খন্দকার মাহবুবকে চিরবিদায়
আইনাঙ্গন থেকে একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র খসে পড়েছে : প্রধান বিচারপতি
প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেছেন, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের, আইনাঙ্গনের উজ্জ্বল নক্ষত্র। তার মৃত্যুতে এই অঙ্গন থেকে উজ্জ্বল নক্ষত্র খসে পড়েছে। এটা আমাদের জন্য অনেক কষ্টের।
রোববার (১ জানুয়ারি) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি চত্বরে খন্দকার মাহবুবের জানাজার আগে প্রধান বিচারপতি এ কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, খন্দকার মাহবুব হোসেন বিচারপতিদের প্রতি, আদালতের প্রতি সবসময় সম্মান দেখিয়েছেন। তিনি কখনও আদালতকে প্রেশার দেননি। আদেশ বিপক্ষে গেলেও তিনি হাসতে হাসতে আদালত থেকে বের হয়েছেন। এটা আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে।
প্রধান বিচারপতি বলেন, সম্প্রতি যাবজ্জীবন মানে ৩০ বছর কারাদণ্ড এই রায় আমরা দিয়েছি। এই মামলায় খন্দকার মাহবুব হোসেন আদালতকে শতভাগ সহযোগিতা করেছেন। তিনি সহযোগিতা না করলে এই রায় দেওয়া সহজ হতো না।
পরে প্রখ্যাত ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনের মৃত্যতে তার প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা জানিয়ে সোমবার (২ জানুয়ারি) সুপ্রিম কোর্টের বিচারকাজ অর্ধদিবস বন্ধ ঘোষণা করেন প্রধান বিচারপতি।
প্রধান বিচারপতি বলেন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির চার বারের সভাপতি ও বার কাউন্সিলের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধার নির্দশনস্বরূপ আগামীকাল কোর্টের দ্বিতীয়ার্ধে (দুপুর ১টার পর থেকে) বিচারকাজ বন্ধ থাকবে।
এদিকে হাজারো আইনজীবী ও বিচারপতির অংশগ্রহণে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনের জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। তার প্রায় ৬০ বছরের প্রিয় কর্মস্থল থেকে অশ্রুজলে শেষ বিদায় জানিয়েছেন সহকর্মীরা।
রোববার বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী চত্বরে তার জানাজা সম্পন্ন হয়। নামাজে জানাজায় ইমামতি করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি জামে মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি আবু জাফর।
এতে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, আপিল বিভাগের বিচারপতি, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীসহ হাজারো আইনজীবী অংশগ্রহণ করেন।
জানাজার আগে খন্দকার মাহবুব হোসেনের জীবনী পাঠ করে শোনান সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুন নুর দুলাল।
শনিবার (৩১ ডিসেম্বর) রাতে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনের ফুসফুসে হঠাৎ পানি আসায় গত সোমবার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় রাতে ভেন্টিলেশন সাপোর্টে নেওয়া হয়।
অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন ১৯৩৮ সালের ২০ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈত্রিক বাড়ি বরগুনা জেলার বামনা উপজেলায়। তিনি ১৯৬৭ সালের ৩১ জানুয়ারি আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। ১৯৭৩ সালে দালাল আইনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য গঠিত আদালতের প্রধান কৌঁসুলি ছিলেন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন খন্দকার মাহবুব। তিনি বাংলাদেশের ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিত।
খন্দকার মাহবুব হোসেন ২০০৮ সালে বিএনপিতে যোগ দেন। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত তিনি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ছিলেন। ২০১৬ সালে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে ভাইস চেয়ারম্যান পদ পান।
২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরগুনা-২ আসন থেকে তিনি ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন। ওই আসন থেকে এর আগেও অন্য দল থেকে একাধিক বার তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
এমএইচডি/জেডএস