ময়মনসিংহের ত্রিশালে সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তঃসত্ত্বা মায়ের মৃত্যুর আগে অলৌকিকভাবে জন্ম নেওয়া শিশুটিকে দেখাশোনার জন্য কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী তিন মাসের মধ্যে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে এ কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে।

নবজাতকের পরিবারকে আপাতত ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য গঠিত ট্রাস্টি বোর্ডকে এ টাকা দিতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে শিশু ও তার পরিবারকে কেন পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, সমাজকল্যাণ সচিব, সড়ক পরিবহন সচিব, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি, ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং ট্রাক মালিক মঞ্জুরুল ইসলামকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

আরও পড়ুন : ট্রাকচাপায় অন্তঃসত্ত্বা মায়ের মৃত্যু, জন্ম নিল নবজাতক

এ সংক্রান্ত রিটের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) বিচারপতি খিজির আহমেদ চৌধুরী ও বিচারপতি মো. জাকির হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। একইসঙ্গে শিশুর চিকিৎসা চালিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

ময়মনসিংহের ত্রিশালে সড়ক দুর্ঘটনায় মা-বাবা ও বোনের মৃত্যুর ঘটনায় অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া সদ্যভূমিষ্ঠ শিশুর ১৮ বছর পর্যন্ত যাবতীয় খরচ রাষ্ট্রকে বহনের নির্দেশনা গতকাল ১৮ জুলাই হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। আইনজীবী কানিজ ফাতেমা তুনাজ্জিনার পক্ষে ব্যারিস্টার সৈয়দ মাহসিব হোসাইন এ রিট দায়ের করেন। রিটে শিশুটির যাবতীয় খরচ বহন এবং তার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়ে একটি কমিটি গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয়।

আজ আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার সৈয়দ মাহসিব হোসাইন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল প্রতিকার চাকমা এবং সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আব্বাস উদ্দিন।

পরে আইনজীবী সৈয়দ মাহসিব হোসেন বলেন, ১৫ দিনের মধ্যে ওই নবজাতকের আইনগত অভিভাবকের কাছে ৫ লাখ টাকা দিতে সড়ক পরিবহন আইনে গঠিত ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সমাজকল্যাণ সচিব এই শিশুর দেখভালের জন্য একটি কমিটি গঠন করবেন। ওই কমিটি শিশুটির কল্যাণে কি পদক্ষেপ নিয়েছে তা তিন মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিয়ে উচ্চ আদালতকে জানাবেন।

আরও পড়ুন : সেই নবজাতককে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন প্রসূতি মায়েরা

আইনজীবী বলেন, ট্রাস্টি বোর্ড সম্পর্কে সড়ক পরিবহন আইনের ৫২ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো মোটরযান হইতে উদ্ভূত দুর্ঘটনার ফলে কোনো ব্যক্তি আঘাতপ্রাপ্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত হইলে বা আঘাতপ্রাপ্ত হইয়া মৃত্যুবরণ করিলে, উক্ত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা ক্ষেত্রমত তাহার উত্তরাধিকারীগণের পক্ষে মনোনীত ব্যক্তি ধারা ৫৩ এর অধীন গঠিত আর্থিক সহায়তা তহবিল হইতে ট্রাস্টি বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত ক্ষতিপূরণ বা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে চিকিৎসার খরচ প্রাপ্য হইবেন। এই আইন অনুযায়ী আদালত শিশুকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, শনিবার বিকেল পৌনে ৩টার দিকে ত্রিশালের কোর্টভবন এলাকায় রাস্তা পার হওয়ার সময় ট্রাকচাপায় প্রাণ হারান অন্তঃসত্ত্বা রত্না বেগম (৩২), তার স্বামী জাহাঙ্গীর আলম (৪০) এবং তাদের ছয় বছরের মেয়ে সানজিদা। এ সময় অলৌকিকভাবে মায়ের গর্ভ ফেটে ভূমিষ্ঠ হয় ফুটফুটে এক নবজাতক। ভূমিষ্ঠ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছুটে যায় পুলিশ ও আশপাশের লোকজন। পরে নবজাতকটিকে উদ্ধার করে নেওয়া হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখানে নেওয়ার পর জানা যায়, জীবিত আছে নবজাতকটি।

আরও পড়ুন : সবার নজর নবজাতকের দিকে, ভাই-বোনের খোঁজ নেয়নি কেউ

পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও উন্নত চিকিৎসার জন্য নবজাতকটিকে পরে ময়মনসিংহ সদরের সিবিএমসি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে এক্সরে রিপোর্টে জানা যায়, তার ডান হাতের দুটি হাড় ভেঙে গেছে। এরপর নগরীর লাবীব হাসপাতালে নেওয়া হয় নবজাতকটিকে। দুই দিন সেখানে থাকার পর জন্ডিসে আক্রান্ত হওয়ায় সোমবার রাতে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

লাবীব হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শাহজাহান বলেন, শিশুটি কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (সিবিএমসি) শিশু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. কামরুজ্জামানের তত্ত্বাবধানে ছিল। কিন্তু জন্ডিসের লক্ষণ দেখা দেওয়ায় চিকিৎসক ফটোথেরাপি দেওয়ার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। সোমবার রাতে শিশুটিকে সেখানে ভর্তি করা হয়।

আরও পড়ুন : সেই নবজাতক ও ভাই-বোনের সহায়তায় খোলা হলো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. ওয়ায়েজ উদ্দিন ফরাজী জানান, শিশুটির চিকিৎসায় পাঁচ সদস্যের বিশেষজ্ঞ মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। মেডিকেল বোর্ডের মতামত অনুযায়ী শিশুটি এখনো শঙ্কামুক্ত নয়। শিশুটি জন্ডিসে আক্রান্ত, হাড় ভাঙা ও রক্তস্বল্পতা রয়েছে। মেডিকেল বোর্ডের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী চিকিৎসা চলছে। 

ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, জন্ডিসের জন্য শিশুটিকে ফটোথেরাপি দেওয়া হচ্ছে। আমরা নিয়মিত তার খোঁজখবর রাখছি।

এমএইচডি/ওএফ