হজের খরচ কমাতে অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্যোগ নিতে বললেন হাইকোর্ট
চলতি বছরের জন্য ঘোষিত হজের প্যাকেজ মূল্য কমাতে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনকে উদ্যোগ নিতে বলেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, হজে যেতে ইচ্ছুক সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে আপনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলুন। খরচ কীভাবে কমানো যায় সে বিষয়ে উদ্যোগ নিন।
বুধবার (১৫ মার্চ) বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ বিষয়ে করা রিটের শুনানি মুলতবি করেন এবং খরচ কমাতে উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়ে বলেন।
বিজ্ঞাপন
আদালতে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, হজের প্যাকেজ ঘোষণা করা সরকারের পলিসি ডিসিশন। এই বিষয়ে আদালত আদেশ দিতে পারেন না। তখন আদালত বলেন, এর সঙ্গে জনস্বার্থ জড়িত, তাই এ বিষয়ে শুনতে বাধা নেই।
পরে আদালত এই রিট আবেদনের শুনানি মুলতবি করেন।
আরও পড়ুন>>দেড় লাখ টাকা বাড়িয়ে বেসরকারি হজ প্যাকেজ ঘোষণা
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট গাজী মো. মহসীন।
এদিকে হজ প্যাকেজ নিয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ডলারের দাম বৃদ্ধি, বিমান ভাড়া বৃদ্ধি, বাসা ভাড়া ও মোয়াল্লেম ফি বাড়ায় হজ প্যাকেজের মূল্য বাড়ানো হয়েছে।
সরকারি ও বেসরকারিভাবে সমন্বয় করে হজের খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে। হজে যেতে বাংলাদেশ অংশে যে ব্যয় হয়, তার পরিমাণ আড়াই লাখ টাকা। আর সৌদি অংশের ব্যয় সাড়ে ৪ লাখ টাকা। সৌদি অংশে যে ব্যয় হয় সেখানে সরকারের কিছু করার থাকে না। এটা আন্তর্জাতিকভাবেই সমন্বয় করতে হয়। বাংলাদেশ অংশে যে আড়াই লাখ টাকা ব্যয়ের কথা বলা হয়েছে, সেখানে বিমান ভাড়া বেড়েছে, ডলারের মূল্য বেড়েছে।
আরও পড়ুন>>এবারের হজ প্যাকেজ অমানবিক : হাইকোর্ট
গত ১২ মার্চ হজের প্যাকেজ মূল্য কমিয়ে পুনরায় প্যাকেজ ঘোষণা করতে রিট দায়ের করা হয়। রিটে বাংলাদেশ বিমান ও সৌদি এয়ারলাইন্স ছাড়াও যেকোনো এয়ারলাইন্সের টিকিট কেটে হজে যাওয়ার সুযোগের নির্দেশনা চাওয়া হয়।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আশরাফ উজ জামান জনস্বার্থে এ রিট দায়ের করেন। রিটে ধর্ম সচিব, বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়।
এর আগে এ বিষয়ে সরকারকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছিলেন অ্যাডভোকেট আশরাফ উজ জামান।
আরও পড়ুন>>হজের প্যাকেজ কমিয়ে ৪ লাখ টাকা নির্ধারণ করতে লিগ্যাল নোটিশ
আইনজীবী আশরাফ উজ জামান তখন বলেছিলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ-সৌদি-বাংলাদেশ রুটে প্লেন ভাড়া ৭৬ হাজার টাকা থেকে এক লাখ ১০ হাজার টাকা। প্রতি বছর দুই দেশের সরকার হজ যাত্রীদের সৌদি ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের টিকিট কিনতে বাধ্য করে। এ কারণে টিকিট কেনার ক্ষেত্রে হজ যাত্রীদের স্বাধীনতা থাকে না।
এসব কারণসহ বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ করে চার লাখ টাকার মধ্যে হজ প্যাকেজ-২০২৩ সংশোধন, পরিবর্তন এবং পুনর্নির্ধারণ করতে নোটিশে অনুরোধ করা হয়।
আরও পড়ুন>>হজের পাহাড়সম খরচ কমাতে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি
সরকারি ব্যবস্থাপনায় চলতি মৌসুমে হজের খরচ ছয় লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। অন্যদিকে কোরবানি ছাড়াই এবার বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ যাত্রীদের জন্য সর্বনিম্ন খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে ছয় লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা। আগের বছর এটি ছিল পাঁচ লাখ ২২ হাজার ৭৪৪ টাকা। অর্থাৎ আগের বছরের চেয়ে দেড় লাখ টাকা বেড়েছে।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২৭ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। এ উপলক্ষ্যে গত ৯ জানুয়ারি সৌদি সরকার ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে দ্বি-পাক্ষিক চুক্তি সই হয়। চুক্তি অনুযায়ী এ বছর হজ যাত্রীর কোটা এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন নির্ধারিত হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার জন ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এক লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জন পবিত্র হজ পালন করতে পারবেন।
এ বছর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে সৌদি আরবে গমনকারী শতভাগ হজ যাত্রীর প্রি-অ্যারাইভাল ইমিগ্রেশন ‘মক্কা রোড চুক্তি’ অনুযায়ী বিমানবন্দরেই অনুষ্ঠিত হবে।
এমএইচডি/কেএ