তামিলনাড়ুর সেই প্রেমকান্ত হাইকোর্টে
প্রেমের টানে বাংলাদেশে এসে মারধর ও অপমানের শিকার হওয়া ভারতের তামিলনাড়ুর যুবক প্রেমকান্ত হাইকোর্টে এসেছেন। আইনি পরামর্শের জন্য তিনি হাইকোর্টে আসেন বলে জানান দুই আইনজীবী।
বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান ও অ্যাডভোকেট নিশাত ফারজানা নিপার চেম্বারে সে আইনি পরামর্শ করেন পেমকান্ত।
বিজ্ঞাপন
পরে অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান ও অ্যাডভোকেট নিশাত ফারজানা নিপা ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রেমকান্ত আমাদের কাছে আইনি পরামর্শের জন্য এসেছিলেন। আমরা মনে করি তিনি বিদেশি নাগরিক হলেও বাংলাদেশে তার আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার রয়েছে।
জানা যায়, ভারতের তামিলনাড়ুর যুবক প্রেমকান্ত। বাংলাদেশে থাকেন ‘প্রেমিকা’। তার টানে গত জুলাইয়ের শেষ দিকে তামিলনাড়ু থেকে বরিশালে আসেন প্রেমকান্ত। তবে ‘প্রেমের টানে’ বাংলাদেশে ছুটে আসা আর সব বিদেশির মতো তার ভাগ্যে শিকে ছেঁড়েনি। বরিশাল শহরে উল্টো পিটুনি খেয়েছেন তামিল এই যুবক।
বাংলাদেশি তরুণীর প্রেমে পড়া প্রেমকান্ত একজন নৃত্যশিল্পী। বরিশালে প্রেমিকার সঙ্গে দেখাও হয়েছিল। তবে প্রেমকান্তের বুক ভেঙে দেন বরিশালের এক যুবক। চয়ন হালদার নামে ওই যুবকের দাবি, তিনিই মেয়েটির ‘আসল প্রেমিক’। চয়নের হাতে পিটুনিও খেয়েছেন প্রেমকান্ত, থানায় থেকেছেন তিন রাত।
তবে ভারতের তামিলনাড়ু থেকে বরিশালে এসে ‘মারধরের শিকার’ হয়েছেন প্রেমকান্ত এমন অভিযোগের কোনো সত্যতা পায়নি পুলিশ। দেখা করতে আসা কিশোরীর সঙ্গে গাড়িতে বসে খারাপ আচরণ করায় দুজনের মধ্যে বাগবিতণ্ডার সৃষ্টি হলে স্থানীয়রা সেটি সমাধানের চেষ্টা চালায়। উত্তেজিত প্রেমকান্তকে অটো থেকে নামানোর চেষ্টা করেন স্থানীয়রা। মূলত দেখা হওয়ার পর পরই কিশোরীকে কু-প্রস্তাব দিয়েছিল প্রেমকান্ত। সেই সূত্রেই সর্ম্পকের অবনতি হয়।
স্থানীয়রা ভারতীয় নাগরিক দেখে তাকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করলে আত্মরক্ষার্থে মিথ্যার আশ্রয় নেন প্রেমকান্ত। অভিযোগ তোলেন মারধর ও টাকা, মোবাইল নিয়ে যাওয়ার। প্রেমকান্তের এসব অভিযোগ ‘অসত্য’ বলে জানিয়েছেন পুলিশ।
গত ৮ আগস্ট বরিশাল মেট্রোপলিটন এয়ারপোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কমলেশ হালদার রোববার ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রেমকান্তের অভিযোগগুলো অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে আমরা দেখেছি। কিন্তু তদন্তে তার করা অভিযোগুলো অসত্য বলে উঠে এসেছে। মূলত কাশিপুরের সড়কে যে ভিডিও ফুটেজের কথা বলছেন, সেখানে ওই যুবকের সঙ্গে হাতাহাতি হয়েছে। তাকে কেউ মারধর করেনি। স্থানীয়রা তাকে থানায় হস্তান্তর করার পরে তাকে সর্বাত্মক সহায়তা করা হয়েছে। হাইকমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী তার দেশে চলে যাওয়ার জন্য নিরাপত্তা দিয়ে গাড়িতে তুলে দেওয়া হয়।
