যে বছর নুরুল কবিরকে হত্যা করা হয় সে বছর ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ত ছেলে হাফেজ হোছাইন মোহাম্মদ এরশাদ। বাবার হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় আনতে তখনই সে আইনে পড়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর কেটে যায় দীর্ঘ সময়। 

সেই শিশু এরশাদ বড় হয়ে এখন আইন পেশাতেই নিযুক্ত হয়েছেন। বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেন তিনি। ২০১১ সালে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতিতে শিক্ষানবিশ আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। ২০১২ সাল থেকে নিজের বাবার হত্যা মামলার দেখভাল শুরু করেন এরশাদ। শেষ পর্যন্ত আজ তিনি বিচার পেলেন। 

নুরুল কবিরকে হত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় তার ভাই ও তিন ভাতিজাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সোমবার চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ফেরদৌস ওয়াহিদের আদালত এ রায় দেন। দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন, নুরুল ইসলাম, তার তিন ছেলে আব্বাস উদ্দিন, সরোয়ার কামাল ও ওসমান গনি।  

জানা যায়, নুরুল কবির সৌদি আরব থাকা অবস্থায় তার বড় ভাইয়ের ছেলে ইসমাইলকে সৌদি আরব নিয়ে যান। পরে নুরুল কবির দেশে এসে তার বড় ভাই নুরুল ইসলামের কাছে ইসমাইলকে বিদেশ নেওয়া বাবদ এক লাখ ৭০ হাজার টাকা চান। এ নিয়ে ঝগড়ার এক পর্যায়ে ১৯৯৯ সালের ৬ ডিসেম্বর লোহাগাড়ার আধুনগর এলাকায় নুরুল কবির হত্যার শিকার হন।  

পরে নুরুল কবিরের স্ত্রী খালেদা ইয়াসমিন বাদী হয়ে ছয় আসামির বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেন। ২০০০ সালের ২১ ডিসেম্বর মামলার চার্জশিট দাখিল করা হয়। ২০০৩ সালের ১৩ আগস্ট আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জ গঠন করা হয়। এরপর রাষ্ট্রপক্ষের ১৭ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেন। 

আসামিদের সাক্ষ্য প্রমাণে আজ চার আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা বর্তমানে কারাগারে আছেন। মামলায় দুই নারী আসামিকে আদালত খালাস দিয়েছেন। 

রায়ের পর ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা হয় মামলার আইনজীবী এবং নুরুল কবিরের ছেলে অ্যাডভোকেট হাফেজ হোছাইন মোহাম্মদ এরশাদের। তিনি বলেন, ২০১১ সালে চট্টগ্রাম আদালতে আমি শিক্ষানবিশ আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হই। এরপর থেকেই বাবার হত্যা মামলার দেখাশুনা শুরু করি। দীর্ঘদিন পর ওই মামলার রায় হয়েছে। রায় আমাদের পক্ষে এসেছে। আজ আমি অনেক খুশি। 

তিনি বলেন, মামলার ছয় আসামির মধ্যে চারজনের যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে। দুজনের সাজা না হওয়ায় কিছুটা কষ্ট আছে। তবে আসামিদের সাজা কার্যকর হলে সবচেয়ে বেশি খুশি হব।

পাঁচভাই ও এক বোনের মধ্যে তৃতীয় হোছাইন মোহাম্মদ এরশাদ। বাবা চলে যাওয়ার পর মায়ের স্বপ্ন ছিল ছেলেকে আইনজীবী বানাবেন। এরশাদ নিজেও আইনজীবী হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। সে অনুযায়ী আইনে পড়াশোনা করেন। 

হোছাইন মোহাম্মদ এরশাদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাবার হত্যাকাণ্ডে জড়িত আসামিদের বিচারের আওতায় আনার জন্যই আইন পেশায় যুক্ত হয়েছি৷ আমি আইনি পেশায় যোগদানের আগে মামলার দেখাশোনা করতেন মা আর বড় ভাই। ২০০৩ সালে মামলার বিচার শুরুর পর আমার মা আর ভাইকে লোহাগাড়ার আধুনগর থেকে চট্টগ্রাম কোর্টে যেতে হতো। 

তিনি বলেন, মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আমরা সর্বোচ্চ সহযোগিতা পেয়েছি। আমি আইনজীবী হওয়ায় মামলার সাক্ষীদের যথাযথভাবে নিয়ে আসতে সহযোগিতা করেছি। মামলার যুক্তিতর্ক ভালোভাবে করেছি। মামলায় রাষ্ট্রপক্ষকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছি। এ ছাড়া বিভিন্ন সিনিয়র আইনজীবীর সহযোগিতা নিয়েছি। তারাও আমাকে সহযোগিতা করেছেন। এক কথায় যা যা করা দরকার, সবই করছি। আর তা সম্ভব হয়েছে আমি একজন আইনজীবী হওয়ায়।

কেএম/আরএইচ