ওসি প্রদীপ দম্পতির দুর্নীতি মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ
অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি প্রদীপ কুমার দাশ এবং তার স্ত্রী চুমকির বিরুদ্ধে দায়ের করা দুর্নীতি মামলায় দুদকের পক্ষে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। আদালতে দুদকের পক্ষে সবশেষ সাক্ষ্য দিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. রিয়াজ উদ্দিন।
সোমবার (২৩ মে) চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক মুন্সী আব্দুল মজিদের আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে একই আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন প্রদীপের স্ত্রী চুমকি করন। পরে আদালত শুনানি শেষে তাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
দুদকের আইনজীবী মাহমুদুল হক ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ওসি প্রদীপ ও তার স্ত্রী চুমকির বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় সাক্ষ্যের জন্য দিন ধার্য ছিল আজ। এর আগে আমরা আদালতে ২৩ জন সাক্ষী উপস্থাপন করেছিলাম। আজকে দুদকের পক্ষ থেকে মামলার শেষ সাক্ষী ছিল মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদক চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিনের। তিনি আজ আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। আসামিরা কিভাবে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন, সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন, মানিলন্ডরিং করেছেন এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন তিনি তার সাক্ষ্যে তা বলেছেন।
আইনজীবী মাহমুদুল হক বলেন, আমাদের প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করা হয়েছে। আমাদের আর কোন সাক্ষী নেই। আসামিপক্ষ থেকে তদন্ত কর্মকর্তাকে জেরা করার জন্য সময় চেয়েছেন আদালতে। আদালত তাদেরকে সময় দিয়েছেন। জুনের ২৩ তারিখে তদন্ত কর্মকর্তাকে জেরা করার জন্য আদালত সুযোগ দিয়েছেন। এখন মামলার শেষ পর্যায়ে চলে এসেছি বলতে পারি।
তিনি বলেন, আসামিদের পক্ষ থেকে সমস্ত সাক্ষীদের রিকলের আবেদন করা হয়েছিল। আদালত সে আবেদন না মঞ্জুর করেছেন।
গত ১৫ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক মুন্সী আব্দুল মজিদের আদালত দুর্নীতি মামলার চার্জ গঠনের মাধ্যমে প্রদীপ এবং তার স্ত্রী চুমকির বিরুদ্ধে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছিলেন।
গত ২৬ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদক চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন। প্রদীপ গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকলেও আজকে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন তার স্ত্রী চুমকি। এরপর আদালত তাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন।
জানা গেছে, চুমকির ৪ কোটি ৮০ লাখ ৬৪ হাজার ৬৫১ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের বিপরীতে বৈধ ও গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া যায় ২ কোটি ৪৪ লাখ ৬৬ হাজার ২৩৪ টাকা। বাকি সম্পদ অর্থাৎ ২ কোটি ৩৫ লাখ ৯৮ হাজার ৪১৭ টাকার সম্পদ অবৈধভাবে অর্জনের প্রমাণ পেয়েছে দুদক।
চট্টগ্রামের পাথরঘাটায় ছয়তলা বাড়ি, ষোলশহরে বাড়ি, ৪৫ ভরি স্বর্ণ, একটি কার ও মাইক্রোবাস, কক্সবাজারের একটি ফ্ল্যাট ও ব্যাংক হিসাবের মালিক প্রদীপের স্ত্রী চুমকি। প্রদীপের ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থে স্ত্রী চুমকি এসব সম্পদ অর্জন করেন বলে দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তে উঠে এসেছে। এছাড়া চুমকি নিজেকে মাছ ব্যবসায়ী দাবি করলেও তার কোনো প্রমাণ পায়নি দুদক।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই টেকনাফের বাহারছড়ায় পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা। এ ঘটনায় একই বছরের ৬ আগস্ট থেকে কারাগারে রয়েছেন প্রদীপ। সিনহা হত্যা মামলায় প্রদীপকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
কেএম/আইএসএইচ