কিশোরীকে ধর্ষণের পর নির্মমভাবে হত্যা, স্বামীর মৃত্যুদণ্ড
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার আসমা আক্তারকে ধর্ষণের পর হত্যার দায়ে তার স্বামী আলী আকবরকে (২৮) মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাকে ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও অনাদায়ে আরও ৫ বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
রোববার (১৯ মার্চ) চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক বেগম ফেরদৌস আরা এ রায় ঘোষণা করেন। তবে রায় ঘোষণার সময় মামলার একমাত্র আসামি আলী আকবর আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। আলী আকবরের বাড়ী ফটিকছড়ির ডলু আরালিয়া গ্রামে। তার বাবার নাম মৃত হাচি মিয়া।
বিজ্ঞাপন
আদালত সূত্র জানায়, ভুক্তভোগী কিশোরীর বাড়ি ফটিকছড়ির নারায়ণহাট ইউনিয়নের শৈলকূপা এলাকায়। ২০১৫ সালের শুরুর দিকে ভুল নম্বরে কল দেওয়ার মাধ্যমে তার সঙ্গে আলী আকবরের পরিচয় হয়। এরপর থেকে তাদের মধ্যে কথা হতো। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০১৫ সালের ১৮ জুলাই বাড়ি থেকে কিশোরী আসমাকে ফুসলিয়ে বিয়ের কথা বলে আলী আকবর নিয়ে যায়। এরপর তাকে নিয়ে চট্টগ্রাম শহরের একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করেন।
ওই বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর আর্থিক অনটনের কথা বলে আসমাকে পুনরায় বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া। আসমা প্রথমে ভয়ে বাড়িতে না গিয়ে গ্রামের মহিলা মেম্বারের বাড়িতে ওঠে। খবর পেয়ে আসমার বাড়ির লোকজন তাকে নিয়ে যায়। এরপর তাকে শহরে একটি বাসায় কাজ করার জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়। শহরে কাজ করার সময় আলী আকবরের সঙ্গে আসমার মধ্যে প্রায়ই কথা হতো।
আসমা শহরের বাসায় কাজ করার এক মাস করার পর তাকে পুনরায় ফুসলিয়ে নিয়ে যায় আলী আকবর। এর দুই মাস পর ২০১৫ সালের ১০ নভেম্বর আসমাকে নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে বিয়ে করেন আকবর। কয়েকদিন পর আসমা খবর পায় আলী আকবর আগেও একটি বিয়ে করেছেন। এরপর উভয়ের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো। যেহেতু আসমা বাবার বাড়িতে থেকে কয়েকবার চলে এসেছে, সেহেতু তিনি মনস্থির করেন বিবাহিত হলেও আলী আকবরের সঙ্গে সংসার করার।
আকবরও আসমার জন্য আলাদা বাড়ি বানিয়ে দেবে বলে টোপ দেয়। এবার এই বাড়ি বানানোর জন্য আসমার বাবা থেকে এক লাখ টাকা আনতে বলে আকবর। সরল বিশ্বাসে আসমা তার ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে তার বাবার বাড়িতে গিয়ে এক লাখ টাকা দাবি করেন। কিন্তু দরিদ্র বাবা তাকে এক লাখ টাকা নিয়ে পুনরায় পড়াশোনায় মন দিতে বলেন।
অন্যদিকে আলী আকবরের প্রথম স্ত্রী ও পরিবারের লোকজন আসমাকে বিয়ে করার কথা জেনে যায়। তারা আসমাকে তালাক দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন। পাশাপাশি বাবার কাছ থেকে টাকা না পেলেও আসমা আলী আকবরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন এবং আলাদা ঘর বানিয়ে দিতে চাপ দিতে থাকেন। দুই দিকের চাপে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন আকবর। একপর্যায়ে আলী আকবর আসমাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
পরিকল্পনা মোতাবেক আসমাকে ২০১৬ সালের ১২ জানুয়ারি তৃতীয়বারের মতো তার বাবার বাড়ি থেকে নিয়ে যায় আকবর। এরপর আস্থা বাড়ানোর জন্য আসমাকে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে বেড়াতে যান আকবর। কয়েকদিন পর ১৭ জানুয়ারি থেকে ২০ জানুয়ারি মধ্যে ভূজপুরের বাদুরখীল গ্রামের বাবার খামারের পাশে একটি পাহাড়ে নিয়ে গিয়ে আসমাকে ধর্ষণের পর হত্যা করেন আকবর। এরপর একটি গাছের সঙ্গে আসমার মরদেহ ওড়না দিতে ঝুলিয়ে রাখা হয়।
খবর পেয়ে আসমার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় আসমার বাবা প্রথমে থানায় আত্মহত্যা মনে করে একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেন। তবে ময়নাতদন্তে আসমাকে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রতিবেদন পাওয়া যায়। একই সঙ্গে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের রাসায়নিক পরীক্ষায় আসমার যৌনাঙ্গে আকবরের বীর্য পাওয়া যায়।
এরপর ২০১৬ সালের ২৪ আগস্ট ভূজপুর থানার এসআই মো. সালাহ উদ্দিন মোল্লা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামার বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর আকবরকে গ্রেপ্তার করা হয়। মামলাটির তদন্ত শেষে ২০১৭ সালের ৬ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন ভূজপুর থানার এসআই হেলাল উদ্দিন ফারুকী। এতে একমাত্র আসামি করা হয় আলী আকবরকে।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) খন্দকার আরিফুল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এটি একটি নির্মম হত্যাকাণ্ড। আদালতে মোট সাতজন সাক্ষী দিয়েছেন। সব মিলিয়ে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণ হয়েছে। আসামি আলী আকবরকে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। তবে তিনি পলাতক রয়েছেন। গ্রেপ্তার হলে তার রায় কার্যকর হবে।
এমআর/ওএফ