প্রকৃত আসামি শনাক্ত করতে দেশের সব কারাগারে ও সব থানায় ক্রমান্বয়ে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি চালু করার নির্দেশনা দিয়ে রায় প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট।

রায় প্রদানকারী বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ ৬ পৃষ্ঠার এ রায় প্রকাশ করেন।

রিটকারী আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন।

আরও পড়ুন>> প্রকৃত কয়েদি শনাক্তে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি কেন নয়: হাইকোর্ট

এর আগে গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর প্রকৃত আসামি শনাক্ত করতে দেশের সব কারাগারে ও সব থানায় ক্রমান্বয়ে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি চালু করার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কারা কর্তৃপক্ষকে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়।

এ বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় দেন। একইসঙ্গে নাশকতার মামলায় ভুল আসামি জহির উদ্দিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা অবৈধ ঘোষণা করেন আদালত।

আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।

আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির ওইদিন বলেছিলেন, আদালত পর্যবেক্ষণসহ রুল চূড়ান্ত ঘোষণা করেছেন। আবেদনকারী জহির উদ্দীনের বিরুদ্ধে জারি করা পরোয়ানা অবৈধ এবং আইন বহির্ভূত হিসেবে ঘোষণা করেছেন।

এছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে তিনটি নির্দেশনা দেন। সেগুলো হলো- ১. বিদ্যমান ব্যবস্থার সঙ্গে সব থানায় আসামির হাতের আঙ্গুল ও তালুর ছাপ, চোখের মণি, বায়োমেট্রিক পদ্ধতির প্রচলন করা।

২. গ্রেপ্তারের পর আসামির সম্পূর্ণ মুখের ছবি (Mugsgot photographs) ধারণ ও কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডারে (integrated) সংরক্ষণ করা। 

৩. দেশের সব কারাগারে আঙ্গুল ও হাতের তালুর ছাপ, চোখের মণির সংরক্ষণের মাধ্যমে বায়োমেট্রিক তথ্য সংরক্ষণ সিস্টেম চালু করা।

এর আগে নাশকতার অভিযোগে রাজধানীর খিলগাঁও থানায় দায়ের হওয়া একটি মামলায় প্রকৃত আসামি নোয়াখালীর বসুরহাটের মোহাম্মদ জহির উদ্দিন নয় মর্মে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দেয় পিবিআই। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মামলার প্রকৃত আসামি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের আহসান উল্লাহর ছেলে মোদাচ্ছের আনছারী ওরফে মোহাদ্দেস।

গত বছরের ১০ মার্চ হাইকোর্টের একই বেঞ্চ এক আদেশে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে জহির উদ্দিনের বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কার্যকারিতা স্থগিত করেন। একইসঙ্গে নোয়াখালীর জহির উদ্দিন ওই মামলার প্রকৃত আসামি কি না, তা তদন্ত করতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দেন। 

পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সারোয়ার আলম দাখিল করা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জহির উদ্দিনকে খিলগাঁও থানার মামলায় (নম্বর-১২(৪)১৩) গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আসামি হিসেবে চিহ্নিত করার মতো পর্যাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি। জহির উদ্দিন প্রকৃতপক্ষে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাধারী ব্যক্তি নয়। প্রকৃত আসামি মোদাচ্ছের আনছারী ওরফে মোহাদ্দেস।

অ্যাডভোকেট শিশির মনির জানান, রাজধানীর খিলগাঁও থানায় ২০১৩ সালের ৯ এপ্রিল দায়ের হওয়া মামলায় (নম্বর-১২(৪)১৩) পুলিশ নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের শাহজাদপুর গ্রামের আহসান উল্লাহর ছেলে মোদাচ্ছের আনছারীকে গ্রেপ্তার করে।

পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর মোদাচ্ছের তার নাম-ঠিকানা গোপন করে নিজেকে নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভার আজগর আলী মোল্লা বাড়ি মসজিদ রোড এলাকার মোহাম্মদ আব্দুল কাদেরের ছেলে মোহাম্মদ জহির উদ্দিন নামে পরিচয় দেন। এরপর ওই বছরের ৩১ অক্টোবর মোদাচ্ছের জামিন পেয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে পালিয়ে যান। তিনি জহির উদ্দিন নামেই আদালতে জামিনের আবেদন করেছিলেন।

এদিকে, পুলিশ তদন্ত শেষে জহির উদ্দিনসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয়। এরপর ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ২০১৭ সালের ১১ অক্টোবর জহিরের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এ অবস্থায় জহির উদ্দিন তার বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন করেন। 

এমএইচডি/জেডএস