রাজধানীর রমনা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলায় প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের আগাম জামিনের লিখিত আদেশ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট।

বুধবার (৫ এপ্রিল) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের সইয়ের পর ৪ পৃষ্ঠার আদেশ প্রকাশ করা হয়। লিখিত আদেশের অনুলিপি ঢাকা পোস্টের হাতে এসেছে।

লিখিত আদেশে যা বলা হয়েছে, প্রথম আলো সম্পাদকের জামিন আবেদনে বলা হয়, প্রথম আলোর অনলাইন রিপোর্টের ওই ফটোকার্ডটি খুব দ্রুত অনলাইন সংস্করণ থেকে অপসারণ করা হয়। পরে প্রতিবেদনটি অনলাইন সংস্করণে পরিবর্তিত শিরোনামে প্রকাশিত হয়। এছাড়া এ বিষয়ে একটি সংশোধনী যোগ করা হয়।

আরও পড়ুন>>প্রথম আলো সম্পাদকের আগাম জামিন

জামিন আবেদনে আরও বলা হয়, আসামির বর্তমান বয়স ৭৭ বছর। তিনি বেশ কিছু রোগে ভুগছেন। যার জন্য নিয়মিত চিকিৎসা প্রয়োজন।

শুনানিতে আসামির জামিনের বিরোধিতা করেছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জি। তিনি বলেন, এফআইআরে জামিন আবেদনকারীর বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে একটি মামলা রয়েছে। জামিন আবেদনকারীর বিরুদ্ধে অপরাধ প্রকৃতিগতভাবে গুরুতর।

হাইকোর্ট লিখিত আদেশে আগাম জামিন দেওয়ার কারণ প্রসঙ্গে বলেন, ব্যতিক্রমী ও বিশেষ পরিস্থিতিতে আগাম জামিন পাওয়ার ক্ষেত্রে তিনটি শর্ত পূরণ করতে হয়।

আরও পড়ুন>>হাইকোর্টে প্রথম আলো সম্পাদকের আগাম জামিন আবেদন

১. যখন একজন ব্যক্তি বিনা কারণে রাজনৈতিক হয়রানির শিকার হয় অথবা একটি বিদ্বেষমূলক বিচার শুরু করার কারণে একজন ব্যক্তিকে হয়রানি বা বিরক্ত করা হয়। 

২. যখন একজন ব্যক্তি জামিনের জন্য সংশ্লিষ্ট নিম্ন আদালতে যেতে শারীরিকভাবে অক্ষম। 

৩. যখন জনরোষের কারণে একজন অভিযুক্ত ব্যক্তি নিম্ন আদালতে হাজির হতে নিরাপদ বোধ করেন না। 

লিখিত আদেশে আদালত বলেন, আমরা জামিন আবেদনটি পর্যবেক্ষণ করেছি এবং অভিযুক্ত আবেদনকারীর পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও রাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্বকারী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্য শুনেছি।

আরও পড়ুন>>প্রথম আলো সম্পাদকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা

উভয়পক্ষের বক্তব্য শুনে এবং মামলার ঘটনা ও পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমরা দেখতে পাই, জামিন আবেদনে উদ্ধৃত এজাহারে থাকা অভিযোগ এবং জামিন আবেদনের বর্ণনা আবেদনকারীর পক্ষে। তাই আমরা তাকে (মতিউর রহমান) সীমিত সময়ের জন্য আগাম জামিন দিতে আগ্রহী।

লিখিত আদেশে আসামি মতিউর রহমানকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার যখন প্রয়োজন হবে তখন তদন্তে সহযোগিতা করতে বলা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত রোববার (২ এপ্রিল) রাজধানীর রমনা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলায় প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানকে ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন দেন হাইকোর্ট। 

আরও পড়ুন>>প্রথম আলো সম্পাদকের জামিন শুনানিতে যা হলো

আরও পড়ুন>>সাংবাদিক শামসুজ্জামান কারাগারে

গত ২৯ মার্চ মধ্যরাতে রমনা থানায় প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করেন আইনজীবী আবদুল মালেক (মশিউর মালেক)। মামলায় প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক (সাভারে কর্মরত) শামসুজ্জামানকেও আসামি করা হয়। এছাড়া সহযোগী ক্যামেরাম্যানসহ অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদেরও ওই মামলায় আসামি করা হয়।

গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলোর অনলাইনে করা একটি প্রতিবেদন নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। প্রতিবেদনটি করেছিলেন সাভারে কর্মরত প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামান। ওই প্রতিবেদন নিয়ে দুটি মামলা দায়ের করা হয়। একটি তেজগাঁও থানায়, আরেকটি রমনা থানায়। রমনা থানার মামলায় মতিউর রহমানকে আসামি করা হয়। তেজগাঁও থানার মামলায় তাকে আসামি করা হয়নি।

রমনা থানার মামলায় প্রতিবেদক শামসুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। ৩ এপ্রিল তিনি জামিনে মুক্তি পান।

এমএইচডি/কেএ