সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারে পূর্বানুমতির বিধান বাতিল
সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারে সরকারের পূর্বানুমতি নেওয়ার বিধান বাতিল করেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর ৪১(১) ধারা বেআইনি, সংবিধান পরিপন্থি ও মৌলিক অধিকার পরিপন্থি।
বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
বিজ্ঞাপন
এ রায়ের ফলে এখন থেকে সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারে সরকারের পূর্বানুমতি লাগবে না।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী একলাস উদ্দিন ভুঁইয়া, রিপন বাড়ৈ ও সঞ্জয় মন্ডল। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দ কুমার রায়।
রায়ের পর আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, আদালত রায়ে সরকারি চাকরি আইন-২০১৮ এর ৪১(১) ধারা বেআইনি, সংবিধান পরিপন্থি, মৌলিক অধিকার পরিপন্থি বলে ঘোষণা করেছেন। আদালত বলেছেন যে- সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে আছে, আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান, তা সুনির্দিষ্টভাবে বলা আছে। তারপরও ৪১(১) ধারা করে সেখানে সরকারি কর্মচারীদেরকে আলাদাভাবে একটি সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। তা কেনোভাবেই সংবিধান সম্মত নয়, এ আইনি একটি মেলাফাইড (অসৎ) উদ্দেশ্যে করা হয়েছে।
সরকারি কর্মচারীদের সুরক্ষা দিতে এ আইনের ৪১(১) ধারা সংযোজন করা হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ রায়ের ফলে তাদের গ্রেপ্তারে পূর্বানুমতির প্রয়োজন নেই।
তিনি বলেন, আমরা আদালতকে দেখিয়েছি-এই আইন করার পেছনে একটাই উদ্দেশ্যে সেখানে সরকারি কর্মচারীদেরকে সাধারণ নাগরিক থেকে একটু আলাদা করে তাদেরকে একটি বিশেষ শ্রেণি হিসেবে দেখিয়ে, তাদের অনেক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা। অপরাধ করলেও যেন তারা অপরাধী হিসেবে শাস্তি না পায়। বিশেষ করে এই আইনের মাধ্যমে দুদকের যে স্বাধীনতা সেটা খর্ব করা হয়েছিল।
এর আগে বুধবার (২৪ আগস্ট) সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারে সরকারের পূর্বানুমতি নেওয়ার বিধান কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, এ মর্মে জারি করা রুলের শুনানি শেষ হয়।
২০১৯ সালের ২১ অক্টোবর সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর ৪১(১) ধারা কেন বেআইনি ও বাতিল ঘোষণা করা হবে না এবং সংবিধানের ২৬(১) (২), ২৭ ও ৩১ অনুচ্ছেদের পরিপন্থি ঘোষণা করা হবে না, এই মর্মে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর সরকারি চাকরি আইনের গেজেট জারি হয়। এরপর ২০১৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর এক গেজেটে বলা হয় ১ অক্টোবর থেকে এ আইন কার্যকর হবে।
আইনের ৪১ (১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো সরকারি কর্মচারীর দায়িত্ব পালনের সহিত সম্পর্কিত অভিযোগে দায়েরকৃত ফৌজদারি মামলায় আদালত কর্তৃক অভিযোগপত্র গৃহীত হইবার পূর্বে, তাহাকে গ্রেপ্তার করিতে হইলে, সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি গ্রহণ করিতে হইবে।’
এমএইচডি/জেডএস