রীতিকর মনোভাব সৃষ্টি করতে পারে এমন কোনো তথ্য, মন্তব্য বা অনুভূতি প্রকাশ ও প্রচার।
৮. কোনো মামলা সংক্রান্তে বিরূপ মন্তব্য বা ব্যক্তিগত অনুভূতি প্রকাশ বা প্রচার।
৯. নিয়ন্ত্রণকালীণ কর্তৃপক্ষ বা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কোনো সিদ্ধান্তের বিষয়ে কোনো বিরূপ মন্তব্য বা ব্যক্তিগত অনুভূতি প্রকাশ বা প্রচার।
১০. বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের ছবি বা ভিডিও ক্লিপ প্রকাশ ও প্রচার।
১১. অপ্রাসঙ্গিক, অপ্রয়োজনীয়, মানহানিকর এবং নৈতিকতা পরিপন্থি কোনো স্ট্যাটাস, পোস্ট, লিংক, ছবি ইত্যাদি অন্যজনকে সংযুক্তকরণ, আদান-প্রদান, প্রকাশ ও প্রচার।
এছাড়া যে ৮ দফা অনুসরণ করতে বলা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে-
১. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিতব্য লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও ইত্যাদি নির্বাচন ও বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে।
২. প্রকাশিত তথ্য ও উপাত্তের যথার্থতা ও নির্ভরযোগ্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে।
৩. ব্যক্তিগত ও পারিবারিক তথ্য আদান-প্রদান, প্রকাশ ও প্রচারের ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্কতা এবং বিচারক সুলভ মনোভাব অবলম্বন করতে হবে।
৪. অপ্রয়োজনীয় ও গুরুত্বহীন বিষয়ে তথ্য, স্ট্যাটাস বা পোস্ট দেওয়া যাবে না।
৫. বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের জন্য একটি পোর্টাল, গ্রুপ থাকতে পারে যেখানে বিচারাধীন মামলার বিষয় এবং ব্যক্তিগত বিষয় ব্যতীত কেবল আইনগত বিষয়ে আলোচনা ও তথ্য আদান-প্রদান করা যাবে।
৬. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল ও বিচারক সুলভ আচরণ করতে হবে এবং রাষ্ট্রীয় অনুশাসন মেনে চলতে হবে।
৭. তথ্য আদান-প্রদান ও বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। নিজ কর্মক্ষেত্রে মামলার স্বার্থসংশ্লিষ্ট বা মামলা পরিচালনার সঙ্গে জড়িত কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না।
৮. বাস্তব ও স্বাভাবিক অবস্থায় সহকর্মীদের সঙ্গে মিথষ্ক্রিয়া সংক্রান্ত নিয়ম-নীতি, করণীয় ও বর্জনীয় দিকগুলোর প্রতিফলন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও নিশ্চিত করতে হবে।
এমএইচডি/জেডএস