ওসি বলেন, প্রেমকান্ত নামে ওই যুবক বার বার আমাকে বলছিল, সেই কিশোরীকে তার সঙ্গে পাঠানোর জন্য। কিন্তু অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ের বিয়ে বাংলাদেশে আইন পরিপন্থি কাজ বলার পরও একই দাবি করছিলেন তিনি।
এদিকে ৫ আগস্ট (শুক্রবার) বরগুনা জেলার তালতলী থানায় প্রেমকান্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন তার কথিত প্রেমিকার বাবা। সেখানে তাদের দুজনের প্রেমে ফাটল ধরার কারণ স্পষ্ট।
মূলত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিচয়ের সূত্র ধরে বন্ধু হলে ২৪ জুলাই প্রেমকান্ত বরিশালে চলে আসেন। ২৫ জুলাই একটি রেস্তোরাঁয় ওই কিশোরী তার তিন বান্ধবীসহ দেখা করে দুপুরের খাওয়া শেষে চলে যায়। এরপর প্রেমকান্তের অনুরোধে ২৭ তারিখ কাশিপুর এলাকায় দেখা করে। সেখানে অটোরিকশার মধ্যে প্রেমকান্ত ওই কিশোরীকে খারাপ সর্ম্পক স্থাপনের প্রস্তাব দেয়। একইসঙ্গে তার সঙ্গে ঢাকা যাওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। ওই ছাত্রী প্রেমকান্তের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে দুজনের মধ্যে ঝামেলা শুরু হয়। এক পর্যায়ে তা মারাত্মক রূপ নেয়। তাদের বহনকারী গাড়িটি থামিয়ে স্থানীয়রা বাগবিতণ্ডা বন্ধ করে নিকটস্থ পুলিশ স্টেশনে (বিমানবন্দর থানায়) জানায়। সেখান থেকে পুলিশ এসে প্রেমকান্তকে হেফাজতে নেয়।
ওই কিশোরীর বাবা বলেন, আমার মেয়ে অপ্রাপ্তবয়স্ক তা এয়ারপোর্ট থানার ওসি নিজে কলেজে এসে নিশ্চিত হয়ে গেছেন। সেমতে হাই কমিশনে জানালে, হাই কমিশন ওই যুবককে দেশে ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু সে দেশে না ফিরে বিভিন্ন মাধ্যমে আমার অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ে, আমার পরিবার নিয়ে বিভিন্ন কুরুচিপূর্ণ অপপ্রচার চালিয়ে যায়। এমনকি সেসব অপপ্রচার টেলিভিশন-পত্রিকাতেও বলেছে। ফলে আমি আমার পরিবার নিয়ে কীভাবে বেঁচে থাকব, তা নিয়ে ঝুঁকিতে আছি। আমার মেয়ের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ওই যুবকের মিথ্যা তথ্যে আমরা মারাত্মক ক্ষতিতে রয়েছি। আমরা এলাকায় পালিয়ে বেড়াচ্ছি।
প্রেমকান্তের কথিত প্রেমিকা দাবি করেছে, ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্র ধরে তার সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব হয়েছে। আমি তার প্রেমিকা না। আসলে তার কথায় রাজি না হওয়ায় আমার ক্ষতি করতে উঠে পড়ে লাগে।
তালতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী সাখাওয়াত হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভারতীয় ওই যুবকের বিরুদ্ধে এক কিশোরীকে কু-প্রস্তাব দেওয়া ও তাকে চাপ সৃষ্টি করে নিয়ে যাওয়ার লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। যদি এমন ঘটনা তিনি ঘটান তা অবশ্যই অপরাধ। আমরা অভিযোগটির তদন্ত করছি। অভিযোগের সত্যতা পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে সবঅভিযোগ অস্বীকার করে প্রেমকান্ত ঢাকা পোস্টকে বলেন, তালতলী থানায় যে অভিযোগের কথা বলা হচ্ছে, আসলে এমন কোনো আচরণ আমি করিনি। তার সঙ্গে হোটেলে, কলেজে এবং কাশিপুর চৌমাথায় দেখা হলেও খারাপ কোনো প্রস্তাব দেইনি।
এমএইচডি/জেডএস