হাইকোর্ট এবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আফজালকে উদ্দেশ করে বলেছেন, আপনার অফিসারদের শেখান কীভাবে গ্রাহকদের স্যার বলতে হয়। গ্রাহকরা যেকোনো প্রতিষ্ঠানের প্রাণ। একজন লুঙ্গি পরা গ্রাহককেও স্যার বলতে হবে।

রোববার (৫ জুন) বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।

শুনানির শুরুতে আদালতের আদেশের পরও সাতক্ষীরার ব্যবসায়ী সফিউর রহমানকে ঋণ সংক্রান্ত ব্যাংক স্টেটমেন্ট না দেওয়ার ঘটনায় হাইকোর্টে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবি ব্যাংকের দুই কর্মকর্তা। তারা হলেন- এবি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের এভিপি কে এম আমিনুল ইসলাম ও সাতক্ষীরা ব্র্যাঞ্চের ম্যানেজার মো. সহিদুজ্জামান।

এ সময় আদালতে এবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আফজাল নিজেও উপস্থিত ছিলেন।

তিনি আদালতে বলেন, আমাদের ব্যাংকের কর্মকর্তারা আদালতের আদেশ মানেননি এজন্য আমি দুঃখিত ও লজ্জিত। আমার বাবা এই আদালতের বিচারপতি ছিলেন (সাবেক প্রধান বিচারপতি এ টি এম আফজাল)। আজ আমার প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা হাইকোর্টের আদেশ না মানায় আমার পরিবারও বিব্রত। তাদের বিরুদ্ধে আমরা বিভাগীয় ব্যবস্থা নেব।

এ সময় আদালত কোনো গ্রাহক চাইলে তাকে ব্যাংক স্টেটমেন্ট দিতে হবে সব শাখায় এমন সার্কুলার জারি করতে বলেন এবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আফজালকে। পরে আদালত দুই কর্মকর্তাকে সতর্ক করে ক্ষমা করে দেন।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ওয়ায়েস আল হারুনী। এবি ব্যাংকের পক্ষে আরো উপস্থিত ছিলেন ব্যাংকের পরিচালক ব্যারিস্টার খায়রুল আলম চৌধুরী। আইনজীবী হিসেবে ছিলেন অ্যাডভোকেট সৈয়দ মেহেদি হাসান ও অ্যাডভোকেট আবু তালেব।

গত ৩১ মে এবি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের এভিপি আমিনুল ইসলাম ও সাতক্ষীরা ব্রাঞ্চের ম্যানেজারকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। গুলশান ও সাতক্ষীরা সদর থানা পুলিশকে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়।

তাদের আগামী ৫ জুন আদালতে হাজির করতে বলা হয়। এই আদেশের পর দুই কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার (২ জুন) স্বেচ্ছায় হাইকোর্টে আত্মসমর্পণ করতে এসেছিলেন।

৩১ মে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ওয়ায়েস আল হারুনী ঢাকা পোস্টকে বলেছিলেন, সাতক্ষীরার সফি এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. সফিউর রহমান এবি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছিলেন। ঋণের বিপরীতে তিনি একটি ব্যাংক স্টেটমেন্ট চান। কিন্তু এবি ব্যাংক থেকে তাকে ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেওয়া হয়নি। ব্যাংক স্টেটমেন্ট দিতে তারা অস্বীকার করে। পরে সফিউর রহমান হাইকোর্টে রিট করেন।

তিনি বলেন, রিটের শুনানির এক পর্যায়ে হাইকোর্ট আমাকে এবি ব্যাংকের হেড অফিসে ও সাতক্ষীরা শাখার ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। আমি হেড অফিসের এভিপি আমিনুল ইসলাম ও সাতক্ষীরা ব্রাঞ্চের ম্যানেজারকে আদালতের আদেশের কথা জানিয়ে দেই। তাদের ব্যবসায়ী সফিউর রহমানকে ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেওয়ার কথা বলি। এছাড়া এভিপি আমিনুল ইসলামকে কোর্টে হাজির থাকার কথা বলেছিলাম। রিটকারী ৩০ মে এবি ব্যাংকের সাতক্ষীরা শাখায় গিয়েছিলেন স্টেটমেন্ট আনতে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তা দেয়নি। আদালতের আদেশের পরও ব্যাংক স্টেটমেন্ট না দেওয়ায় তাদের গ্রেপ্তারের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

এমএইচডি/জেডএস