আপন জুয়েলার্সের একটি শো-রুম

আপন জুয়েলার্সের মালিক গুলজার আহমেদ ও আজাদ আহমেদের বিরুদ্ধে শুল্ক ও কর ফাঁকি দিয়ে চোরাচালানের মাধ্যমে স্বর্ণালঙ্কার মজুতের অভিযোগে করা মামলায় পৃথক দুটি অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। গুলশান থানায় মানিলন্ডারিং আইনে করা পৃথক দুই মামলায় এ অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা আরিফ হোসেন।

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সংশ্লিষ্ট সাধারণ নিবন্ধন (জিআর) শাখায় অভিযোগপত্র দুটি দাখিল করেন।

একটিতে আসামি করা হয়েছে আজাদ আহমেদকে। অপরটিতে গুলজার আহমেদ ও আজাদ আহমেদ দুজনকেই আসামি করা হয়েছে।

রোববার (৭ মার্চ) আদালতের সংশ্লিষ্ট সাধারণ নিবন্ধন (জিআর) শাখা থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি রমনা থানায় শুল্ক ও কর ফাঁকি মামলায় আপন জুয়েলার্সের আরেক মালিক দিলদার হোসেন সেলিমের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেছিলেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন।

শুল্ক গোয়েন্দার তদন্ত সূত্রে জানা যায়, আপন জুয়েলার্স বিভিন্ন সময় সাড়ে ১৩ মণ সোনা ও পৌনে আট হাজার পিস ডায়মন্ড কিনতে গিয়ে ১৯০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা পাচার করেছে। এতে কর ফাঁকির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা। রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে এসব অর্থপাচার করা হয়।

২০১৭ সালে আপন জুয়েলার্সের পাঁচটি শাখায় একযোগে অভিযান চালায় শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। অভিযানে আপন জুয়েলার্সের পাঁচটি শাখা থেকে জব্দ করা হয় ৫৩৭ কেজি ৫০০ গ্রাম সোনা ও সাত হাজার ৭৪৩ পিস ডায়মন্ড। ওই বছরের ১২ আগস্ট আপন জুয়েলার্সের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় দুটি, ধানমন্ডি থানায় একটি, রমনা থানায় একটি ও উত্তরা পূর্ব থানায় একটি মামলা করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।

আপন জুয়েলার্স অলঙ্কার আমদানির বিপরীতে বৈধ কোনো কাগজ দেখাতে পারেনি। অর্থাৎ শুল্ক গোয়েন্দা বলছে, অর্থপাচার করে চোরাচালানের মাধ্যমে এসব অলঙ্কার দেশে আনা হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) দেওয়া আয়কর নথিতে তথ্য গোপন করে কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। শুল্ক গোয়েন্দার তদন্তে আপন জুয়েলার্সের মালিক তিন ভাই আজাদ আহমেদ, গুলজার আহমেদ ও দিলদার আহমেদকে দায়ী করা হয়েছে।

আপন জুয়েলার্সের গুলশানের সুবাস্তু স্কয়ার শোরুমে অভিযানের প্রেক্ষিতে করা মামলায় আসামি করা হয় গুলজার আহমেদ ও আজাদ আহমেদকে। সেখান থেকে জব্দ করা হয় ২০৩ কেজি সোনা ও দুই হাজার ৮৫৯ পিস ডায়মন্ডের অলঙ্কার। যেখানে জব্দ করা অলঙ্কারের বিপরীতে পাচার হয়েছে ৭৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা, কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে ১১ কোটি ২৭ লাখ টাকা।

মৌচাক মার্কেট শো-রুমে অভিযানের প্রেক্ষিতে রমনা মডেল থানায় করা মামলায় আসামি করা হয় দিলদার আহমেদকে। যেখানে শো-রুমটি থেকে জব্দ করা হয় ৫৪ কেজি ২০০ গ্রাম সোনা ও এক হাজার ৫৮০ পিস ডায়মন্ড। এর বিপরীতে পাচার করা হয়েছে ১৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা, কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে তিন কোটি টাকা।

এনআর কমপ্লেক্স শো-রুমে অভিযানের প্রেক্ষিতে উত্তরা পূর্ব থানার মামলায়ও আসামি করা হয় দিলদার আহমেদকে। শো-রুমটি থেকে  জব্দ করা হয় ৮৯ কেজি সোনা ও এক হাজার ৪১০ পিস ডায়মন্ডের অলঙ্কার। এর বিপরীতে পাচার করা হয়েছে ৩০ কোটি ৯৯ লাখ টাকা, কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে চার কোটি ২২ লাখ টাকা।

ডিএনসিসি মার্কেট শো-রুমে অভিযানের প্রেক্ষিতে গুলশান থানার মামলায় আসামি করা হয় আজাদ আহমেদকে। শো-রুমটি থেকে জব্দ করা হয় ৯০ কেজি ৩০০ গ্রাম সোনা ও ৩৩৮ পিস ডায়মন্ডের অলঙ্কার। এর বিপরীতে বিদেশে পাচার করা হয়েছে ৩১ কোটি সাত লাখ টাকা। আর কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে চার কোটি ছয় লাখ টাকা।

এছাড়া সীমান্ত স্কয়ার শো-রুমে অভিযানের প্রেক্ষিতে ধানমন্ডি থানার মামলায় আসামি করা হয় দিলদার আহমেদকে। শো-রুমটি থেকে জব্দ করা হয় ১০১ কেজি সোনা ও এক হাজার ৫৫৭ পিস ডায়মন্ডের অলঙ্কার। এর বিপরীতে পাচার করা হয়েছে ৩৫ কোটি ৪৯ লাখ টাকা, কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে চার কোটি ৯৭ লাখ টাকা। মোট ১৯০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা পাচার করেছে আপন জুয়েলার্স। কর ফাঁকি দিয়েছে ২৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা।

২০১৭ সালের ২৮ মার্চ রাজধানীর রেইনট্রি হোটেলে জন্মদিনের পার্টিতে আমন্ত্রণ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীকে ধর্ষণ করে আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদ ও তার বন্ধু নাঈম আশরাফ। ৬ মে রাতে ভুক্তভোগীদের এক জন বনানী থানায় আসামিদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। এরপরই শুল্ক গোয়েন্দা আপন জুয়েলার্সে অবৈধ অলঙ্কার জব্দ করতে অভিযানে নামে।

টিএইচ/এফআর