বিচারকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার
খুলনা বার সভাপতিকে সতর্ক করে ক্ষমা করলেন হাইকোর্ট
খুলনা ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের সাবেক বিচারক (বর্তমানে যুগ্ম জেলা জজ) নির্মলেন্দু দাশের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের ঘটনায় খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলামসহ তিন আইনজীবীকে সতর্ক করে ক্ষমা করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। ভবিষ্যতে বিচারকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণকে কোনভাবেই প্রশ্রয় দেওয়া হবে না, বলে রায়ে বলা হয়েছে। সব জেলা আইনজীবী সমিতিকে বার্তা দিতে বার কাউন্সিলকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
বুধবার (২৩ নভেম্বর) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
বিজ্ঞাপন
দুর্ব্যবহারের ঘটনায় এর আগে গতকাল মঙ্গলবার খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলামসহ তিন আইনজীবী হাইকোর্টে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
আরও পড়ুন>>খুলনা বার সভাপতিকে তুলাধুনা করলেন হাইকোর্ট
গত ১ নভেম্বর খুলনা ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের সাবেক বিচারক (বর্তমানে যুগ্ম জেলা জজ) নির্মলেন্দু দাশের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের ঘটনায় খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলামসহ তিন আইনজীবীকে তলব করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করেছেন আদালত। অপর দুজন হলেন আইনজীবী শেখ নাজমুল হোসেন ও অ্যাডভোকেট শেখ আশরাফ আলী পাপ্পু।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
নির্মলেন্দু দাশের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের ঘটনায় গত ২২ সেপ্টেম্বর খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলামসহ তিন আইনজীবী বিরুদ্ধে নালিশ জানিয়ে প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দেওয়া হয়।
চিঠির একাংশে বলা হয়, গত ২ সেপ্টেম্বর একটি মোকদ্দমায় আইনজীবী পিযুষ কান্তি দত্ত জেরা করছিলেন। সে সময় খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলাম শেখ আশরাফ আলী পাপ্পু, শেখ নাজমুল হোসেন, জেসমিন পারভিন, এম এম সাজ্জাদ আলী, এস এম তারিক মাহমুদ তারা (সাধারণ সম্পাদক), সুস্মিতা, সাদিক সাদ, মিল্টন বাগচী, রাজুসহ একাধিক আইনজীবীকে সঙ্গে নিয়ে আদালত কক্ষে প্রবেশ করেন এবং সামনে দাঁড়িয়ে গুঞ্জন করতে থাকেন। তখন বিচারক বলেন, ‘আপনারা বসেন’। কিন্তু তারা তার কথায় কর্ণপাত না করে তাদের মতো গুঞ্জন করতে থাকেন। একপর্যায়ে বারের সভাপতি সাইফুল ইসলাম কৈফিয়ত তলবের সুরে বলেন, ‘আমরা একটা মোকদ্দমায় উভয়পক্ষ সময়ের দরখাস্ত করেছিলাম, আপনি সেই দরখাস্ত না-মঞ্জুর করেছেন। এরপর জিপি সাহেব হাতে লেখা দরখাস্ত দিয়েছেন। তারপর সাক্ষি হয়েছে। পরে আমরা সময়ের দরখাস্ত দিলে নেওয়া হয়নি। কেন নেওয়া হয়নি এবং সময়ের দরখাস্ত কেন না-মঞ্জুর করলেন, আমাকে বলতে হবে। তখন বিচারক বলেন, ‘সভাপতি সাহেব আপনি এভাবে আমার কাছে জানতে চাইতে পারেন?’ উনি বলেন, ‘কিভাবে পারি। কোনভাবে জানব, বলেন।’ বিচারক বলেন, ‘আপনি আমার কাছে সময়ের আবেদন করছেন। আমি নামঞ্জুর করছি। আদেশে কারণ দেখে নিবেন। কিন্তু আপনি আমার কাছে এখন কৈফিয়ত তলব করলে তো হবে না।’ তখন তিনি (উক্ত আইনজীবী) বলেন, ‘কৈফিয়ত চাচ্ছি তো। কারণ আপনি যখন টাকা নিয়ে, ঘুষ নিয়ে অবৈধভাবে সিদ্ধান্ত দেন, সেটার তো জবাব আমরা চাই না।’ তিনি আবার বলেন, ‘আপনি টাকা নিয়ে, ঘুষ নিয়ে বেআইনিভাবে কাজ করে..., তিনি (সংশ্লিষ্ট বিচারক) বলেন, ‘না না, এভাবে বলতে পারেন না।’ উক্ত আইনজীবী ধমক দিয়ে বলেন, ‘দাঁড়ান আপনি।’ তখন তার সঙ্গে থাকা আইনজীবীগণ ধমকা-ধমকি করেন। সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আপনাকে দরখাস্ত নেবেন কিনা মানে কি? এখানে রাষ্ট্রপক্ষ বলতেছে, আমরা বলতেছি, আপনি নেবেন না কেন।’ বিচারক বলেন, ‘দরখাস্ত তো নেওয়া হয়েছে। দরখাস্ত শুনানি করে নামঞ্জুর হয়েছে। সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘কেন, আপনি কি মনে করেন, আপনি এই খুলনা অঞ্চলের শাসক হয়েছেন। আপনার ইচ্ছামতো চলবে কোর্ট, তাই নাকি। আপনি মনে করেন নাকি। বিচারক বলেন, ‘না না, কোর্ট আইনানুযায়ী চলবে।’ তিনি বলেন, ‘কোর্ট আইনানুযায়ী চালান না আপনি। আপনি অসৎ, ঘুষখোর ও দুর্নীতিবাজ মানুষ, আপনি আমাদের ওপর ৪০/৫০ হাজার মামলা দিয়ে খুলনা অঞ্চলের মানুষকে ভোগান্তির মধ্যে রাখছেন। আইনজীবী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আপনি কত শক্তিশালী, আমরা দেখতে চাই।’
গত ২৫ অক্টোবর প্রধান বিচারপতি এই অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য হাইকোর্টে পাঠিয়ে দেন। তার ধারাবাহিকতায় আজ বিষয়টি হাইকোর্টের কার্যতালিকায় আসে।
এমএইচডি/এমএ