কুষ্টিয়ার ডিসি-এসপি অব্যাহতির আবেদনে সাড়া দেননি হাইকোর্ট
আদালত অবমাননার মামলায় কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি ও নিলামকৃত সম্পত্তি গ্রহণকারী ব্যবসায়ীকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতির আবেদন নাকচ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। সোমবারও (২২ আগস্ট) তাদেরকে আদালতে হাজির থাকতে বলা হয়েছে। তবে করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় কুষ্টিয়ার সদর থানার ওসি মো. সাব্বিরুল আলমকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। সোমবার এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশ দেবেন আদালত।
রোববার (২১ আগস্ট) বিচারপতি আবু তাহের মো.সাইফুর রহমান ও বিচারপতি কে এম রবিউল হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
সকালে আদালত অবমাননার মামলায় হাইকোর্টের তলব আদেশে হাজির হন কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি ও নিলামকৃত সম্পত্তি গ্রহণকারী ব্যবসায়ী।
বিজ্ঞাপন
শুনানির শুরুতে কুষ্টিয়ার ডিসি ও এসপিকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহিত দেওয়ার জন্য আবেদন করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন। আদালত ওই আবেদন নামঞ্জুর করে তাদেরকে আদেশের সময় আদালতে হাজির থাকতে নির্দেশ দেন। একইভাবে ব্র্যাক ব্যাংকের এমডিকে হাজিরা থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন তার আইনজীবী। আদালত সেই আবেদন নাকচ করে দিয়ে যথাসময়ে আদালতে হাজির থাকার জন্য নির্দেশ দেন। আদালত বলেন, এটা আদালত অবমাননার মামলা। আদেশের সময় তাদেরকে আদালতে হাজির থাকতে হবে। এদিকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় কুষ্টিয়ার সদর থানার ওসি মো. সাব্বিরুল আলম আদালতে হাজির হননি। তার আইনজীবী কোভিড সংক্রান্ত রিপোর্ট ও চিকিৎসকের সনদ আদালতে দাখিল করেন।
শুনানিতে আদালতের জিজ্ঞাসার জবাবে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. সাইদুল ইসলাম জানান, এই সম্পত্তি সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা নেই। আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। পুলিশ সুপার (এসপি) মো. খায়রুল আলম বলেন, আদালতের আদেশের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানার ওসি আমাকে অবহিত করেননি। যার কারণে বিষয়টি আমার জানা নেই। এ পর্যায়ে এসপির উদ্দেশ্যে আদালত বলেন, আপনি জেলার পুলিশ সুপার হিসাবে একজন ক্ষমতাবান কর্মকর্তা। এই ক্ষমতা আপনাকে দু’ভাবে ভোগ করার সুযোগ রয়েছে। এক- জনগণের সেবা করে। দুই- স্বেচ্ছাচারীভাবে। এখন বলুন, আপনি এই ক্ষমতা কীভাবে ভোগ করেন? জবাবে এসপি বলেন, জনগণের সেবার মাধ্যমে এই ক্ষমতা ভোগ করে থাকি।
এরপর ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি সেলিম আর এফ হোসেনকে হাইকোর্ট বলেন, ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলামকে আপনারা একটি চিঠি দিলেন। সেখানে নিলাম হওয়া হওয়া সম্পত্তি সাতদিনের মধ্যে বুঝিয়ে দিতে বললেন। যদি সম্পত্তি বুঝিয়ে না দেয় তাহলে প্রশাসনের সাহায্য নেওয়ার কথা বলেছেন। যদি ওই সময়ের মধ্যে বুঝিয়ে না দেয় তাহলে আইনানুযায়ী প্রশাসনের সাহায্য নিতে আপনি কি কোনো চিঠি দিয়েছিলেন। জবাবে এমডি বলেন, আমি কোনো চিঠি দেইনি। এ পর্যায়ে আদালত বলেন, নিলাম কার্যক্রমের ওপর আদালতের স্থগিতাদেশ রয়েছে, সেটা জানার পর সেটা কি নিলাম ক্রয়কারী ব্যক্তিকে অবহিত করেছিলেন? এমডি বলেন, জানা নেই।
এরপর ডাকা হয় নিলামকৃত সম্পত্তি ক্রয়কারী ব্যক্তি রশিদ অ্যগ্রো ফুড লিমিটেডের সত্ত্বাবধিকারী ব্যবসায়ী আব্দুর রশিদকে। আদালত তার কাছে জানতে চান, নিলাম সম্পত্তি ক্রয়ের পর ব্র্যাক ব্যাংক কি আপনাকে তার দখল বুঝিয়ে দিয়েছে? জবাবে তিনি বলেন, জ্বি, ব্যাংক বুঝিয়ে দিয়েছে। আদালত বলেন, সেটা কীভাবে? দখল বুঝিয়ে দেওয়ার কোনো কাগজ কি আপনার কাছে আছে? তখন ওই ব্যবসায়ী বলেন, এ সংক্রান্ত কোনো কাগজ আমার কাছে নেই। এ পর্যায়ে আদালত বলেন, তাহলে কীভাবে আপনি ওই সম্পত্তির দখল নিলেন? নিজেই কি ওই সম্পত্তির দখল নিয়েছেন? ব্যবসায়ী বলেন, ব্যাংক আমাকে নোটিশ দিয়েছে। কিন্তু দখল বুঝিয়ে দেওয়ার বিষয়ে কোন কাগজ দেয়নি। শুনানি শেষে হাইকোর্ট সোমবার আদেশের জন্য দিন ধার্য করেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট এএম আমিন উদ্দিন, ডিসি ও এসপির পক্ষে আইনজীবী মুন্সী মনিরুজ্জামান ও ইউসুফ খান, এমডির পক্ষে সৈয়দ মিনহাজুল হক ও ব্যবসায়ী শফিকুলের পক্ষে রাগীব রউফ চৌধুরী শুনানি করেন।
এর আগে গত ১১ আগস্ট আদালতের স্থগিতাদেশ থাকার পরও ১২৩ কোটি টাকার সম্পত্তি ১৫ কোটি টাকায় নিলামে বিক্রি করার ঘটনায় ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি সেলিম আর এফ হোসাইন, কুষ্টিয়ার ডিসি মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম, এসপি মো. খায়রুল আলম, সদর থানার ওসি মো. সাব্বিরুল আলম ও নিলামে সম্পত্তি নেওয়া ব্যবসায়ী আব্দুল রশিদকে তলব করেন হাইকোর্ট। ২১ আগস্ট তাদের আদালতে হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
এমএইচডি/জেডএস